=================
সুমনাকে আমি খুব পছন্দ করতাম, কয়েকবার আকারে ইঙ্গিতে বলেছিও। কিন্তু ঐ মেয়ে মহা ধুরন্দর। সাবানের মত পিছলে গেছে।
অবশ্য সুমনা দেখতেও সাবানের মতই। উজ্জ্বল ফর্সা গায়ের রঙ, সবসময় কি একটা লোশন মেখে ইউনিভার্সিটিতে আসে দেখে ওর আশপাশ দিয়ে হাটলে খুব চমৎকার একটা গন্ধ পাওয়া যায়। সমস্যার মধ্যে একটা হলো ও ইদানিং ফুলে গোল হয়ে যাচ্ছে সাবানের মত। একদিন ওকে কথায় কথায় এটা বলতেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো-
"কত্ত বড় সাহস তোর, তুই আমাকে সাবানের মত গোল বলিস ! তুই নিজে কি ! তুই নিজেও তো দেখতে সাবানের মত। ঐ যে গুয়ের সাবানগুলো আছে না, যেগুলা ব্যবহার করতে করতে লম্বা হয়ে যায়- ঐরকম......"
যাই হোক- ভিন্ন প্রসঙ্গে চলে যাচ্ছি। আমি যতবার সুমনাকে আমার মনের কথাটুকু বলতে চেয়েছি- এই মেয়ে না বোঝার ভান করে পিছলে গেছে। তাই একবার ভাবলাম- ওকে যাদু করবো। কার্জন হলের পাশের খাম্বাটায় এক বিরাট তান্ত্রিক সাধুর নাম দেখেছিলাম। উনি "ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ কামাখ্যা" থেকে তন্ত্রের ওপর পিএইচডি করে এসেছেন। রবিবার ক্লাস ফাকি দিয়ে গিয়ে উনার সাথে পরিচিত হলাম......
"ও, এটা কোন ব্যাপারই না"- উনি সব শুনেটুনে বললেন- "আমি একটা মন্ত্রপড়া রসুন দিয়ে দিচ্ছি। এটা নিয়ে ঐ মেয়েকে খাওয়াস।"
পরেরদিন আমি সুমনাকে চটপটি খাওয়ানোর ভান করে রসুনটুকু খাইয়ে দিলাম। সুমনা শুধু একবার ফুচকাওয়ালা মামাকে বলেছিলো- "মামা, চটপটিতে কেমন একটা রসুন রসুন গন্ধ যেনো। এই তুই পাচ্ছিস?"
"কেম্নে পাবো, আমি আমার নাক আজকে বাসায় রাইখা আসছি হা হা হা......" আমি একটা বিকট রসিকতা করে ওর প্রশ্নটুকু এড়িয়ে যেতে চাইলাম।
ফুচকাওয়ালা মামাকে আমি আগেই পান খাওয়ার জন্য একশ টাকা দিয়ে বলেছিলাম সুমনার চটপটিতে যেনো রসুন মিশিয়ে রাখে। আমার রসিকতায় দেখলাম ফুচকাওয়ালা মামাও হাসছে। এই "সহমত হাসির" জন্য উনি আরো পঞ্চাশ টাকা দাবী করেছিলেন পরে......
যাই হোক- এর পরের দুই দিন সুমনা ইউনিভার্সিটিতে এলো না। আমি বুক ধুকপুক নিয়ে ওর আগমনের অপেক্ষা করছিলাম। আহ, শেষ পর্যন্ত সত্যি সত্যি সুমনা তাহলে আমার হতে চলেছে ! এই দুই দিন না জানি- শয়নে স্বপনে, ঘুমে জাগরণে মেয়েটা আমার কথা কতবার ভেবেছে ! আমার আর তর সইছিলো না।
তৃতীয় দিনের দিন সুমনা এসে আমাকে জানালো- ঐদিন চটপটি খেয়ে বাসায় যাওয়ার পর থেকে ওর নাকি প্রচন্ড ডায়রিয়া শুরু হয়। এ জন্যেই ভার্সিটি আসতে পারে নি এই দুই দিন। আমার প্রতি ভালোবাসা জাগা তো দূরের কথা- আমার সাথে দেখা হওয়ার পর যাচ্ছেতাই বলে গালাগালি করলো। বললো- আর জীবনেও নাকি ঐ মামার কাছ থেকে চটপটি খাবে না ইত্যাদি......
আমি মনমরা ভাব নিয়ে তান্ত্রিক বাবার কাছে সবকিছু খুলে বললাম। উনি গম্ভীরভাবে সব শুনেটুনে জানালেন-
"মন খারাপ করিস না, এবার এমন জাদু করবো- ঐ মেয়ের বাপ মা সহ তোর পেছন পেছন ঘুরবে......তুই শুধু আমাকে ঐ মেয়ে আর ওর বাপ-মার কয়েকটা চুল জোগাড় করে দিবি......"
আন্টি আর সুমনার চুল জোগাড় করাটা কোন বিষয় না, ওদের বাসাতে আমি প্রায়ই যেতাম। কোন না কোন একটা ব্যবস্থা হয়েই যাবে। সমস্যা বাধবে আংকেলকে নিয়ে। উনার মাথায় বিরাট এক টাক। মরুভূমিতে আমি ঘাস পাবো কই- এই চিন্তায় চিন্তায় আমি শুকিয়ে যেতে লাগলাম।
চুলপড়া প্যাকেজেরদাম ছিলো একশ টাকা। আমি আরো পঞ্চাশ টাকা দিয়ে তান্ত্রিক বাবার সাথে একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং এ এলাম। উনাকে বললাম- "আংকেলের শরীর পিওর কাশ্মিরী উলের কম্বল দিয়ে বানানো। প্রচুর লোম লোকটার গায়ে। মাথার চুলের বদলে আমি আপনাকে উনার বুকের লোম জোগাড় করে দিচ্ছি।"
এরপরদিন সুমনাকে বললাম- "তোর আব্বার টাওয়েল থেকে উনার একটা দু'টো লোম জোগাড় করে দিতে পারবি?"
আমার কথা শুনে সুমনা খুবই বিরক্ত হলো। আমি অন্যদিকে তাকিয়ে বললাম- "আমার hobby মানুষের লোম জমানো।"
"এগুলো কি ধরণের বিশ্রী হবি সাখাওয়াত !"
অবশ্য আমার 'হবি'(!) নিয়ে নাক কুচকালেও সুমনা ওর আব্বার কয়েকটা লোম এনে দিলো। তান্ত্রিক বাবা কি করলো জানি না- কিন্তু এর পরদিনই শুনলাম আমাদের ক্লাসের ফাস্ট বয় আবির নাকি সুমনাকে প্রপোজ করেছে। সুমনাও নাকি রাজি হয়ে গেছে । কি একটা বাজে অবস্থা !
আমার মনে হলো- টাওয়েলে তো মানুষের সারা শরীরের লোম ছুটে একটা দু'টো লেগে থাকে। সুমনা নিশ্চই ওর বাবার বুকের লোমের বদলে পাছার লোম এনে দিয়েছিলো। তা না হলে এমন হবে কেন! তান্ত্রিক বাবাও একমত হলেন আমার সাথে, বিড়বিড় করে বললেন- "তোর মাথা পরিষ্কার। তুই আমার সুপারভিশনে পিএইচডি করবি?"
সেই থেকে মাসে দুইশ টাকা স্কলারশিপে তান্ত্রিক বাবার সাথেই আছি। উনার কাছ থেকে বাণ মারা শিখছি। আমার পরবর্তী টার্গেট সুমনাকে বাণ মেরে বশে আনা। দেখা যাক কি হয় !