somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জ্যোৎস্নায় নিরবতা

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তীব্র কিন্তু মিষ্টি একটা গন্ধ মাথার ভেতরে ঘুরতে শুরু করেছে।সূর্য উঠি উঠি করছে এই সময় আমার পুবের জানালা দিয়ে প্রথম সূর্য রশ্মি চোখে লাগে।আজ লাগছে না উল্টো মিষ্টি গন্ধটা আরো তীব্র হচ্ছে।চোখ খুলে ঘরের মধ্যে গাঢ় অন্ধকার এ মনে হলো দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে ফেলেছি।চোখ খোলার পর মস্তিষ্ক আলো না পাওয়ায় একটা অস্থিরতা তৈরি হয়েছে মনের মধ্যে।তাড়াতাড়ি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। সাধারনত সব সময় দক্ষিণের জানালা দিয়ে ল্যাম্বপোষ্টের আলো আসে ঘরে আজ সেটাও আসছে নাহ।
একটা বড় ঘোরের মধ্যে পড়ে গিয়েছি।মিষ্টি গন্ধটা আবার পাচ্ছি , মনে হচ্ছে আমি জ্ঞান হারাচ্ছি।চোখ খুলবার আপ্রাণ চেষ্টা করছি এখন আর চোখ খুলছে নাহ।মনে হচ্ছে কেউ একজন চোখের পাপড়ি চেপে ধরে আছে।মনে হচ্ছে আমি চলতে শুরু করেছি ঢুকে যাচ্ছি অতল গহ্বরে।হাতের স্পর্শে ঘুম ভাংলো।এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম।দেখি জুনায়েদ , শামীম , শিমুল উদ্বিগ্নতার সহিত আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমার পুরো শরীর ঘামে ভেজা।
জুনায়েদ - কী হয়েছে তোমার রুধির?
ঘুমিয়েছিলাম স্বপ্ন দেখছিলাম।
শামীম - দুস্বপ্ন?
অনেকটা সে রকম।
শিমুল - যাক , আমরা তো ভেবেছিলাম। ভয়ংকর কিছু হয়ে গেছে।
নাহ তেমন কিছুই হয় নি। তো তোরা হঠাৎ করে?
শিমুল- তোর জন্মদিনের উইশ করতে এলাম।
ওহ আচ্ছা।ধন্যবাদ।

এতক্ষণ এ টের পেলাম মিষ্টি গন্ধের কাহিনী, পুরো ঘর ফুল ময় করে ফেলেছে ওরা।বিশেষ কোন ব্যাপার নাহ।কাছের বন্ধুদের কাছে পাওয়া খুব ভালো কিছু সময় কাটলো এইটার চেয়ে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে।উইশ শেষ করে যে যার মত চলে গেলো আমি আবার একা হয়ে গেলাম।এতক্ষন এতোগুলো মানুষের সাথে থেকে এখন আবার শূন্যতা অনুভব করতে শুরু করেছি।আসলেই দিন শেষে আমরা প্রত্যেকেই একা নিজেদের জন্য আসলেই আমাদের কিছু করবার থাকেনা,আমারা প্রত্যেকেই অন্যের জন্যই সময় গুলোকে ব্যয় করি আর নিজেদের নিজের কাছে থেকে দূরে রাখি।আকাশে ফুটফুটে জোৎস্না , ছাদে চলে গেলাম , কার্ণিশে পা ঝুলিয়ে বসে আছি ইদানিং নিরু আর ভাবনায় আসে না।হয়তো দূরত্ব বেড়ে গেছে তাই।এমন একটা সময় ছিলো যখন যে কোন মেয়ে দেখলেই তার মধ্যে নিরুর ছায়া খুজে পেতাম আর এখন কেন যেন সেই সময়ের অনুভুতি গুলো আর সে নাহ, হয়তো সময়ের পার্থক্য সম্পর্কের মধ্যেও দেয়াল টেনে দিয়েছে।আচ্ছা নিরু কেমন আছে অনেক দিন ওর খোজ পাওয়া যায় নাহ।

ডেঙ্গু জ্বরের প্রোকপে ডাক্তারদের ছুটি বাতিল করায় এবার ঈদ হাসপাতালেই করতে হয়েছে নিরুর বরের।তাই একা একাই ঈদ করেতে হয়েছে নিরুর শ্বশুর বাড়িতে প্রথম ঈদ।ঘন্টা খানেকের জন্য দেখা হয়েছিলো দুজনের।আজ নিরুর বরের ছুটি।কয়েকদিন শিফট বদলে ছুটি পেয়েছে।সময়তাকে উপোভোগ করবার জন্য আজ নিরু দারুন প্রস্তুতি নিয়েছে।ডাক্তাররা সহজে রোমান্টিক খুব কমই হয় প্রচুর পড়ুয়ারা রোমান্টিকতার ব্যাপারে উদাসীন থাকে তবে সেদিক থেকে নিরুর ভাগ্য খুব ভালো।ডাক্তার সাহেব প্রেমিক পুরুষ।নিরু ছাদে বসে আছে তার অপেক্ষায়।শ্বশুর বাড়ি এসে আগে ছাদ সাজিয়ে নিয়েছে নিরু।এক পাশে নানান ফুলের বাগান, দু একটা ফলের গাছ ও লাগিয়েছে।বাগানের ভেতরে একটা টেবিল বসিয়ে নিয়েছে যাতে কয়েকজন বসে সময় কাটাতে পারে।আর এক পাশে একটা দোলনা বসিয়ে নিয়েছে।দোলনার দুপাশে অপরাজিতা ফুল
এর গাছ লাগিয়েছে কদিন পর লতায় লতায় উপরে আর পাশে জরিয়ে গিয়ে নীল অপরাজিতা ফুটবে।দোলনায় বসেই বিকেলের অবসর সময় বই পড়ে নিরু।সারাদিন কাজ থাকলেও বিকেলের এই সময়টায় ওকে ওর শ্বশুর বাড়ির কেউ বিরক্ত করে নাহ।অবশ্য মাঝে মাঝে মুক্তি যোদ্ধা রিটায়ার্ড কর্ণেল দাদা শ্বশুর এর সাথে বসে যুদ্ধের গল্প শোনে তার ছোট বেলার গল্প শোনে।ভালোই দিন কাটছে নিরুর।ভরা জ্যোৎস্না চাদের আলোয় বাগানে বসে আছে নিরু।সামনে একটা মোম , একজার গরম পানি , চিনি আর কফি।আজ জ্যোৎস্না বিলাস হবে।বহুদিন পর নিরু আর তার বর দুজন দুজনাকে কাছে পাচ্ছে।অদ্ভুত এক শিহরন কাজ করছে নিরুর মধ্যে।নিরু আজ কালো শাড়ি পড়েছে।এমনি তেই কালো রঙ এ নিরুকে অসম্ভব সুন্দর লাগে।আর কালো শাড়ি তে আরো চমৎকার মানিয়েছে।কালো পড়ার বিশেষ একটা কারন আছে নিরুর ইচ্ছে এই জ্যোৎস্নায় রাতের আধারকে নিজের ভেতর নিয়ে আসবে।অবশেষে সেই সময় এলো , দুজন দুজনার মাঝে হারিয়ে গেলো।অনেক্ষন পর মোম জালিয়ে কফির পেয়ালা হাতে নিলো দুজন ছাদের কার্নিশে দাঁড়িয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে, জ্যোৎস্না বিলাশে মন দিলো, দুজনের মাঝে কথা না হলেও নিজেদের অনুভুতি গুলো ঠিক বুঝে যাচ্ছে দুজন। ...............................................................................................................................................................
অন্যদিকে রুধিরও চাঁদের আলোয় স্নান করতে করতে নিরুকে নিয়ে ভাবছে ।নিরু ভালো আছে তো? সে ভালো থাকলেই রুধিরের মনবাসনা পূর্ণ হয়।ভাবছে রুধির, হয়তো নিরু ও আজ জ্যোৎস্না বিলাশ করছে, বরকে নিয়ে, হয়তো দারুন কিছু রোমান্টিক বাক্যলাপ, কিছু খুনসুটি চলছে দুজনের মাঝে।
ভাবতে ভাবতে এক বিরাট শূন্যতা গ্রাস করলো রুধির কে,
ভাবতে শুরু করলো জীবন তো কোন লেখকের লিখা গল্প নয় কিম্বা প্যাকেজ নাটকের স্ক্রিপ্ট নয় জীবন তার নিজস্ব গতিতে চলা এক অদৃশ্য পথ আর সেই পথেই প্রতি নিয়ত মঞ্চস্থ হওয়া এক একটা নাটক আর এই নাটকের এই সময়টাতে একটা বারের জন্য হলেও কি নিরুর মনে পড়েছে আমার কথা?
৬ ভাদ্র ১৪২৬, ২১শে আগষ্ট ২০১৯ , সময় ঃ রাত ১২.০৮

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:২৪
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×