আজ ৬ আগষ্ট! মানব ইতিহাসের ভয়াবহতম হিরোশিমা দিবস। আজ থেকে ৭৬ বছর আগে এদিন যুক্তরাষ্ট্রের নিক্ষেপ করা পরমাণু বোমা হামলায় কেঁপে উঠেছিল জাপানের হিরোশিমা। ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে জাপানের হিরোশিমা শহরে পারমাণবিক বোমা হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। ঘড়ির কাঁটায় তখন জাপানের স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ১৫ মিনিট। মার্কিন বিমান বাহিনীর বি-২৯ যুদ্ধবিমান, যেটির নাম ছিল ইনোলা বে, থেকে হিরোশিমা শহরে ফেলা হয় ‘লিটল বয়’ নামে একটি পরমাণু বোমা।
ছবিঃ লিটল বয় পরমাণু বোমা
ছবিঃ ইনোলা বে যুদ্ধবিমান ও এর বৈমানিকেরা
ভয়বহতম এ হামলায় তাৎক্ষণিকভাবে প্রায় দেড় লাখ মানুষ নিহত হন। হিরোশিমা শহরের সাড়ে তিন লাখ মানুষের মধ্যে ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ কেবল বোমার বিস্ফোরণেই মারা যায়। মাটির সঙ্গে মিশে যায় শহরের বেশিরভাগ স্থাপনা। নিমিষেই সাজানো একটি নগরী ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়। এটির শক্তি ছিল প্রায় ১২ হতে ১৫ হাজার টন টিএনটির বিস্ফোরণ ক্ষমতার সমান। পাঁচ বর্গমাইল এলাকা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছিল এটি।
ছবিঃ হিরোশিমায় লিটল বয় পরমাণু বোমার বিস্ফোরণ।
ছবিঃ হিরোশিমা শহরের ৬০ ভাগ ঘরবাড়ি, এলাকা মুহূর্তেই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
বোমা হামলার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় তেজস্ক্রিয়তার কারণে বছর শেষে আরও ৬০ হাজার মানুষ মারা যান। এই বোমার শিকার হয়েও যারা বেঁচে গিয়েছিলেন, তারা "হিবাকুশা" বলে পরিচিত। তাদের ভয়ংকর শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে বাকী জীবন বাঁচতে হয়েছে।
ছবিঃ হিরোশিমা শহরের ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৯ সালে হিরোশিমাকে ‘শান্তির শহর’ ঘোষণা করা হয়। হিরোশিমায় নির্মাণ করা হয় শান্তির স্মৃতি পার্ক। এরপর থেকে প্রতিবছর ৬ আগস্ট শোক ও বেদনার মধ্য দিয়ে দিনটিকে স্মরণ করে বাংলাদেশসহ বিশ্ববাসী। একইসঙ্গে এদিন যুদ্ধবিরোধী প্রচার প্রচারণা চলে এবং পারমাণবিক বোমামুক্ত বিশ্ব গড়ার প্রত্যয় নেওয়া হয়।
ছবিঃ হিরোশিমা শহরের শান্তিপার্ক
যুদ্ধ, গনহত্যা কি বন্ধুত্ব ঠেকিয়ে রাখে???
২১ শতকে উদীয়মান চাইনিজ শক্তিকে মোকাবেলা করতে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। সামরিক, অর্থনৈতিক, বিনিয়োগ, এনার্জি সেক্টর, গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় প্রভৃতি ক্ষেত্রে জাপানের সাথে দহরম মহরম অনেক বেশি। আমদানি বাণিজ্যে চীনের উপর নির্ভরতা কমাতে জাপানিজ পণ্য আমদানি করছে মার্কিনিরা। জাপানে মার্কিন সরাসরি বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৮৩ বিলিয়ন ডলার। আমেরিকার পদার্থ বিজ্ঞানীরা জাপানের পরমাণু শক্তি কেন্দ্র গুলোতে বিভিন্ন ইস্যুতে কাজ করছে। আমেরিকা থেকে জাপান প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করছে। সামরিক ক্ষেত্রে ১৯৬০ সালের চুক্তি অনুযায়ী মার্কিন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জাপানে কর্মরত আছেন। প্রায় ৫০ হাজার মার্কিন সেনা, সপ্তম নৌবহরের হেডকোয়ার্টার, ১০ হাজারের বেশি মেরিন সেনা এবং গ্লোবাল হক ড্রোন মোতায়েন রয়েছে জাপানে। চায়না ও উত্তর কোরিয়াকে নজরদারির মধ্যে রাখতে জাপান থেকে গোয়েন্দা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে মার্কিনিরা। রিউকু ও ওকিনাওয়া দ্বীপে রয়েছে সুবিশাল মার্কিন ঘাঁটি। জাপানের একজন উচ্চ পদস্থ কূটনীতিক 'কোজি টমিতাKOJI TOMITA' ওয়াশিংটন ভিত্তিক মার্কিন পত্রিকা 'The Hill' এ “Japan's friendship with the US remains unshakable” শিরোনামে প্রবন্ধে লিখেছেন, "The disaster(earthquake and tsunami) that left nearly 20,000 people dead or missing and forced nearly 500,000 people to evacuate. As the Japanese people look back on this history-making event, I remember with profound gratitude the outpouring of aid and support from our American friends."
প্রবন্ধের লিঙ্কঃ "Japan's friendship with the US remains unshakable"
কূটনীতিক কোজি টমিতা গভীরভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন জাপানের আমেরিকান বন্ধুদের প্রতি। কারণ ভূমিকম্প ও সুনামিতে ক্ষতিগ্রস্থ জাপানের পাশে মার্কিনিরা এগিয়ে এসেছে। গণহত্যার স্মৃতি একপাশে তুলে রেখে জাপান এখন যুক্তরাষ্ট্রের পরম মিত্র। সত্যিই তো, এই ২১ শতকে গণহত্যা কি বন্ধুত্ব ঠেকিয়ে রাখে? না, রাখে না। জাপান হচ্ছে তার বাস্তব উদাহরণ।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:২৩