somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রেতাত্মা (সত্য ঘটনা অবলম্বনে রচিত আদি ভৌতিক গল্প)

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইদের ছুটিতে কিছুদিন বাড়িতে বসবাস করছিলাম। শহরের যান্ত্রিকতা মুক্ত- সময় ভালোই যাচ্ছিল। একদিন সন্ধ্যেবেলা এলাকার এক ভাইস্তাকে শিগগির আমার সঙ্গে দেখা করতে বললাম। সে ফোনে জানাল, “আধা ঘন্টার মধ্যেই চলে আসব।”

গ্রামের মেঠো পথ ধরে হাঁটছি। চারপাশে সুনসান নীরবতা। মাঝেমাঝে ঝিঁঝিঁ পোকা ডেকে যাচ্ছে। কোথাও কেউ নেই। গ্রামের মানুষজন খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। পরদিন ভোরে ওঠতে হবে যে। শহরের মানুষেরা দেরিতে ঘুমোতে যায়, ওঠে দেরিতে। গ্রামে ঠিক তার বিপরীত। আগে ঘুমোতে যায় আবার সূর্য ওঠার সাথে সাথেই ঘুম থেকে ওঠে পড়ে।

অনেকটা পথ হাঁটার পর একটা আম গাছের তলায় অনুমান দশ-বারো বছরের এক ছেলেকে দেখতে পেলাম। অন্ধকারে তার মুখটা দেখা যাচ্ছিল না। জিগ্যেস করলাম, “এখানে একা একা কী করছো? নাম কী তোমার?”
ছেলেটা ইতস্তত করছিল; বলল, “নানা অপেক্ষা করতে বলেছে। আমার নাম কামরুল।”
“কোথায় তোমার নানা?”

“কার সাথে কথা বলছ?” একটা চেনা কণ্ঠস্বর জিগ্যেস করল। পেছনে তাকিয়ে দেখি ভাইস্তা। বললাম, “এত দেরি হলো যে!”
ভাইস্তা বলল, “দেরি কোথায়? আমি তো দশ মিনিটের মধ্যেই চলে এলাম।”

ঘড়িতে সময় দেখলাম। আসলেই তো বেশিক্ষণ হয়নি। আমার কাছে মনে হচ্ছিল কয়েক ঘণ্টা যাবত হাঁটছি।

“এই ছেলেটাকে চেনো?” যেই ছেলেটাকে দেখাতে গেলাম, দেখি সে নেই।
“কোথায় ছেলে?” ভাইস্তা জানতে চাইল।
“এখানেই তো ছিল।” আমি বললাম।
“নাম কী?”
“ও বলল তো কামরুল।”
“তুমি ঠিক আছ তো?”
“কেন?”
ভাইস্তা কিছু বলল না।

আমাদের গ্রামের পাশের গ্রামেই বড়ো বোনের বিয়ে হয়েছে। বেড়াতে এসেছিলেন। মা তাকে কিছুদূর এগিয়ে দিতে গিয়ে হঠাৎ একটা ভিড় দেখতে পেলেন ঘন জঙ্গলের কাছে। ভিড় ঠেলে সামনে এগিয়ে একটা দশ-বারো বছরের ছেলের লাশ দেখতে পেলেন, যার দু’হাত বিচ্ছিন্ন; পেট চিরে নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে এসেছে। পাশে একটা লণ্ঠন, একটা টর্চ লাইট পড়ে আছে।

জঙ্গলের পাশেই যে বাড়িটা, পুলিশ সে বাড়িতে ঢুকল। জামাল নামের এক কিশোরকে যেই ডাক দিল, সে দৌড়ে পালাল। পুলিশের সন্দেহ রইল না যে সে উক্ত ঘটনায় জড়িত। পুলিশ তাকে আটক করল।

রাস্তার পাশেই ছিল দোকানটা। কামরুল দোকানে বসেছিল। তার নানা কী একটা কাজে পাশেই বাড়িতে গিয়েছেন। চলে আসার কথা। এতক্ষণ সে মোবাইলে গেমস খেলছিল।
জামাল তার সাথে ভাব জমাবার চেষ্টা করছিল। সপ্তাহব্যাপী তার সাথে খেলেছে। আজও খেলার কথা বলে তাকে ডাকল। কামরুল গেমস খেলা বন্ধ করে জামালের সাথে গেল।

কামরুলকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এলাকায় মাইক মারা হলো। কামরুলের মা-বাবা, নানাসহ আত্মীয়স্বজনেরা পুরো এলাকা তন্নতন্ন করে খুঁজল। কামরুলের হদিস নেই।

রিমান্ডে জামাল স্বীকার করল সবকিছু। কামরুলকে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দেয় সে। ভালুকার একটা হাসপাতালের কয়েকজন ডাক্তারের সাথে তার যোগসাজশ ছিল। ভুলিয়ে-ভালিয়ে কামরুলকে ঘন জঙ্গলে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর অজ্ঞান করে তার কিডনি, চোখ খুলে নেওয়া হয়। “হাত কেন কাটা হলো,” এর উত্তরে বলল, “শিয়াল-কুকুরের কাজ হতে পারে।”

ঘটনা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। “আমার তাহলে গত রাত্তিরে কার সাথে দেখা হলো, কথা হলো?” মাকে এ কথা জিগ্যেস করতে গিয়ে আর জিগ্যেস করলাম না। এমনিতেই আমার অস্বাভাবিক কাজকর্মে তিনি বিরক্ত; এমতাবস্থায় ও কথা পাড়লে আমাকে পাগল আখ্যা দিয়ে বসবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:২৬
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×