আগের পর্বের লিঙ্ক: Click This Link
ঢাকা শহরে থাকার মতো অবস্থা রইল না তূর্য'র। হাতে যা সঞ্চয় ছিল, সব শেষ। এখন কী করবে সে? কোথায় যাবে?
পরিচিত যারা ছিল, সবার কাছে গেল। কিন্তু কেউ কোনো সদ্গতি করে দিতে পারল না। অথচ তূর্য ভেবেছিল কোনো একটা গতি হবে। চারপাশে এত এত শুভানুধ্যায়ী, কেউ কোনো ব্যবস্থা করে দিতে পারবে না?
চাকরির সাক্ষাৎকার দিল। শহরের অলিগলি ঘুরল। জুতোর তলা ক্ষয়প্রাপ্ত হলো। পরনের কাপড় ময়লা হলো। তবু কিছুতেই কিছু হলো না।
তূর্য বুঝতে পারল নিজের পথটা নিজেকেই হাঁটতে হয়। চলার পথে অনেকেই সাথে হাঁটে কিন্তু কেউ কারও জন্য হাঁটে না।
অচেনা এ শহরে নিজের পকেট থেকে এক পয়সা খরচ করে কেউ খাওয়াবে না। শোবার জায়গা দেবে না।
মনমরা হয়ে বসে থাকে সে। প্রাণের চাকরি টা ছাড়া কি ভুল হলো?
না। সেটা করা সম্ভব ছিল না। সে সপ্তাহখানেক চেষ্টা করেছে। থাকা সম্ভব হয় নি।
তার আগের চাকরি টা? ওখানে তো মাস শেষে একটা পরিমাণ আসত।
একটু ধৈর্য ধরে থাকলে ভালো হতো? কিন্তু ওখানে তো ভবিষ্যৎ নেই।
ভবিষ্যৎ দিয়ে কী হবে? এখন তো টিকে থাকাই কঠিন।
নিজেই নিজের সাথে কথা বলে তূর্য। অস্থিরতা বাড়ে তার। দমবন্ধ হয়ে আসে। বৃদ্ধ মা-বাবার কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে বোনদের কথা।
মধুর কথাও মনে পড়ে। বেচারি বাড়ি চলে গেছে। ওর বাড়ি থেকে খরচ চালানো সম্ভব না।
মধুর সাথে কতো স্মৃতি! মালিবাগ থেকে ফার্মগেট চলে যেত মাঝেমধ্যেই। তারপর সংসদভবন এলাকায় ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকা। কতো কথা!
কখনো কখনো চন্দ্রিমা উদ্যানে চলে যাওয়া। একসঙ্গে বসে থাকা। প্রেমালাপ। সব এখন অতীত।
তূর্য সিদ্ধান্ত নেয় কিছু লিফলেট টাঙাবে। যদি একটা-দুটো টিউশনি পাওয়া যায়। নিজের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা টা হওয়া দরকার। এত বড়ো শহরে একটা-দুটো টিউশনি পাওয়া যাবে না?
মালিবাগের আশপাশে কিছু লিফলেট টাঙাল।কিন্তু কোন ফোন এল না। শহরের মোড়ে মোড়ে লিফলেট "পড়াতে চাই"। কয়জনকে ফোন দেবে?
শহরে অভাবীর অভাব নেই।
সাবেক সহকর্মী ছোটন স্যারের সাথে কথা হচ্ছিল। ওনি বললেন, ময়মনসিংহে চলে যেতে। মাস শেষে নয় হাজার করে টাকা দেবেন। থাকা খাওয়া ফ্রি।
কাজ একটাই। তূর্য বসে বসে পড়ালেখা করবে আর ছোটন স্যারের কোচিং দেখাশোনা করবে।
প্রস্তাব টা ভালোই। তূর্য সম্মত হওয়ার কথা ভাবল। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো, ছোটন স্যারের নিজেরই তো চলা কঠিন। ওনি কীভাবে সহযোগিতা করবেন?
মধু একবার বলেছিল টিউশন মিডিয়ায় যোগাযোগ করতে। ওরা কিছু টাকার বিনিময়ে টিউশনি দেয়। তূর্যর মন সায় দেয় নি। ভুয়া মনে হয়।
তবুও শেষ চেষ্টা হিসেবে একটায় ফোন দিল।
ফোন ধরল একজন। নিজের সমস্যার কথা বলতেই ওপাশ থেকে বলা হলো যোগাযোগ করতে। যোগাযোগ করল তূর্য।
শিক্ষকের অভাব নেই। তূর্য বুঝল এখানে কোনো কাজ হবে না। অন্য পথ ধরতে হবে। কিন্তু পথ কোথায়? সামনে তো আঁধার নেমে এসেছে।
সিভি করাই ছিল। কয়েক জায়গায় সিভি দিয়ে দেখলে কেমন হয়?
শাহজাহানপুরের আশপাশে কয়েকটা কোচিং এ সিভি দিল। অপেক্ষায় রইল একটা ফোনের।
ফোন এল। মাসে সাত হাজার টাকা চুক্তিতে একটা কোচিং এ ক্লাস করাতে হবে। "নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো"। কোনোমতে টিকে থাকার জন্য হলেও কোচিং এ যোগ দেওয়া দরকার।
টিউশন মিডিয়ার মাধ্যমে একটা টিউশনির ব্যবস্থাও হলো মুগদা এলাকায়।
কয়েকদিন পর আরও দুটো ফোন এল টিউশনির। আপাতত ঢাকায় থাকার মতো ব্যবস্থা হলো তূর্য'র।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ১০:৪২