somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিরল ও দূরারোগ্য রোগ এন এফ এবং একজন রেগি বিবস এর আত্নবিশ্বাসের গল্প

২২ শে নভেম্বর, ২০১২ সকাল ১০:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ডিসকভারী চ্যানেলে এন এফ রোগের ওপর একটা প্রতিবেদন দেখে খুব মন খারাপ হয়েছিল, যদিও আমাদের দেশেও এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা নেহায়েত কম না। তবুও এই রোগ সম্পর্কে খুঁটিনাটি আগে জানতাম না। এটা একটা দূরারোগ্য ব্যধি যা বেশীরভাগ ক্ষেত্রে বংশগতভাবে জন্মসূত্রে কোন বাচ্চা পেয়ে থাকে এবং তা তাকে বয়ে বেরাতে হয় মৃত্যর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত। উফফফ কি মর্মান্তিক!!! যদিও সার্জারীর মাধ্যমে কিছুটা কমানো সম্ভব কিন্তু পুরোপুরি নিরাময়ের মত কোন ওষুধ এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। প্রকৃতির কাছে বিজ্ঞান যে অনেক ক্ষেত্রে অসহায় এটাই তার প্রমান। এন এফ - যার পূর্নাঙ্গ রূপ হল: নিউরোফাইব্রোমেটোসিস। সহয ভাবে বলতে গেলে এটা এক ধরনের টিউমার যা বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে শরিরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রতঙ্গে প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকে।


কিন্তু আমার আজকের লেখা শুধুমাত্র একজন এন এফ আক্রান্ত রোগীর জন্য যে এই রোগ বহন করছে জন্ম থেকে। সে জয় করেছে সব ভয়, সংকোচ, দ্বিধা-দ্বন্দ সেই সাথে অর্জন করেছে অসীম সাহস মনোবল এবং খ্যাতি। বিশ্বব্যপী এন এফ সংগঠন গড়ে তুলে রিতীমত জাগরন সৃষ্টি করেছে। সে দেখিয়েছে মনোবল থাকলে সব সম্ভব। সে তার নিজস্ব ওয়েব সাইটের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা এন এফ আক্্রান্তদের সাথে যোগাযোগ সৃষ্টি করেছে, কারো কারো সাথে সশরীরে দেখা করেছে, তাদের বুঝিয়ে দিয়েছে তোমরা একা নও!!!!



তার নাম রেগি বিবস। তার আতœজীবনীর অনুবাদটি পড়ে হয়ত অনেেেকই অনুপ্রনীত হবেন।
( লেখা সংক্ষিপ্তকরনের জন্য তার মূল লেখার কিছু লাইন অনুবাদের সময় বাদ দিয়েছি)



আমি রেগি বিবস। আমি এন এফ নিয়ে জন্মেছি। আমার জন্মকালে ডাক্তার আমার চোখে,পায়ের গোড়ালীতে, এবং মুখের তালুতে কিছু ছোট টিউমার লক্ষ্য করলেন । মা ভাবলেন এ এমন কিছুই নয়। কিন্তু সে যখন আমাকে জুতো পড়াতে চাইতেন আমি ব্যাথায় কুকড়ে যেতাম, কাঁদতাম। যখন আমার বয়স আট আমার খালা মাকে পরামর্শ দিলেন আমাকে সাইনারস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ডাক্তার বল্লেন, এটা এন এফ, অনিরাময়যোগ্য বিরল রোগ এবং আসলে আমাদের তেমন কিছু করার নেই।



মা জানতে চাইলেন, এর জন্য কি আমি দায়ী? ডাক্তার তাকে আস্বস্ত করলেন যে সে সরাসরি দায়ী না, সে এই রোগের বাহক মাত্র!! তার ও এরকম দুটো টিউমার আছে যা চোখে না পড়ার মত!! আমি আমার ছয় ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট কিন্তু তারা কেউই জন্মগতভাবে এই সমস্যা নিয়ে জন্মায়নি।



প্রথম প্রথম আমি খুবই বিব্রত বোধ করতাম যখন বালিতে একে থাকা আমার পায়ের ছাপগুলো আমার খেলার সাথীদের থেকে আলাদা দেখাত। আকার ও আকৃতিতে সবার পায়ের ছাপ ছিল একরকম আর আমারগুলো ছিল অন্যরকম!!! অনেকেই আমাকে দেখে তাদের দরজা লক করে দিত যেন আমি ভেতরে ঢুকতে না পারি। একবার আমার মা আমাকে নিয়ে একটা সপিং মলে ঢুকতে গেলে সেই গেইট টি লক করে দেয়া হয়।



আমি যখন কিশোর তখনই আমার বাবা মায়ের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। বাবা সুগার ল্যান্ডে থাকে তবে সে এখনও ছুটি কিনবা জন্মদিন উদযাপনের জন্য আমাদের সাথে দেখা করে। তবে আমি মনে করিনা যে আমার বাবা মায়ের ছাড়াছাড়ির জন্য আমার রোগটা দায়ী তবে আমার এখন মনে হয় আমার বাবা আমার সাথে অন্যান্য বাচ্চাদের চেয়ে ভিন্ন আচরন করত। সে আমাকে প্রায়ই খেলা বাদ দিয়ে বাড়িতে ফিরে যেতে বলত। আমি ঠিক জানিনা সে আমার জন্য কোথাও বিব্রত হয়েছে কিনা কিনবা আমার মনে হয়না আমি খুব বেশী দুষ্ট ছিলাম।



যখন ছোট ছিলাম তখন হাসপাতালে যেতে খুব ভাল লাগত কারন সেখানে সবাই খুব আন্তরিক এবং সহযোগী ছিল। সাইনার হাসপাতাল ছিল আমার জন্য এক স্বপ্নময় স্থান। কৈশর পেরুতে না পেরুতে আমার বৃদ্ধির সাথে সাথে টিউমার গুলোও পাল্লা দিয়ে বাড়তে শুরু করল। যার জন্য আমাকে বহুবার সার্জারীর সরনাপন্ন হতে হয়েছে। আমার বা পা টি ডান পা থেকে ক্রমশ বড় হয়ে যাচ্ছিল ডাক্তার রা আমাকে টিউমারের বোঝাা থেকে অব্যাহতি দিতে চেষ্টার ত্রুটি করেননি। স্তালে যাওয়া দিনকে দিন দুষকর হয়ে যাচ্ছিল। আমার প্রতিবেশী ও ভাই বোনরা আমাকে বিরূপ পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করার জন্য সবসময়ই পাশে ছিল যা আমার প্রায় প্রতিদিনই প্রয়োজন পড়ত। একদিন আমার এক প্রতিবেশী আমার সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করার জন্য রাস্তায় মারামারি বাধিয়ে দিয়েছিল।




হাই স্কুলে পড়ার সময় ডঃ ভিনসেন্ট এর সাথে পরিচয় সূত্রে জানতে পারি সে একজন সন্তান সম্ভবা মাকে চিকিৎসা করেছেন যে এই রোগে আক্রান্ত পরে জানতে পারলাম সেই রোগী আর কেউ নয় আমার বড় বোন পোর্সিয়া। সে যে এই রোগের বাহক তা আমরা ঐ দিন ই জানতে পারলাম। আমার মায়ের প্রথম নাতনী কোটি যার বয়স এখন ২০ সেও এন এফ এ আক্রান্ত তবে সৌভাগ্য যে তা খুবই সামান্য। আমার ভাই রোনাল্ড, বোন পর্সিয়া এবং লিসা ছাড়া বাকী দুজনের এন এফ নেই।



আমার শারিরীক সমস্যার দরূন শৈশবের স্কুল বাদ দিয়ে আমি পার্সিং মিডেল স্কুলে ভর্তী হলাম। সব শিক্ষকরাই আমার প্রতি সদয় ছিল কিন্তু একদিন আমি বাসের জন্য অপেক্ষা করার মুহূর্তে আমার এক শিক্ষক এসে বার বার মুখোশটি খুলে খেলার জন্য বলছিল কিন্তু আমি তাকে কি করে বেঝিাই: এটা আমি নিজেই.................................এই আমি বিবস। তার কাছে আমার কদাকার চেহারাটাই মুখ্য হয়ে দাড়াল কিন্তু সে যদি আমাকে তার অন্তরচক্ষু দিয়ে দেখত তবে সে আমার মুখটি দেখত না দেখত একটা নিছক ১৫ বছরের তরুনকে !!!!!!!! যাই হোক, পথে ঘাটে সবাই যখন আমাকে দেখে আৎকে উঠত আমি খুব অপ্রস্তুত বোধ করতাম সেই সাথে লজ্জা!! কোন বন্ধুকে সাথে নিয়ে চলার পথে আমার জন্য যখন আমার বন্ধুটিও অপ্রস্তুত হত তখন আমরা দুজনেই ভান করতাম যেন কিছুই ঘটেনি। মাঝে মাঝে আমি খুব ভালভাবে লোকজনের দৃষ্টি আকর্ষন করতাম যেন আমি এই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট!!



এখন আমার বয়স ৪০ এর বেশী এবং আমি বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা কটিয়ে উঠতে পেরেছি। এখন আমি নির্দিষ্ট কিছু রাস্তায় হেটে বেড়াতে, শহরের বাইরে যেতে কিনবা বাজার করতে যেতে অনিরাপদ বোধ করিনা। আমার ভাইয়ের সহকর্মী আমাকে একদিন বল্ল, তোমাকে দেখে আমি খুব অবাক হয়েছিলাম কারন তোমার সাথে দেখা করার আগে তোমার সম্পর্কে কেউ কিছু বলেনি। আমার খুব ভাল লাগে যখন দেখি, আমার বন্ধুরা তাদের অন্য বব্ধুদের সাথে দেখা করানো আগে আমার সম্পর্কে বলে নেয়। যেন তারা পূর্ব প্রস্তুত থাকে । আমার কিছু বন্ধুরা আমাকে সবখানে নিয়ে যেতে চায় হয়ত তারা ভাবে আমি সব পরিস্থিতি সামলে নিতে পারব কিন্তু তাদেও বিব্রত করতে আমার মন সায় দেয় না, তাই আমি ভয়ে থাকি।



এখন আমি আমার জীবনটাকে সাজিয়েছি আমার অক্ষমতাকে কেন্দ্র করেই। যখন কেউ খুব উচ্ছ্বাস নিয়ে আমাকে গ্রহন করে আমিও তাতে সাড়া দেই।

আমার কথা: এই বিষয় নিয়ে লেখার ইচ্ছা অনেকদিন থেকেই ছিল কিন্তু সময়ের অভাবে সম্ভব হয়নি। রেগি বিবস বর্তমানে নিজস্ব ওয়েব সাইট জাস্ট আসক এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী অনেক এন এফ আক্রান্তদের সাথে যোগাযোগ করেছেন তাদের নিয়ে বিভিন্ন খেলা ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন, তাদের চিকিৎসা তহবিল গঠন করে চলছেন সেই সাথে তাদের মনোবলকে করে তুলছেন শক্তিশালী। আমরা অনেকসময় তুচ্ছ কারনে নিজেকে ছোট ভাবি বা হতাশ হয়ে পরি এই গল্পটি আমাদের জন্য অনেক বড় অনুপ্রেরনা হতে পারে বলে আমার বিশ্বাস। যদি একজনও অনুপ্রানীত হয়, তবেই আমার এই লেখার স্বার্থকতা।

রুচি................!!!!
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:০৭
১১টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×