somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইরাকে ছিলাম যেদিন (একটি নবজাতক ও তার মা এবং ছেলেটি)

৩০ শে এপ্রিল, ২০১১ রাত ১০:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ওহ কি বিকট শব্দ! আশেপাশেই কোথাও বোমা পরেছে।

বোমার শব্দের মাঝেই শোনা যাচ্ছে সদ্য ভূমিষ্ট হওয়া এক শিশুর আর্তচিৎকার, বোমার শব্দের সাথে পাল্লা দিয়ে চিৎকার করে যাচ্ছে মাকে জড়িয়ে ধরে। বোবা বধির বার বছরের বড় ভাইটা খাটের পাশে এসে দাড়ায়, মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে নিষ্পলক। মা খুব ক্লান্ত তবু মায়ের মুখে এক টুকরো হাসি। গত বছর বোমায় বাবার মৃত্যু আর তার বাক ও শ্রবনশক্তি হারানোর পর এই প্রথম মাকে হাসতে দেখল ছেলেটা। কাছেই কোথাও আবার বোমা ফাটল। আলোর ঝলকানিতে নবজাতক শিশুটি কেপে উঠে মায়ের বুকে মুখ লুকালো। বড় ভাই দৌড়ে ছুটে গেল বাইরে। পিছন থেকে মা চিৎকার করে ডাকতে থাকল, ” যাসনে খোকা যাসনে।”

খোলা রাস্তায় দাড়িয়ে ছেলেটা আকাশের দিকে তাকালো। পঙ্গপালের মত নাম না জানা অসংখ্য বিমান উড়ছে আকাশে আর বোমা ফেলছে। ছেলেটা চিৎকার করে বলতে লাগল ”তোমরা শুনো আমার একটা নতুন ভাই হয়েছে। আমার ভাইকে তোমরা এ সুন্দর পৃথিবীটাকে দেখতে দাও। তোমাদের বোমার আলোর ঝলকানিতে কিছু দেখতে পারে না ও, আজকের জন্য তোমারা বন্ধ কর বোমা ফেলা ।” বোবার মুখ থেকে শুধু গোঁ গোঁ শব্দ বের হয়। কিন্তু আকাশ দেবতারা হয়ত তার কথা শুনতে পেল তাই কাছেই একটি বোম ফাটল। ছেলেটা ছিটকে উড়ে গেল দশ-বারো হাত।



মাথার মধ্যে ঝিম ঝিম করছে , চোখের চারপাশে লাল লাল দেখাচ্ছে সব কিছু। কোন মতে নিজেকে একটু সামলে নিয়ে নিজের বাড়ির দিকে হাটতে শুরু করল ছেলেটা। কিন্তু কোথায় বাড়ি চারিদিকে শুধুই ধংস্বাবশেষ একটা বিল্ডিংও আস্ত নেই। সে দিশেহারা হয়ে পরে, কোথায় তার বাসা। একবার ডানে, একবার বামে দৌড়ায়। কিন্তু কোথায় সেই পাঁচতলা সাদা বিল্ডিংটা যার পাশেই ছিল তাদের লালইটের একতলা বাড়িটা। চারপাশে কোথাও নেই, তবে কি বোমের ধাক্কায় সে বাসা থেকে অনেক দূরে চলে এসেছে। ছোটছুটি বন্ধ করে ভাল করে তাকায় চারপাশে ছেলেটা। ওই তো সাদাবাড়িটা বোমা খেয়ে তিন তলা ভেঙ্গে দোতলা হয়ে গেছে। কিন্তু পাশে কোথাও তো তাদের এক তলা বাড়িটা দেখা যাচ্ছে না। কোথায় তার বাড়ি কোথায় মা, নতুন ছোট ভাইটা। আস্তে আস্তে করে সামনে আগায় ছেলেটা হঠাৎ তার চোখে পড়ে মায়ের খাটটা ভেঙ্গে পরে আছে দেয়ালের গায়ে। দৌড়ে ছুটে যায় ছেলেটা, কাছে গিয়ে দেখে রক্ত আর কিছু মাংসপিন্ড লেপ্টে আছে খাটের সাথে। বোঝা যায় না, চেনা যায় না, শুধু মায়ের হলদে সেমিজের টুকরো জড়ানো মাংসপিন্ড গুলো দেখে ছেলেটি বুঝে ওগুলো মা, এই রক্ত মাংস গুলো তার মা আর মাত্র পৃথিবীতে আসা তার নতুন ভাই। বোবা কান্না কাঁদতে থাকে ছেলেটা । হাতে একটা পাথর তুলে নেয়। ছুড়ে মারে বিমানগুলোর দিকে কিন্তু সামান্য পাথর ফিরে আসে মাটিতে পৃথিবীর টানে। কিন্তু এ বিদ্রোহের জবাব দিতে ভোলে না আকাশ দেবতা রুপী বিমানগুলো কঠোরভাবে দমন করে তারা এ ক্ষুদে বিদ্রোহীকে। ছেলেটিও দুহাতে আগলে ধরে তার দিকে ছুটে আসা বোমাটিকে। মহুর্তে সেও পরিণত হয় রক্ত আর মাংস স্তুপে।



পুরো ঘটনাটিই কাল্পনিক। ইরাক যুদ্ধ চলাকালে এক রাতে বসেবসে ভাবছিলাম কি অবস্থা ইরাকের মানুষগুলোর। তখনি চোখের সামনে কল্পনায় ভেসে উঠেছিল এই ছবিটি।

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১১ রাত ১০:৩৬
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭



আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×