ভয়ানক মেইলটা আসল দুপুর বেলায়। বিষয় নতুন কিছুনা, সুমনের এক নিরীহ জুনিয়রকে নিয়ে। আসলে ভয়ংকর জিনিসটা ঐ নিরীহ জুনিয়র, এর একবার মন খারাপ হয়ে গেলে সাহিত্যিক বাক্যবাণ দিয়ে জুনিয়রকে ঠিক করতে হয়; আর তখনই সিনিয়র হিসেবে সুমনের ডাক পড়ে।
জুনিয়রটা কেমন নিরীহ টাইপ এর একটা ব্যাখ্যা দেয়া দরকার। প্রচন্ড পড়ুয়া, ভয়ানক পরিশ্রমী আর তার আনপ্রেডিক্টএবল ধৈর্য; সমস্যাটা কিন্তু এই ’আনপ্রেডিক্টএবল ধৈর্য’ নিয়ে। ও কোন বাচ্চা-কাচ্চা টাইপ শব্দের সম্বোধন পছন্দ করে না। এ ধরনের কোন কিছু ওর কানে প্রবেশ মাত্রই ওর সহনশীলতার প্রাচীর ডেমরার বাঁধের মতো ভেঙে যায়। তখন প্রিয়জন আর শত্রু সবাইকে একই কাতারের মনে হয় ওর কাছে। গত ১লা ফাল্গুনে আজিজ মার্কেটে ওর গার্ল ফ্রেন্ড যখন ওকে বলল, ’’ চল বেবি, ’খুশবু’ থেকে লানচ করে আসি’’ , জুনিয়রকে দেখে মনে হচ্ছিল আরেকটা কুরস্কের ট্যাংক ব্যটল আসন্ন। সমস্যা লানচ কিংবা ’খুশবু’ রেস্টুরেন্ট নিয়ে নয়; ’বেবি’ কথাটা নিয়ে। কেন ওকে বেবি বলবে! ওতো গ্র্যজুয়েট, অ্যাডাল্ট! দিনে ১২ ঘন্টা পড়ালেখা করে গ্র্যজুয়েট হইছে ভালো (আমার মনে হয় মাচো টাইপ) শব্দ শোনার জন্য।
সেই জুনিয়রের মন আজ বড়ই খারাপ। সব মানুষ ওর মতো হয় না কেন এটা নিয়ে ওর দুঃখ।ওর কষ্ট আরও বেড়ে যায় যখন ওর ’মন দিয়ে করা’ কোন কাজকে নিয়ে সতীর্থরা তামাশা করে।
সুমন কি লিখে এই জুনিয়রকে কঠিণ দুনিয়ার রূপ বুঝাবে ভেবে পায়না। চেষ্টা করলো এমন ভাবে লিখতে যেন ছেলেটা কষ্ট না পায়। এই কেষ্টর দুনিয়াতে জীববৈচিত্র থাকবে এটাই স্বাভাবিক। দুনিয়াটা একটা চিড়িয়াখানা আর সব রকম জীব নিয়েই একটা চিড়িয়াখানা হয়। তোমাকে হরণ ও হনন করেই কেউ হয়তো বেঁচে থাকবে। তোমার সরলতা, ভাল চিন্তা ওদের একমাত্র খাদ্য। দু’পেয়ে ধেড়ে ইদুরের মতো এরা কাউকে কাটাকাটি করতে না পারলে বাঁচতে পারে না। কিছুদিন আগে প্রখ্যাত এক আইনবিদ এক সাক্ষাৎকারে বলছিলেন, ’’ ভালো মানুষের গায়ে ঢিল দিলে তাঁর কিচ্ছু হয়না, ভালো মানুষ ভালো থেকেই যায়।’’ পৃথিবী ঈর্ষাকারীকে ভুলে যায় সহজে কিন্তু কীর্তিমানকে ভুলে না। কীর্তি মোছার ভাল উপায় কীর্তি দিয়েই তাকে মোছা। যারা তা পারার যোগ্যতা রাখে না তারাই দু’পেয়ে ধেড়ে ইদুরের ভূমিকা নেয়।
সুমন বুঝতে পারে না, কথাগুলো জুনিয়রের আদৌ কাজে আসবে কিনা ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




