somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“পুরানো সেই রাতের কথা” ....

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১২ সকাল ১০:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

( বলতে হবে কপাল গুণেই চান্স পেয়েছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে । দেশের সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপীঠে আসার কোন শখ আমার ছিল না । উন্নাসিকতা থেকে নয়, নিজের উপর আত্মবিশ্বাসের অভাবেই সেই স্বপ্ন দেখার সাহস পেতাম না । তবু কীভাবে যেন ব্যটে বলে হয়ে গেল- আর আমার জীবনে যোগ হল অনস্বাদিতপূর্ব নানা অভিজ্ঞতা । তেমনি কিছু অভিজ্ঞতা নিয়েই লেখা এই পোস্ট।)




পরীক্ষার খাতায় ‘বিদ্যালেয়র প্রথম দিন’ রচনা লিখতে লিখতেই যেন দুম করে চলে এলাম বিশ্ববিদ্যালয় জীবেন ৷ ভর্তি হলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৷ পরিবার থেকে এই প্রথম বাইরে আসা । তাই ফুটো বেলুনের মত চুপসানো একটা ভাব ছিল শুরুতে । চলতে ফিরতে গেলেই মাথায় আসত এটিকেট মেইনটেইন হচ্ছেতো ?! বড় ভাইদের সামনে ফস করে সিগারেট ধরিয়ে ফেল্লাম না'তো ! জামা-জুতো ঠিক-ঠাক আছে নাকি আবার কেউ আমাকে 'মামা' শ্রেণীর কেউ ভাবছে ! হ্যানো-ত্যানো নানা চিন্তা ।

দূর্ভাবনায় ছিলাম বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটা কি নি:সংগতায় কাটাতে হবে ?ভাগ্যটা ভালই বলতে হবে - দুদিন না যেতেই পরিচয় হল ফটকা মামুনের সাথে ।তার মাধামেই জুটে গেল আরো একগাদা জানে জিগর বন্ধু-বান্ধব । তাদের পরামর্শ মতই মেলা কায়দা-কানুন আর “পলিটিকস্” করে ঠাঁই হল সূর্যসেন হলের বীরপ্রসূ গণরুম ৩২৬ (ক)-তে। ছারপোকাদেরর অতিথি সৎকারে কোন কার্পণ্য ছিল না,তাই নির্ঘুম রাতগুলো কাটছিল ভালই ।

অপেক্ষা করতাম রাতের জন্য । মাঝরাত মানেই হলো আমাদের জন্য সন্ধ্যাবেলা । পড়ালেখা কিংবা সকল কাজ-অকাজের পাট চুকিয়ে সদ্যখাতির হওয়া বন্ধুদের নিয়ে বের হতাম “সান্ধ্যভ্রমণে”।ছারপোকাদের কামড়ে নির্ঘুম রাত কাটানোর চেয়ে ঘুরেফিরে রাত কাটানো বেহ্তর।

যাত্রা শুরু হত “অপরাজেয় বাংলা”-র পাদদেশ থেকে,উদ্দেশ্যবিহীন পথচলা । সাথে অবধারিতভাবেই তারেকের হেঁড়ে গলার গান-

“ভেঙ্গেছে পিঞ্জর, মেলেছে ডানা,
উড়েছে পাখি,পথ অচেনা,
ইয়া-ইয়া-য়া-উ-উ........”

যে কোন গানে তারেকের দৌড় দুই লাইন পর্যন্তই,তাই বাঁচোয়া।

আমাদের মধ্যে মুনীর ছিল গ্রামের ছেলে। তাই মাঝে-মধ্যেই অমন “ডবকা” শরীর নিয়েও তরতর করে উঠে পড়ত ডাব গাছে (নাকি নারিকেল গাছে?!)। পলাশও গ্রামের ছেলে। কিন্তু সে আবার ভূত-পেত্নীকে একটু আধটু মান্যি করে চলে, তাই কখনো গাছে চড়া হয়নি। অবশ্য ডাব খাবার সময় ভাগ চায় ষোল আনাই। মুনীর নিজের জন্য দু’টো বেশী রেখে বাকীগুলো ভাগ করে দিত আমাদের মধ্যে,মুখে “দানবীর মহসীন” টাইপের হাসি। আমাদের মনে ঈর্ষার পোকা যে কুটকুট করত না ,তা নয়। কিন্তু কি আর করা? কেউ যে গাছে চড়তে পারি না,এতটুকু অনিয়ম তো মেনে নিতেই হবে।

“বুর্জোয়ারা চিরকালই প্রোলেতারিয়েতদের ঠকিয়ে এসেছে”-এই বলে মুনীরকে ক্ষেপাতে অবশ্য ভুল হতো না।

ভ্রমনের আধখানা শিডিউল শেষ হতো রাত দু’টোর দিকে। সবার চোখ তখন ঘুমে ঢুলুঢুলু। অবশ্য এরও চিকিৎসা ছিল,পলাশীর মোড়ে গিয়ে দু’কাপ “মানিকের স্পেশাল চা” মেরে দিলেই সবাই আবার চাঙ্গা!

তারপর ‘ভিসি চত্বরে’ এসে বসতাম তাসের আসরে। আরিফ ততক্ষণে কিছুণের জন্য ছুটি নিয়ে চলে গেছে সূর্যসেন হলে-এ।অশীতিপর বৃদ্ধ আলী ভাই আমাদের মত “মিডনাইট হিরো”-দের জন্য তখনো বিড়ির পসরা সাজিয়ে নিয়ে অপেক্ষা করছেন।(জাত-বর্ণ নির্বিশেষে সব ব্র্যান্ডের সিগারেটকে “বিড়ি”বলাটাই হলের পোলাপানের রেওয়াজ)।

আরিফ ফিরে আসার আগেই জমে উঠে তাসের আসর।সাহেব-বিবি-টিক্কা-গোলাম-এর রাজত্বে বন্ধু জয় ছিল রাজপুত্তুর। তাই জয়ের সাথে বসে মামুন-তারেকের মত জাঁহাবাজ খেলোয়াড় জুটিকে হারিয়ে দিতে আমার মত “আন্ পড়'' বাঙালীর” কোন বেগ পেতে হত না। অবশ্য মাঝে মধ্যেই স্থুল কারচুপির অভিযোগ তুলে ওয়াক-আউট করত তারা।

আমাদের হাফডজন বন্ধুর একডজন চোখে তখন একই রঙের স্বপ্ন-
“এমনি করে যায় যদি দিন, যাক্ না।”

অল্প ক'দিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকিয়েছি । আজকাল সময় পাল্টেছে,পাল্টেছে স্বপ্নের রং। সারাদিন কাজের চাপে আর সময় বের করাই হয়ে ওঠে না। তারেক এখন পড়ালেখা নিয়ে খুব ব্যস্ত,যে করেই হোক বিসিএস দিয়ে একটা পদ বাগাতেই হবে । মুনীর দিনরাত পরিশ্রম করছে ইংরেজী শেখার জন্য,আই.বি.এ-তে ভর্তি হতে না পারলে জীবনটাই যে বৃথা। জয়টা আবার একটু অন্যরকম হয়েছে। ছেলেসঙ্গ-র চেয়ে মেয়েসঙ্গ-ই তার অধিক প্রিয়। তাই রাত বারটা বাজার সাথে সাথে তার ব্যস্ততা বেড়ে যায়-তার বাপের টাকা উড়ে যেতে থাকে নরওয়ে কিংবা মিশরে ; ।

ভবিষ্যতের ভাবনা ভাবাই জ্ঞানীর কাজ । আমি বা মামুন কেউই এই দলে পড়ি না। তাই আমরা এখনো মাঝে মাঝে টিএসসিতে যাই মাঝরাতে । দু’মিনিট বসতে না বসতেই পুলিশের বাঁশী, মাঝেমধ্যে সলজ্জ অনুরোধ-উঠে যেতে হবে, রাতের আড্ডা ওনাদের পছন্দনীয় নয়। ওদের মধ্যে কারো কারো বোধহয় বাংলা সিনেমা দেখার বাতিক আছে। তাই ফ্যানাটিক ভাব নিয়ে তেড়ে আসে,হাতের লাঠিতে হালকা ভায়োলেন্সের ইঙ্গিত।
বলার ভাষা যাই হোক-ভদ্র কিংবা অভদ্র,আমরা উঠে পড়ি,ফিরে আসি বাসায় । কেন যেন মনে হয় ছারপোকাদের ডেরাটায় বোধহয় ভাল ছিল। মনে পড়ে সেই পুরোনো রাতের কথা । বাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়ি। অনধকারে মনে পড়ে তারেকের হেঁড়ে গলার দুই লাইনের গান-
“কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই,
আজ আর নেই।
কোথায় হারিয়ে গেল সোনালী বিকেলগুলো সেই,
আজ আর নেই।
লা-লা-লা-লা লা-লা-লা-লা...’’

পুরনো সেই রাতগুলোর কথা ভাবতে ভাবতে চোখ ভিজে যায় । ভেজা চোখে হাটতে থাকি অতীতের পথে ।
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×