somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি : সময়ের কালিতে ইতিহাসের দলিলে (১ম র্পব)

১৫ ই এপ্রিল, ২০১১ বিকাল ৫:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে গেলে বৃটিশ উপনিবেশের কথা আসবেই। তবে, ”পলাশীর যুদ্ধ” থেকে ”সিপাহী বিদ্রোহ”; ”চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত” থেকে ”নীল চাষ”- এসব ঘটনাসমূহ নিয়ে যখন ইতিহাসের রাজপথ কিংবা অলি-গলিতে ছুটাছুটি করব, তখন একটি নাম আমাদের চোখে বারবার ধরা দিয়ে যাবে- ”ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি”। ঢালিউডের ’নবাব সিরাজউদ্দৌলা’; বলিউডের ’মঙ্গল পান্ডে’ অথবা হলিউডের ’পাইরেটস্ অব দ্য ক্যারিবিয়ান’- সবখানেই এই ”ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি” চরিত্রটি হাজির কখনও রাজ্য দখলে, কখনওবা বিদ্রোহ দমনে আবার কখনও ক্যাপ্টেন জ্যাক স্পেরোদের মতো জলদস্যু কতল করতে।


শুধু এই উপমহাদেশ কিংবা সেলুলয়েডের পাতা নয়; ইংরেজ বানিজ্য ও সাম্রাজ্য বিস্তারে ”ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি” এক কেন্দ্রিয় চরিত্র, অন্যতম চালিকাশক্তি। সপ্তাদশ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকে পরবর্তী প্রায় তিনশত বৎসর ”ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি” এক একটি ইতিহাস গড়ে গিয়েছে; তৈরী করেছে নায়ক-খলনায়ক (ক্লাইভ লয়েড, হেস্টিংস্, ওয়েসলি, কর্ণওয়ালিস্ প্রমুখ)।



কিভাবে শুরু:


মূলত সপ্তাদশ শতকে লন্ডন বিভিন্ন কারণ হেতু প্রাচ্যের সাথে সরাসরি বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপনে মরিয়া হয়ে উঠে। ষোড়শ শতাব্দী, মানচিত্রবিদ্যা যখন বিকাশের আরম্ভকাল ও উন্মেষের সন্ধিক্ষণে, তখন থেকেই প্রাচ্যের বাণিজ্য সম্ভবনা ও সম্পদের প্রাচুর্য ইউরোপীয়দের মনে এক নতুন উদ্যোমের জোয়ার তৈরী করে। সেসময় প্রাচ্যের বাণিজ্য সম্পর্ক ছিল মূলত চীন, পারস্য সাগর ও লোহিত সাগর সংলগ্ন ব্যবসা কেন্দ্রসমূহের সাথে। সম্ভবত সেই বাণিজ্য কেন্দ্রগুলো থেকেই পশ্চিমারা প্রাচ্যের প্রাচুর্য নিয়ে একটা ধারণা পেয়েছিলো। তবে ইংরেজরা গুরুত্ব দেওয়া শুরু করে আরও অনেক পরে। মজার ব্যাপার হলো শুরুতে প্রাথমিকভাবে ইংরেজদের কাছে প্রাচ্য অভিযানের যে কারণসমূহ যৌক্তিক বলে মনে হয়েছিলো তন্মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণ গুরুত্ব পায়নি! বরং যা আওতাধীন হতো:

১. ওলন্দাজ (ডাচ) ও পর্তুগিজ বাণিজ্য জাহাজের যোগাযোগ পথকে বিঘ্নিত করে আধিপত্য বিস্তার।
২. জলদস্যুতা দমন।
৩. মিশনারিকে ধর্ম প্রচারে সহায়তা।


কিন্তু, স্যার ফ্রান্সিস ড্রেক-এর পৃথিবী প্রদক্ষিণের পর (১৫৭৭-১৫৮০) থেকে প্রাচ্য সম্পর্কে ইংরেজদের চিন্তা-চেতনায় আমূল পরিবর্তন ঘটতে থাকে। আর এই চিন্তাকে বাস্তবে রূপ দিতে প্রভাবক হিসেবে ভূমিকা পালন করে ১৬০০ সালে রয়্যাল চার্টারের মাধ্যমে ”ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি” এর প্রতিষ্ঠা।

”ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি”র গঠন এবং প্রাচ্যে বাণিজ্য অভিযানে ইংরেজ অভিজাত শ্রেণীর বিরাট ভূমিকা ছিল। প্রার্চ্যে সুগন্ধি মসলা, দামি পাথর, সিরামিক, সিল্ক- এসব বিলাসী দ্রর্ব্যে সম্মোহনী অভিলাষ অভিজাত শ্রেণীকে উদ্বুদ্ধ করেছিলো অভিযানে পৃষ্ঠপোষকতা করতে।


ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝিতেও ইংরেজ ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা প্রাচ্য তথা এই উপমহাদেশে বাণিজ্য সফলতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান ছিলো। প্রাচ্য সম্পর্কে তাদের তথ্যেও ঘাটতি ছিলো। ফলে,তৎকালীন প্রাপ্ত তথ্যসমূহকে প্রাচ্য অভিযানে ব্যবহারে সন্দিহান ছিলো। এছাড়া, ব্যবসায়িক লোকসানের আশংকা অভিযান প্রস্তুতি থেকে তাদের বারবার পিছিয়ে আনছিলো।

ভারতীয় উপমহাদেশের ভৌগলিক পরিচিতি ও সভ্যতা সম্পর্কে ইংরজরা কতটুকু অজ্ঞ ছিলো তা ১৬০০ সালের ”ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি”র চার্টারে প্রতিফলিত হয়েছে। অবশ্য ইংরেজ ইতিহাসবিদগণ সেই অজ্ঞতাকে এই বলে ব্যাখ্যা করেছেন যে সুনির্দিষ্ট উদ্দশ্য নয় বরং স্রেফে আগ্রহই ছিলো প্রাচ্য এবং উপমহাদেশে অভিযানের মূল কারণ।

মূলত ১৫৮০-১৫৯০ সালের মধ্যেই প্রাচ্যে ও উপমহাদেশে অভিযানের জন্য ইংরেজদের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। তৎকালীন লেখক রিচার্ড হেকল্যুট এবং থমাস হিকওক এর মতো অনুবাদকের কর্মবিবরণ ও তৎপরতা সাক্ষ্য বহন করে যে সেই অভিযানের প্রস্তুতি ছিলো কতটা ব্যাপক ও সুপরিকল্পিত। কিন্তু উপমহাদেশের ভৌগলিক ও সভ্যতা সম্পর্কে অজ্ঞতা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। রিচার্ড হেকল্যুটের বদ্ধমূল বিশ্বাস ছিলো, ”জাতি হিসেবে ইংরেজর্দে ভবিষ্যৎ অস্তিত্ব ও আধিপত্য সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে প্রাচ্যে বাণিজ্য অভিযান ও উপনিবেশ স্থাপনের ওপর।” তিনি নিজে এব্যাপারে প্রাচ্য সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ ও সংকলনের জন্য এক বিরাট কর্মযজ্ঞ আরম্ভ করেছিলেন। অভিজ্ঞ নাবিকর্দে সাক্ষাৎর্কা, বিদেশী ভ্রমন বৃতান্তের অনুবাদ, প্রচলিত ইতিহাস কিংবা মিথ- কোন কিছুই হেকল্যুটের কর্ম থেকে বাদ যায়নি। তাঁর এই প্রচেষ্টা পরবর্তীতে তাঁকে ”ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি”এর উপদেষ্টা পদ পেতে সহায়তা করেছিল।


এত কিছুর পরও ”ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি”র অভিযান বহরের সাফল্য নিয়ে খুব কম লোকই নিশ্চিত ছিলেন। ”ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি”র ফ্লিট (বহর) কেপ অব গুড হোপ দিয়ে যখন ভারত মহাসাগরে প্রবেশ করবে, তৎপরবর্তী অভিযান পদক্ষেপ নিয়ে ”ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি”র সবাই অন্ধকারে ছিল। এর প্রমাণ, ”ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি” কে অনুমোদন দেয়া ১৬০০ সালের রয়্যাল চার্টার। চার্টারে প্রাচ্যে যে কোন সুনির্দিষ্ট গন্তব্য কিংবা বন্দর্রে কথা ছিল না। ফলশ্রুতিতে, ”ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি” শুরুতে এই সিদ্ধান্তে পৌছায় যে, জাভা, সুমাএার বাজার তার্দে বানিজ্যিক লাভের ক্ষেএ হতে পারে; আর ভারতীয় উপমহাদেশকে তারা তখন কেবল মাত্র গমন পথের রুট হিসেবে বিবেচনায় নিয়েছিল। (চলবে...)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১১ রাত ২:১৭
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজামী, মুজাহিদ, বেগম জিয়াও বিজয় দিবস পালন করেছিলো!!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০



মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম জিয়ার মুরগী মগজে এই যুদ্ধ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না; বেগম জিয়া বিশ্বাস করতো না যে, বাংগালীরা পাকীদের মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার থেকে

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×