প্রধান উপদেষ্টা ডঃমুহম্মদ ইউনুস জুলাই আন্দোলনে নিহত আহত বীরদের স্মরণ করলেন। কিন্তু ভুলে গেলেন স্বাধীনতা যুদ্ধের ৩০ লক্ষ শহীদদের আত্মত্যাগের কথা। যারা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে আমাদের একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছিলেন তাদের কথা মনে পড়ল না। কিন্তু কেন?
কাদেরকে খুশি করার জন্য বা কোনও ইঙ্গিত দেবার জন্য তিনি এ কাজটি করলেন?
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ কর্ম দেখে অনেক সময় দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে যাচ্ছি— তারা আসলে কোন পথে এগোতে চাইছেন। তাদের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থাই-বা কি?
সাধারণ জনগণ ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু দিবসে বত্রিশ নম্বরে শ্রদ্ধা জানাতে না পারলেও পাকিস্তানের জাতির পিতা মোহাম্মদ আলীর মৃত্যু দিবস পালন করেতে কোনও বাধা আসেনি!
দেশে যে যার মতো লুটতরাজ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করছে কিন্তু প্রশাসনের কোন পদক্ষেপ আমাদের চোখে পড়ছে না। হঠাৎ করেই সুর উঠল পোশাক কারখায় নারী পুরুষের মধ্যে সমতা আনতে হবে। শুরু থেকেই বস্ত্র কারখানা গুলিতে নারীদের আধিক্য ছিল। হঠাৎ করে নারী পুরুষের সমতা আনার এই দাবিটির অর্থ কিসের ইঙ্গিত করে? ব্যাপারটা যতটা সাধারণ মনে হয়, কয়েক দিনের ঘটনা পরিক্রমায় সেগুলোকে আর সাধারণভাবে দেখার কতটুকু সুযোগ আছে ভেবে দেখতে হবে।
নারীদেরকে কর্মসংস্থান থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার একটা সূক্ষ্ম চাল হতে পারে এটি। আন্দোলনের কারণে একের পর এক আসুলিয়ায় গার্মেন্টস কারখানাগুলি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে; কিন্তু এতে সরকারের কোনও সমাধান করতে পারছে(?) না।
দেশে ইসলামী শাসন বা শরিয়া আইন কায়েম করতে গেলে সর্বপ্রথম বাধা হল এই নারীরা। নারীদের ঘরে আবদ্ধ করে রাখতে পারলে খুব সহজেই শরিয়া ভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ে তোলা সম্ভব। এ কারণেই কি গার্মেন্টস কারখানা গুলোতে অস্থিরতার ব্যাপারে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না!
বাতাসে ভেসে বেড়ায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিভিন্ন স্থানে জামাত শিবির ঘেসা ব্যক্তিদের পদায়ন করছে। অন্তবর্তীকালীন সরকার কি চাচ্ছে আগামীতে দেশে একটি মৌলবাদী সরকার আসুক।
একের পর এক মাজার গুঁড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। জামাতিরা আছে মহা জোসে! কিন্তু এতে কোন বাধা দেয়ার ইচ্ছা সরকারের আছে বলে মনে হয় না। চুপ থেকে হয়ত তাদের মৌন সমর্থন দেয়া হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধুর প্যানপ্যানানি, অর্থ পাচার, ব্যাংক লুটপাট, শেয়ার কেলেঙ্কারি, চাঁদাবাজি, ঘুষ-দূর্ণীতি, স্বজনপ্রীতি, ছাত্রলীগের দৌরাত্ব্য বিভিন্ন কারণে আওয়ামীলীগের উপরে মানুষ অতিষ্ঠ ছিল। ৫ই অগাস্টের পর আওয়ামী লীগের নেতা সমর্থকেরা সব গা ঢাকা দিয়েছে। এখন বিএনপি'র নেতাকর্মীর আওয়ামী লীগের ফেলে রাখা শূন্যস্থান পূরণ শুরু করেছে। এমনকি দখল বাণিজ্য নিয়ে তাদের নিজেদের মধ্যেও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। মজার ব্যাপার হলো সরকার এগুলো দেখেও দেখছে না। সেনাবাহিনীর সামনে লাঠি দিয়ে লোকজনকে পেটাচ্ছে অথচ তারা বসে বসে তামাশা দেখছে!
লক্ষ্য করলে দেখা যায় জামাত-শিবিরের লোকজন কোন দখল বাণিজ্যে নেই। এ ব্যাপারে তাদের একটা ক্লিন ইমেজ গড়ে উঠেছে। অন্যদিকে তারা মাজার ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিচ্ছে। তারা এটার মধ্যেই বর্তমানে সীমাবদ্ধ আছে। যেহেতু মাজার নিয়ে অনেকেরই আপত্তি আছে। এতে দেখা যাচ্ছে তাদের এসব কাজে কিছু মানুষের সমর্থন আছে। এইখানটায় বিএনপির চেয়ে জামাতিরা রাজনৈতিক কৌশলে অনেক বেশি পরিপক্কতার পরিচয় দিয়েছে।
সাম্প্রতিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মনে হচ্ছে বর্তমান সরকার এবং জামাত ই ঈসলামের মধ্যে একটি বোঝা করা আছে।
আওয়ামীলীগ মাঠে নেই বিএনপি দখল বাণিজ্যে ব্যস্ত। প্রশাসন যেন হাত-পা গুটিয়ে বিএনপিকে পচানোর জন্য সুযোগ দিচ্ছে। মনে হয় যেন তারা জনগণের কাছে উপস্থাপন করতে চাচ্ছে—দেখো এক স্বৈরাচারীকে তাড়ানো হয়েছে বিএনপি তার চেয়ে আরো কত বড় স্বৈরাচারী!
বিএনপির ওপর এই কয়েকদিনেই মানুষ ব্যক্ত-বিরক্ত হয়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে দেখা যাচ্ছে জামাতের জনপ্রিয়তা অনেক বেড়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কি বাংলাদেশে একটি মৌলবাদী সরকারকে প্রতিষ্ঠিত করতে ছক সাজিয়েছে?
বিগত এক মাসের সরকার, প্রশাসনের কর্মকান্ড দেখে আমাদের সন্দেহ দিন দিন দৃঢ় হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হয়ত চাচ্ছে বাংলাদেশে একটি মৌলবাদী সরকার প্রতিষ্ঠিত হোক।
মৌলবাদী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়ে দেশের ভেতরে নিশ্চিত গোলযোগ সৃষ্টি হবে। মৌলবাদীদের দমন করার জন্য আমেরিকান সৈন্যরা আমাদের দেশে এসে ঢুকবে। তারপর ঘাঁটি গেড়ে বসবে! যেটা আমেরিকার বহুদিনের পরিকল্পনা।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৪৯