somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এল আঁধার ঘিরে (৩)

২৭ শে মার্চ, ২০২২ রাত ১২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আগের পর্বের লিঙ্ক: Click This Link
উত্তর বাড্ডার "হোসেন মার্কেট"। মালিবাগ থেকে তূর্য এসেছে চাকরির পরীক্ষা দিতে। "প্রাণ-আরএফএল" কোম্পানিতে লোক নেওয়া হচ্ছে। সে অপেক্ষা করছে কখন পরীক্ষা নেওয়া শেষ হবে।

বসে আছে হল ঘরে। লোকে লোকারণ্য হয়ে গেছে হল ঘর। একজন বক্তা বক্তব্য রাখছেন। কোম্পানি সম্পর্কে অনেক কথা বলা হচ্ছে। মনোযোগ দিয়ে অনেকেই শুনছে। কেউ কেউ আবার ফিসফিস করছে।

তূর্য'র বুক ধড়ফড় করছে। সে কারও সাথে কথা বলছে না। পরীক্ষা কেমন হয় কে জানে! চাকরি তার খুব দরকার। যে কোনো একটা চাকরি।
বাড়িতে অসুস্থ মা-বাবা। মাস শেষে টাকা দিতে হয়। এ মাসে মাত্র ৩ হাজার টাকা পাঠিয়েছে। সামনের মাসে কিছু দিতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। গত চাকরির যা সঞ্চয় ছিল; এতদিনে শেষ হয়ে গেছে। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে। গত ২ মাসে টানা ৩ বেলা পেট পুরে খাবার খেয়েছে বলে মনে পড়ে না। বড়োজোর ১ বেলা ভাত। সেটা দুপুরে। রাতে মাঝেমধ্যে এটাসেটা খায়। সকালে কখনোই খায় না। আজকে অবশ্য মার্কেটের নিচ থেকে একটা বাটার বন খেয়ে এসেছে।

কিছু না খেয়ে ইন্টারভিউতে গেলে মুখ দিয়ে কথা বেরোয় না। তোতলামি শুরু হয়ে যায়। কয়েকদিন আগে "গেটকো"তে গেল। দুপুর ১২ টা পর্যন্ত এক ফোঁটা জলও পান করে নি। ইন্টারভিউতে গিয়ে মুখ দিয়ে কথা বেরোয় না। প্রশ্নকর্তা জিজ্ঞেস করেছিলেন, "আপনি অসুস্থ কি না?"
"একটু মাথাব্যথা।" তূর্য বলেছিল।
ইন্টারভিউ ভালো হয় নি।

পরীক্ষা শুরু হলো। প্রশ্ন সহজই মনে হচ্ছে। যথাসম্ভব উত্তর করল তূর্য। অনুমান করল উত্তীর্ণ হবে। উত্তীর্ণ হলেই ইন্টারভিউতে ডাক পড়বে।

দুপুর দুইটায় ফলাফল দেওয়া হলো। তূর্য উত্তীর্ণ হয়েছে। ইন্টারভিউ দিতে হবে। ইন্টারভিউ শুরু হবে এখনই।

প্রার্থীদের ৩ ভাগে ভাগ করা হলো। একভাগ টেস্টি ট্রিটের, আরেকভাগ মিঠাইয়ের আর অন্যভাগ ডেইলি শপিংয়ের।
তূর্য পছন্দ করল টেস্টি ট্রিট।
যথাসময়ে ইন্টারভিউ হলো। সবাইকে বলা হলো নির্বাচিত সকলের মোবাইলে সন্ধ্যায় মেসেজ যাবে।

রুমমেটের সাথে শুয়ে গল্প করছে তূর্য। অনিশ্চিত পথযাত্রার গল্প। কথা প্রসঙ্গে পরীক্ষার বিষয়ে প্রশ্ন করল রুমমেট। "মেসেজ আসতে পারে।" তূর্য বলল।
তার একটু অস্বস্তি হচ্ছে। মেসেজ না এলে রুমমেট কী না কী ভাবে!
কয়েকদিন আগে একটা স্কুলে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল সে। "আফতাবনগর"। বেতন কম বলে চলে এসেছিল তূর্য। "প্রাণ" এ পরীক্ষার ব্যাপারে রুমমেটই জোরাজোরি করেছিল। এখন যদি চাকরিটা না হয় ছোটো হয়ে যেতে হবে। অবশ্য এটাও ঠিক ন্যাংটার আবার ইজ্জতের ভয়! কিন্তু কী আর করার! সঙ্কোচ তো উগরে ফেলে দেওয়া যায় না। পকেটে ২ পয়সা না থাকলেও একটু ঠাঁট বজায় রেখে চলতে হয়।

সন্ধ্যায় মেসেজটা এল। বলা হলো: আপনাকে প্রাণ-আরএফএলের সেলস এক্সিকিউটিভ হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে। আগামীকাল এসে অফার লেটার নিয়ে যাবেন।

পরদিন অফার লেটার নিতে গেল তূর্য। তাকে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হলো রামপুরায় টেস্টি ট্রিট এর আউটলেট ২ তে।
প্রশিক্ষণ চলল ১ সপ্তাহ।

যে আশা নিয়ে এখানে এসেছিল সে আশার গুড়ে বালি। কাজের কাজ কিছুই হয় নি। সহকর্মীদের অসহযোগিতা। ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে কাজ করা অথচ বেতন মাত্র ১০ হাজার। অসুস্থ হয়ে পড়ল তূর্য। মানসিকভাবেও ভেঙে পড়ল।
তার মনে হলো কোম্পানি তাকে চূড়ান্তভাবে নিয়োগ দেবে না। কারণ, তার শেখা হয় নি কিছুই। এড়িয়া ম্যানেজার এসে প্রশ্ন করলে কোনো প্রশ্নের উত্তরই দিতে পারবে না।
এখানে এসে প্রথম যে কাজটা ছিল, তা হলো খাবারের নামগুলো মুখস্থ করা। অথচ কিছুই মুখস্থ হচ্ছে না। নাম হালকা মুখস্থ হলেও কোনটা কী দেখে বলতে পারছে না। তৎক্ষনাৎ পণ্য রেডি করে ক্রেতাদের সরবরাহ করতে পারছে না। সহকর্মীরা ছোঁ মেরে তার সামনে থেকে পণ্য নিয়ে কাস্টমারদের সার্ভ করছে। এমন অসহযোগিতাপূর্ণ পরিবেশে দমবন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা।

এতকিছু সত্ত্বেও ধৈর্য ধরতে রাজি ছিল তূর্য। কিন্তু শরীর যেমন কুলাল না, তেমন সে যখন জানতে পারল সেলস থেকে এইচআর এ যাওয়ার সুযোগ নেই তখন মনটা ভেঙে গেল। এইচআর এর ওপর অনার্স-মাস্টার্স তূর্য'র। এই পদে চাকরি পেলে সুবিধে হতো।
চেষ্টাও করল। একদিন মূল অফিসে আবার গেল। সেখান থেকে জানা গেল গত সপ্তাহেই লোক নেওয়া হয়ে গেছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০২২ সকাল ৭:১৬
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×