somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘর পালানো পাখির ছদ্ধবেশ

০৭ ই জুন, ২০১৩ রাত ৯:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



নাম : সুফিয়া আখতার
জন্মতারিখ: ২৬-০৫-১৯৮২
স্হায়ী ঠিকানা: ১১১/২ কাজীপারা, থানা - নেত্রকোনা সদর
জিলা-নেত্রকোনা
অস্হায়ী ঠিকানা : ৯৪/৩ বশীরউদ্দীন রোড,কলাবাগান
শিক্ষাগত যোগ্যতা : মাস্টার্স মার্কেটিং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
............................................................................................।
"
হুম এক্সপেক্টেড স্যালারি তো কভার লেটার এ উল্লেখ করেননি। এতক্ষনে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন আমরা এই পদ থেকে কি কি এক্সপেক্ট করছি।সুফিয়া সম্মতি সুচক মাথা নারল।মনে মনে হিসাব করে নিচ্ছে বর্তমানে যেখানে কাজ করে ওখানে ৩২ হাজার টাকা পায় এই অফিসের ঠাট বাট , টেবিলের ওপাশের ৩ জনের বেশ ভুসা, ঘড়ি,চশমার ফ্রেম ,সেল ফোনসেট প্রকটভাবে প্রকাশ করছে উনারা সমাজের উচু তলার মানুষ।১ লক্ষ টাকা চেয়ে বসলো সুফিয়া। মাঝখানের লোকটি একবারে ডান পাশের লোকের দিকে চোখের ইশারা করলো, লোকটি আস্তে করে বল্লেন , "সুফিয়া আমাদের আর কিছু বলার নেই আপনাকে আমরা পরে জানিয়ে দিবো ।"
বা দিকের বাঁকা করে বসা লোকটি কিছুই জিজ্ঞেস করেনি কেবল মোবাইল ফোন নিয়ে খেলছিলো । আশ্চর্য্য !
সুইং ডোর পেরি্যে একটা বড় নিশ্বাষ নিলো সে , উহু এত্ত টাইটফিট জামা পড়ে ঠিকমত নিশ্বাষ ও নেয়া যায় না ! ধ্যূত্তরি , এদিকে রিসেপশেনিস্ট মেয়েটি হাসিমুখে ভিজিটিং পাস ফেরত নিতে নিতে বলেই ফেলল "ম্যাডাম আপনাকে যদি নেয়া হয় আমরা অফিসে একজন সুন্দরী কলিগ পাবো ।"
সুফিয়া মুচকি হেসে বেরিয়ে গেলো এই ঝাঁ ঝাঁ রোদে, সিনজি ঠিক করে এখন গুলশান থেকে মতিঝিল অফিসে যেতে হবে। দুপুর রোদে কোথাও একটা সিনজি পাওয়া গেলো না, হাঁটতে হাঁটতে তিতুমির কলেজ পর্যন্ত যেতে হলো ২/১ টা যাও দেখা যায় তারা কেউ মতিঝিল যাবে না ।অগ্যতা রাস্তা পার হয়ে উল্টো দিকের ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সামনে পাওয়া গেলো একটা সিনজি । ভিতরের খাঁচায় নিজেকে ঢুকিয়ে দিয়ে ভেবে নিলো এই চাকুরিটা হলেই একটা পুরোনো গাড়ী কিনে নিবে আর ভালো লাগে না সিনজি,রিক্সা,ট্যাক্সি চড়তে ।

হা হা হা মফস্বল থেকে আসা সেদিনের সেই সুফিয়ার আজকের সোফিয়া হতে অনেকটা বন্ধুর পথ পেরোতে হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়েই নিজেকে নতুন ছাচে ঢেলে সাজিয়েছে, পোশাক-আশাক; চলন-বলন;জেসচার; কথা-বার্তা সবই বদলে ফেলেছে হুট করে কেউ পরিচিত হলে ভাবে বিদেশ থেকে পড়া বড়লোকের মেয়ে ! এই খোলনালচে বদলাবার জন্য সোফিয়া কে কম কষ্ট করতে হয়নি, প্রতিদিন সবাই যখন ক্লাস শেষে প্রেমিকের হাত ধরে ঘুরে বেরিয়েছে বা ডাস এর কলিজা সিঙ্গারায় কামড় দিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মেতেছে সোফিয়া তখন ভাষা ইনস্টিউট,ব্রিটিশ কাউনসিল,আবৃত্তি চর্চার ময়দানে তামিল নিয়েছে।রুমমেট নেপালি মেয়ে সুরুটি -ওর কাছ থেকে শিখেছে ফ্যাশন আর স্টাইল । কি করে নিজেকে আরো সুন্দর করে তুলে ধরা যায়। সেই সময় থেকেই অনবরত নিজেকে আরোও ধারালো বানিয়েছে সোফিয়া যা আজকের কর্পোরেট জগতের বহু কাঙ্ক্ষিত ।
তাই তুলোনামূলক ভাবে তার বন্ধুদের কাছে সোফিয়ার অবস্হান ঈর্ষনীয় । সোফিয়া জানে শুধু মেধা দিয়ে সমাজের উচু স্তরে পৌছানো যায় না এর জন্য নানা ফেক্টর লাগে, মামা-চাচার জোর, ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড,রুপের যথাযথ ব্যবহার,কূটচাল,ক্ষমতাবানদের সাথে সু-সম্পর্ক এমনি আর কত কি ! নাহলে এই বয়সে এত তাড়াতাড়ি এন্ট্রি লেভেল পোস্ট থেকে ডেপুটি ম্যানাজের হতে পারতো না।

মাহাবুব পায়ের উপড় পা তুলে মোবাইল ফোন নিয়ে গেইম খেলেছে ইন্টারভিউর পুরোটা সময়,মিটিং এ মাহাবুব মোবাইল দিয়ে ফেসবুক এ চ্যাট করে।সবাই বুঝে তাও কিছু বলে না কারন ম্যানেজমেন্টের নানা অপকর্মের ডান হাত এই মাহাবুব চৌধুরী ।এক সন্তানের পিতা অত্যন্ত সুদর্শন মাহাবুব ,সনামধন্য ব্যরিস্টারের একমাত্র কন্যার জামাতা , গুলশানের কোটি টাকার ফ্লাটে বসবাস করেন। মাহাবুবের একটা আলোকিত নয় এমন দিক আছে । সেলিব্নিটি নায়িকা দের সঙ্গ পছন্দ করে তাই তাকে প্রায়সই ঢাকার আশে পাশের প্রাইভেট রিসোর্টগুলোতে দেখা যায় ।অফিসে এ নিয়ে কানাঘুসা আছে, ইন্টারভিউ বোর্ডে মাহাবুব বা দিকের চেয়ারে বসে মোবাইলের স্ক্রীনে সোফিয়া কে দেখছিল আর ভাবছিলো মেয়েটা নাটক সিনেমায় নামলেই পারত, এত ঝা চকচকে চেহারা খুব কমই কর্পোরেট জগতে দেখা যায় না। তারই ইউনিটে একে নিতে হবে ভাবতেই মনটা ফুরফুরে হয়ে গেলো । সিমকি চলে যাবার পর অফিসে লেট নাইট কাজ করে আর মজা নেই । হাহাহাহা...................

নাসিম সাহেব মোটামোটি দুইজনকে সিলেক্ট করেছেন এই পোস্টের জন্য কিন্ত্ত ইকুয়েল অপরচুনিটির নামে মেয়েটি সামান্য এগিয়ে আছে ছেলেটির তুলনায় । অবশেষে সোফিয়া জয়েন করে বিপুল সুজোগ সুবিধা নিয়ে, কাজ করতে গিয়ে সোফিয়া ঠিকি ধূর্ত শিয়াল মাহাবুবকে চিনে ফেলেছে। মাহাবুব সোফিয়ার চোখে সেই সেলিব্নিটি তরুনীদের চোখের ভাষা দেখেছে, সেই একই লোভের প্রতিচ্ছবি, ভোগ-বিলাশ, সমাজের উপড় তলায় উঠবার তাড়না আকুতি তা যেমন করেই হোক না কেন।

সহজ সরল হিসাব লেনদেনের কোথাও দুর্বোধ্য কিছু নেই, এখানে ইমোশোনের কোনো জায়গা নেই, এই সুন্দরী ললনারা চায় অর্থ,যশ, ক্ষ্যাতি,প্রতিপত্তি বিনিময়ে মাহাবুবরা চায় মনোরঞ্চন ওদের ভাষায় কমপ্লিট স্যাটিসফেকশন । মারকেটিং এর ভাষায় উইন উইন সিচুয়েসন কোনো জোর জবরদস্তি নেই , জেনে শুনে এই সাপ লুডু খেলা উভয়পক্ষের। কিছুটা রিস্ক আছে কিন্তু কিছু পেতে হলে কিছু তো রিস্ক নিতেই হয় । সিমকি ও নিয়েছিলো এখন অন্য আফিসে আরো ভাল পোস্টে জয়েন করেছে , বিয়ে করে এখন সংসারী ।

স্বন্ধ্যা থেকেই ফোনেটা বেজেই চলছে ও পাশে কেউ ধরে না, ঘরের পাশের বারান্দায় বসে বসে লালচে আকাশ দেখছে সোফিয়া, চা এর স্মূক্ষ্ম ধোঁয়া একে বেকে উপরে উঠছে যেমন করে মফস্বলের একতলা বাড়ী থেকে সোফিয়া উঠেছে এই ১৪ তলা ভবনের টপ ফ্লোরে।জানে সে কে ফোন টা করেছে মাহাবুব চৌধুরী , আজকে রাতে ওয়েস্টিনে ডিনারের পর বায়ারের সাথে নিভৃতে হোটেলের রুমে সময় কাটানোর সময় কোন প্রোজেক্ট ফাইলটা তার ল্যাপটপ থেকে পেন ড্রিইভ দিয়ে সরিয়ে নিতে হবে সেটা নিয়ে আলোচনা করবে। সিগারেটে ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে সোফিয়া ভাবে এই জীবন কি ও চেয়েছিলো ? ডুবন্ত মানুষের জীবন , পুরো শরীর যার নর্দমার ময়লা পানিতে ডুবে আছে কেবল নাকটা আছে জেগে যেটা তাকে মাঝে মাঝে গন্ধ দেয় শুদ্ধতার ।

আজকাল আর ভালো লাগে না তার কিছু । মনে হয় কেন সে আর ১০ টা মেয়ের মত সাধারন জীবন বেছে নেয়নি , যত টাকার পিছে
ছুটেছে তত একা হয়ে পড়েছে । গুন গুন করে গেয়ে উঠে সোফিয়া
ভয় দেখাশ না প্লিজ..............।

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুন, ২০১৩ সকাল ৭:৫৮
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×