somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইমাম হোসাইন (রঃ) শেষ ভাষন

১৪ ই অক্টোবর, ২০১১ সকাল ৯:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কারবালার মাঠে একে-একে যখন সবাই শাহাদাত বরন করছেন এবং হজরত ইমাম হোসাইন(রঃ) যখন কেবল একা দাড়িয়ে ছিলেন, তখন তার শেষ কয়টি কথার কিছু অংশের অনুবাদ ঃ "কেন আমাকে হত্যা করতে চাও? আমি কি কোন পাপ অথবা অপরাধ করেছি?" এজিদের সৈন্য বাহিনী বোবার মত দাড়িয়ে রইল। পুনরায় ইমাম হোসাইন(রঃ) বললেন, "আমাকে হত্যা করলে আল্লাহ্‌র কাছে কি জবাব দেবে? কি জবাব দেবে বিচার দিবসে মহানবীর কাছে?" এজিদের সৈন্য বাহিনী পাথরের মত দাঁড়িয়ে আছে। আবার ইমাম হোসাইন(রঃ) বললেন, 'হাল্‌ মিন্‌ নাস্‌রিন ইয়ানসুরুনা?" 'আমাদের সাহায্য করার মত কি তোমাদের মাঝে একজনও নাই?' তারপরের আহ্বানটি সাংঘাতিক মারাত্বক। ঐতিহাসিকদের মতে এটাই ইমাম হোসাইন(রঃ) শেষ আহ্ববান। "আলাম্‌ তাস্‌মাও? আলাইসা ফিকুম্‌ মুসলিমু?" 'আমার কথা কি শুনতে পাও না? তোমাদের মাঝে কি মাত্র একটি মুসলমানও নাই?'
ইমাম হোসাইন(রঃ)-এর শেষ ভাষনটি মাত্র একটি ছোট্র বাক্য। তবে এর ব্যাখ্যা যদি কাঁচ ভাঙ্গার মত টুকরো-টুকরো করে দেখাতে চাই তাহলে সেই বাক্যটি হবে খুবই বেদনা দায়ক। তাই বেশি কিছু না বলে শেষ বাক্যটির সামান্য ব্যাখ্যা দিয়ে শেষ করতে চাই। খাজা বাবা যেমন বলেছেন, 'ইমাম হোসাইন আসল এবং নকলের ভাগটা পরিস্কার করে দেখিয়ে গেলেন' সে রকমই অর্থ বহন করছে ইমাম হোসাইন(রঃ) শেষ ভাষনটিতে। কারন, এজিদের সৈন্য বাহিনীতে একজন হিন্দু,বৌদ্ধ,খ্রিস্টান অথবা অন্য কোন ধর্মের কেউ ছিল না। সবাই ছিল মুসলমান। অথচ কি সাংঘাতিক এবং ভয়ংকর ভাষন-''তোমাদের মাঝে কি একটি মুসলমানও নাই?'' এজিদের সৈন্যবাহিনীর সবাই মুসলমান এটা আমি অধমের কথা নয় বরং যে কোন বিজ্ঞ আলেমকে প্রশ্ন করে দেখুন। অথচ ইমাম হোসাইন(রঃ) একি তাক লাগানো কথা বলছেন? "তোমাদের মাঝে কি একটি মাত্রও মুসলমান নাই?" না, একটিও সত্যিকার আসল মুসলমান ছিল না বলেই ইমাম হোসাইন(রঃ) এই আহ্বান জানিয়ে পৃথিবীকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন। তিনি বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন যে, যারা দাঁড়িয়ে আছে তারা সবাই নকল মুসলমান। বাজারের চালু আসল মালকে নকল করে যেমন জনতাকে ধোঁকা দেয়, সে রকম এরা নকল মুসলমান হয়ে জনতাকে ধোঁকা দিয়ে যায় এবং এই ধোকার ফাদে অনেক বিজ্ঞজনও মনের অজান্তে পা-খানা বাড়িয়ে দেন। বাজারে গিয়ে অনেক বিজ্ঞজনও নকল মাল কেনার ফাঁদে পড়ে যান, সে রকম অবস্থার শিকারও বলতে পারেন। আসল আর নকল চেনবার বিদ্যা রপ্ত করতে হয়, যদিও বিদ্যার প্রশ্নে তা সামান্য। যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সবচাইতে বড় অধ্যাপককে জায়গাজমি কেনার দলিল লিখতে বললে অক্ষমতা প্রকাশ করবেন, অথচ সেই দলিল লিখছে অল্প শিক্ষিত দলিল-লিখক। তাই আসল আর নকল কে চিনতে হলে একটি বিশেষ জ্ঞানের প্রয়োজন হয় অনেক ক্ষেত্রে। তবে সবার জন্য অবশ্যই নয়।
এখন মূল বিষয়টির দিকে ফিরে আসছি। সেই বিষয়টি হলো, হজরত ওয়ায়েস করনি কিন্তু মহানবীকে কোন প্রকার সাহায্য সহযোগিতা করা তো দূরে থাক, জীবনে একবার জাহিরি চোখে দেখার ভাগ্যও হয়নি। তাই তাকে সাহাবার খেতাব থেকে বাদ দেওয়া হয়, অথচ কোন কারন নেই, কোন যুক্তি নেই, কোন প্রশ্ন আর সংশয়ের বালাই নেই, কেবল মাত্র মহানবীর প্রতি ভালবাসার দরুন তিনি একে একে সব কটি দাঁত পাথরের আঘাতে ভেঙ্গে ফেললেন। কেন ভাঙলেন এই প্রশ্নের উত্তর খোজা বৃথা। কারন যুক্তির ব্যাখ্যা দেওয়া যায়, কিন্তু ভালোবাসা আর বিশ্বাসের ব্যাখ্যা দেওয়া যায় না। এবং এর ব্যাখ্যা নেই। হজরত ওয়ায়েস করনির মনপ্রান জুড়ে মহানবীর প্রতি কতটুকু ভালোবাসা থাকলে দাঁত ভেঙ্গে রক্ত ঝরাতে পারেন। হয়তো যুক্তি তর্কের মানদন্ডে এই ভালোবাসার মুল্যায়ন কতটুকু বলতে পারবো না তবে, এটুকু অন্তত বলতে চাই যে, ভালোবাসাকে ভালোবাসা দিয়েই মাপতে হয়। অনেকে হয়ত বলতে চাইবেন যে, এ রকম দাঁত ভেঙ্গে ফেলার ভালোবাসার কি মুল্য থাকতে পারে ? এর উত্তর দিতে চাই না এজন্যই যে, এ রকম কিছু প্রশ্ন তোলার মানুষ না থাকলে ভালোবাসার রূপটি একঘেয়েমিতে পরিনত হয়। বিচিত্রতার ঝাকুনি থাকে না। তাই মহানবী তাঁর নিজের জুব্বা মোবারক দিয়ে এই ভালোবাসার মুল্যয়ন করেছেন। এখন আরেকটি বিরাট প্রশ্ন তুলতে চাই যে, মহানবী যে ইমাম হোসাইনকে কতটুকু ভালোবাসতেন তা অনেকেই জানেন, তবু একটি কথা মনে করিয়ে দিতে চাই যে, মহানবী বলেছেন যে, বেহেস্তের দুইজন সরদার হলেন "হাসান এবং হোসাইন" এবং তিনি অন্য আরেকটি হাদিসে বলেছেন, হোসাইনকে যারা ভালোবাসে, তারা হোসাইনের সঙ্গে থাকবে তথা বেহেস্তে থাকবে। একটি প্রশ্ন আসতে পারে তা হলো, ইমাম হোসেনের কারবালার মাঠে সবচেয়ে বেদনাদায়ক শাহাদাত বরনের শোকে ইমাম হোসেনের জন্য শোকের মাতম তুলে, বুক চাপড়িয়ে, ছোট ছোট চাকুর ছড়া দিয়ে পিঠে আঘাত করে 'হায় হোসেন' 'হায় হোসেন' করে রক্ত ঝরায়, তাহলে ইমাম হোসাইন এই ভালোবাসার জন্য কি কিছুই দেবেন না? কারন নিরেট ভালোবাসা এবং এই ভালোবাসার ব্যাখ্যা ও যুক্তি উভয়ই সম্পূর্নরূপে বেকার। ইমাম হোসাইনের ভালোবাসায় কেউ মাতম না করলেও বলার কিছু থাকে না। কারন এটা ব্যাক্তিগত ব্যাপার তা ছাড়া ভালোবাসা তৈরি করা যায় না। আর যারা ইমাম হোসাইনের ভালোবাসায় মাতম করে, রক্ত ঝরায় তাদেরকেও বলার কিছুই থাকে না। কারন যুক্তি ও ব্যাখ্যার যেখানে কবর বা শেষ, ভালোবাসা সেখান থেকেই আরম্ভ হয়। এটা হৃদয় দিয়ে বুঝতে হয় মাথা দিয়ে নয়। যুগে যুগে সব সময় এক শ্রেনীর মানুষ বুঝে মাথা দিয়ে, আর একশ্রেনী বুঝে হৃদয় দিয়ে। কাউকেই তুচ্ছ করা যায় না। কারন এই দ্বান্দ্বিক পদ্বতিতেই সব কিছুর রহস্য লুকিয়ে আছে। কেউ বুঝে কেউ বুঝে না। তাই কাউকেই দোষারোপ না করে এটা যার যার তকদিরের লিখন বললেই সুন্দর মানায়।

নফ্‌স ও রূহের পার্থক্য (পর্ব-১)

নফ্‌স ও রূহের পার্থক্য (পর্ব-২)

নফ্‌স ও রূহের পার্থক্য (পর্ব-৩)

নফ্‌স ও রূহের পার্থক্য (পর্ব-৪)
১২টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×