somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একাওরের গণহত্যা এবং একজন শর্মিলা বসু

১৬ ই এপ্রিল, ২০১১ রাত ১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও গণহত্যা নিয়ে পত্র-পত্রিকায়, ব্লগে অনেক লেখা ও আলোচনা হয়েছে এবং আশা করি আরো লেখা হবে যা গণহত্যার সাথে প্রকৃত জড়িতদের খুঁজে বের করতে সহায়তা করবে; ত্বরান্বিত করবে একাওরের জঘণ্য গণহত্যার বিচারের পথ। আমি একজন আইনের ছাত্র। যুদ্ধাপরাধী, গণহত্যা, মানবসত্বার বিরুদ্ধে অপরাধ- এসব কিছু আমার পড়াশোনার মধ্যেই পড়ে। সঙ্গত কারণেই, পত্রিকায় এবং ব্লগে প্রকাশিত ত্রতদ্ সম্পর্কিত কলামগুলো আমি যথাযথ মনোযোগ দিয়ে পড়ার চেষ্টা করি।


গত ২৫ শে মার্চ শ্রদ্ধেয় কলাম লেখক হাসান ফেরদৌস- এর ”আর্চার ব্লাড: একটি শ্রদ্ধাঞ্জলি” পড়তে গিয়ে প্রথম লাইনেই থমকে যাই। শর্মিলা বসু নামে একজন গবেষক (!?) দাবী করেছেন বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে কোন গণহত্যা হয়নি! যে বইটিতে শর্মিলাবসু এই মিথ্যাচার করেছেন সেটির নাম ”ডেড রেকনিং: মেমরিজ অব দ্য ১৯৭১ বাংলাদেশ ওয়ার” ।

১৯৪৮ সালের ১১ই ডিসেম্বর জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত হয় ’জেনোসাইড কনভেনশন’ শীর্ষক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। ১৯৪৮ সালের ’সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা’ ছিল ইচ্ছার অভিব্যক্তি; পক্ষান্তরে, ’জেনোসাইড কনভেনশন’ ছিল করণীয়ের রূপরেখা, অর্থ্যাৎ গণহত্যার অপরাধের মোকাবেলায় রাষ্ট্র এবং জাতিসংঘের কর্তব্য নির্ধারণের প্রয়াস নেয়া হয়েছে।


১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশনের পর থেকে ১৯৯৩ সালে পূর্বতন যুগোশ্লাভিয়ার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে গঠিত ’হেগ ট্রাইবুন্যাল’- এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে গণহত্যার মতো জঘণ্য মহাপাপ মোকাবেলায় যে দু’টি আলোকপ্রদীপ আমরা দেখতে পাই এর একটি, ষাটের দশকে ভিয়েতনামে সংঘটিত গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রখ্যাত দার্শনিক বারট্রান্ড রাসেল কর্তৃক গঠিত ”ভিয়েতনামে যুদ্ধাপরাধ বিচারের গণ-আদালত”, যেখানে জাঁ পল সার্এে -সহ সারা বিশ্বের খ্যাতনামা শিল্পী-লেখকম-লী যোগ দিয়েছিলেন এবং অপরটি হলো ১৯৭৩ সালের ১৯ ই জুলাই বাংলাদেশে গৃহীত ”ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইবুন্যাল) অ্যাক্ট” (১৯৭৩ সালের ১৯ নং আইন)। জেনোসাইড কনভেনশনের (১৯৪৮) অনুচ্ছেদ এক(১) থেকে ছয়(৬) বিবেচনায়, গণহত্যার বিচার বর্তায় জাতীয় সরকার এবং সেই সাথে জাতিসংঘের ওপর। এই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৩ সালের ১৯ নং আইনটি এক উজ্জ্বল নক্ষএ, যা পরবর্তীতে ’জেনোসাইড কনভেনশন’ (১৯৪৮) এবং ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট (১৯৯৮) এর মধ্যকার সেতুবন্ধন হিসেবে ভূমিকা রেখেছে।

গবেষক (!) শর্মিলা বসুর প্রতি জিজ্ঞাসা রইল, তার বিস্তর ঘাঁটাঘাটি ও তথ্য উদ্ধার অভিযানে আন্তর্জাতিক তাৎপর্যপূর্ণ আইনটি (১৯৭৩ সালের ১৯ নং আইন) কি একবারও নজরে পড়েনি? আর যদি নজরে পড়েই থাকে তাহলে আইনটির মূল উদ্দেশ্য (মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ, হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুণ্ঠণ, অগ্নিসংযোগ এবং পরিকল্পিত গণহত্যা সমূহের বিচার) যে অপরাধসমূহেরর বিচার করা, সেই অপরাধসমূহ কি এতটাই নির্মমশূণ্য ছিল যে গণহত্যার আওতায় তা আনা যাবে না?


পিনোশে মামলায় (১৯৯৯) লর্ড ব্রাউন-উইলকিনসন মন্তব্য করেছিলেন, ”১৯৪৫ এর পর থেকে ব্যাপক আকারের যে কোন ধরনের নির্যাতনই হবে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ।”


১৯৭১ সালে বাংলাদেশে গণহত্যা হয়েছিল কিনা, তা নিশ্চিত করতে বড় বড় লাইব্রেরিতে বসে পড়াশোনা কিংবা বিস্তর কাগজপত্র ঘাঁটার দরকার নেই। বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চল একাওরের ভয়াবহ অপকর্মসমূহের সাক্ষ্য বুকে ধারণ করে নিভৃতে কেঁদে যাচ্ছে। সেই সব প্রবল সšএস্ত দিন পার করে আসা বাঙালিদের সাথে আলাপচারিতায় স্পষ্ট হয়ে উঠবে ১৯৭১ এ নিত্যনৈমিওিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ানো মানবসত্বার বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধসমূহ।


একাওরের গণহত্যাকে যারা স্বীকার করে না; যারা সমগ্র স্বাধীনতা যুদ্ধকে একটা ”অভ্যন্তরীণ গন্ডগোল” হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়. তাদের দাবীর বিরুদ্ধে সরব না হওয়াটা হবে মানবসওার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘঠনের একটি পথ সুগম করার সমতুল্য; এবং একই সাথে তা ৩০ লাখ শহীদ বাঙালির আত্মার অপমানের শামিল।





৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজামী, মুজাহিদ, বেগম জিয়াও বিজয় দিবস পালন করেছিলো!!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০



মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম জিয়ার মুরগী মগজে এই যুদ্ধ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না; বেগম জিয়া বিশ্বাস করতো না যে, বাংগালীরা পাকীদের মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার থেকে

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×