লেখকঃ টেস গেরিটসেন
অনুবাদঃ সান্তা রিকি
প্রকাশনীঃ বাতিঘর
প্রকাশকালঃ ২০১৬ (বইমেলা)
মূল্যঃ ৩২০টাকা

এক বাক্যেঃ
সার্জনের বীভৎস হত্যাযজ্ঞে গা শিউরে উঠবে। তার শেষ পরিণতি না জানা পর্যন্ত সার্জন ভীতি তাড়া করে বেড়াবে আপনাকে।
কাহিনি সংক্ষেপঃ
বোস্টন শহরে কোন কারণ ছাড়াই একবছরের ব্যবধানে বীভৎসভাবে খুন করা হয় দু'জন মহিলাকে। খুনের ধরণ দেখে এটুকু জ্ঞাত হওয়া যায় যে, সে কোন সাধারণ খুনী নয়। সত্যিই সে তাই; মেডিকেল জ্ঞানসম্পন্ন এবং তার এই পৈশাচিক কাজে সুদক্ষ সে। বোস্টনের খবরের কাগজগুলো নাম না জানা অপরিচিত এই পিশাচটার নাম দেয় সার্জন। বোস্টনের মেয়েদের মধ্যে দ্রুতই ছড়িয়ে পরে সার্জন নামের আতঙ্ক।
অনেকটা সার্জনের কর্মের ঘ্রাণ শুকে শুরু হয় সার্জনকে খোজার অভিযান। এই অভিযানের দায়িত্বে থাকা বোস্টন হোমিসাইডের ডিটেকটিভ টমাস মুর এবং তার পার্টনার জেন রিজোলি আবিষ্কার করেন, দুই বছর আগে সাভানাতে অ্যান্ড্রু ক্যাপরা নামের এক মেডিকেল স্টুডেন্ট দক্ষ সিরিয়াল কিলার হিসেবে অবতীর্ন হয়েছিলেন। মেয়েদের আক্রমণ করে সেও হয়ে উঠেছিল সাভানার মেয়েদের কাছে এক আতঙ্কের নাম। বোস্টনের আতঙ্ক সার্জনের মতই একই প্রক্রিয়ায় সে খুন করতো তার শিকারদের। তবে সেই খুনি তার শেষ শিকারের হাতে দুবছর আগে খুন হয়। খোজ নিয়ে জানা যায় ক্যাপরার শেষ শীকার বর্তমানে বোস্টনের একজন সফল ট্রমা সার্জন। নাম ক্যাথরিন কর্ডেল। তদন্তের স্বার্থে জড়িয়ে পড়েন বোস্টনের এই সফল ডাক্তারটিও।
ডিটেকটিভদের কাছে একটা প্রশ্নের উদয় হয়, "সার্জন কি করে মৃত ক্যাপরার ন্যায় একই পন্থায় তার শিকারদের হত্যা করে যাচ্ছে? কি তার উদ্দেশ্য? কি করে সে হয়ে উঠেছে ক্যাপরার কপি কাট?"
প্রশ্নগুলোর উত্তর খুজতে গিয়ে ভয়ঙ্কর, লোমহর্ষক, বীভৎস এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয় বোস্টন পুলিশের হোমিসাইডের ডিটেকটিভ টমাস মুর ও তার পার্টনার জেন রিজোলিকে। শুরু একজন নাম পরিচয়হীন খুনী যে তার নৃশংস কাজগুলো বেশ দক্ষ তাকে ধরার অভিযান।
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ
ডায়ানা স্টার্লিং- ট্রাভেল এজেন্সিতে চাকুরিরত, তার খুনের মধ্য দিয়ে এই শ্বাসরুদ্ধ কর উপন্যাসটির শুরু। এরপরই সংগঠিত হয় আরও দুটো খুন। এই খুনগুলোকে লেখিকা টেস গেরিটসেন বেশ দক্ষ হাতে সাজিয়ে পাঠকের সামনে উপস্থাপন করেছেন ঔপন্যাসিক। যার ফলে, উপন্যাসে সংগঠিত বীভৎস সব হত্যা গা শিউরে ওঠার মত।
সার্বিক দিক থেকে বিবেচনা করে বলব, ঔপন্যাসিক বেশ দক্ষ হাতে প্লট, কাহিনি, চরিত্র রূপায়ন করেছেন। টমাস মুর আর জেন রিজেলির মত ডিটেকটিভকে তিনি যেমন সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছে, তেমনি সাজিয়েছেন উপন্যাসের অন্যতম মুখ্য চরিত্র ড. ক্যাথরিন কর্ডেল। ডায়ানা স্টার্লিং, এলিনা অর্টিজ, স্বয়ং ড. কর্ডেল এবং অন্যান্য ভিক্টিমদের মাধ্যমে মেয়েদের বর্তমান সামাজিক অবস্থানের চিত্রের আংশিক রূপায়নটি বেশ চমৎকারভাবেই করেছেন লেখিকা টেস গেরিটসেন। সেই সাথে হাসপাতালের চিত্রগুলোও বেশ ভালো করেই ফুটিয়ে তুলেছেন। সার্জনের বিভৎস কর্মকান্ডে গা শিউরে উঠে। লেখিকা সার্জনের পৈশাচিকতার বর্ণনা বেশ সুদক্ষ হাতেই উপস্থাপন করেছেন, যার ফলে বইটি পড়ার সময় সেই বিভৎস দৃশ্য পাঠকের চোখের সামনে তার অজ্ঞাতেই ফুটে উঠবে। আবার দক্ষ চিকিৎসক ড. ক্যাথরিন কর্ডেলের সাথে পাঠক হয়ে উঠবে একজন দক্ষ ট্রমা সার্জন, যে কিনা ব্যস্ত মানুষের সেবা করতে। নিজেই আচমকা কল্পনায় উপস্থিত হবেন ড. ক্যাথরিন কর্ডেলের কর্মযজ্ঞ স্থান হাসপাতালের সেই ব্যস্ত ওটিতে। আর রহস্যের সমাধানে ব্রতী টমাস মুর ও জেন রিজোলির সাথে পাঠিক নিজেও হয়ে যাবেন একজন দক্ষ গোয়েন্দা।
একটা কথা না বললেই নয়। এই উপন্যাসটিকে অন্যান্য থ্রিলার উপন্যাস থেকে অনেকটাই ভিন্ন বলব এই কারণে যে, শেষ না করা অবধি পাঠক কখনই সার্জনের নাগাল পাবে না। যদি কেউ সার্জনকে নিয়ে আন্দাজে ঢিল ছুড়তে চান, তবে সেই ঢিল আপনার মাথায়ই পরার সম্ভবনাই বেশি।
অনেকে মহিলা থ্রিলার লেখকদের নাম শুনলে নাক সিটকান, তাদের উদ্দেশ্যে বলবো, পড়ে দেখতে পারেন টেস গেরিটসেনের 'দ্য সার্জন'। টুইস্টে ভরপুর বইটা থেকে আশা করি কারো মনযোগ বিচ্যুতি ঘটবে না।
অনুবাদঃ আমার নিকট বইটির অনুবাদ বেশ ভালো লেগেছে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


