
বেশ কয়েক বছর আগের কথা। আমি তখন গাজীপুর থাকতাম। এক সন্ধ্যায় অচেনা একটা ফেসবুক আইডি থেকে একটা মেসেজ এলো আমার ফেসবুকে। ছোট্ট করে লেখা, ‘আই লাভ ইউ’।
মেসেজটা পড়ে খুশি হওয়ার কথা। প্রেমের প্রস্তাবে কে না খুশি হয়! অশীতিপর বৃদ্ধও তো প্রেমের জন্য উতলা। কিন্তু আমি বিরক্ত হলাম। খুবই বিরক্ত। উল্টোপাল্টা কথা শুনালাম। বিজ্ঞজন মাত্রই জানেন দুঃসময়ে মাথায় ওই ধরনের অনুভূতি কাজ করে না। মানে প্রেমানুভূতি আসে না। যাদের আসে, তারা অন্য লেভেলের।
একটা স্কুলে পড়াতাম আমি। কিছুদিন হলো চাকরিটা নেই। মানবেতর জীবনযাপন করছিলাম। চাকরি খুঁজছি আর এর ওর কাছ থেকে ধার-দেনা করে চলছি। এই অবস্থায় প্রেমানুভূতি আসতে পারে?
বিরক্ত হওয়ার আরও একটা কারণ ছিল অবশ্য। কাউকে ভালো লাগলে সেটা ধীরেসুস্থে বলতে হয়। হুট করে বললে হয় না। প্রেম এত সস্তা না। বহু সাধনার ধন। আবার এমনও কি হতে পারে না যে, আমাকে ফাঁদে ফেলতে চেষ্টা করছে? এমন তো অহরহ হয়। কেউ বা আবার দুষ্টুমি করতে পারে। কিন্তু দুষ্টুমি করার মতো কেউ নেই আমার।
বিরক্ত আমি জিগ্যেস করলাম, “কে?”
“আপনি আমাকে চিনবেন না।” ওপাশ থেকে মেসেজ এলো।
এর একটু পরই নতুন মেসেজ, “স্যার, আমি সেতু।”
মনে করতে চেষ্টা করলাম, এই সেতুটা কে? আশপাশের কোনো সেতু বা কালবার্টের কথা মনে পড়ল না। বললাম, “চিনি না।”
“আমি আপনার ছাত্রী সেতু।”
এবার চেনা গেল। সম্প্রতি যে প্রতিষ্ঠান থেকে চলে এসেছি, সে প্রতিষ্ঠানেরই এক ছাত্রী এই সেতু। কালো, লম্বা মতন কিন্তু মায়াবী চেহারার এক মেয়ে। “সেতু খুবই নম্র এবং নিরীহ এক মেয়ে। সে তো এমন হওয়ার কথা না।” আমি বললাম।
এমন হওয়া বলতে কী বুঝায় নিজেই কি বুঝতে পারলাম? মনে হয় না। ওপাশ থেকে আর প্রত্যুত্তর নেই। আমার কেন যেন মনে হলো, সে সেতুই। নিজের ব্যবহারে একটু খারাপ লাগল। এভাবে বলা ঠিক হয়নি। তার তো আমাকে ভালো লাগতেই পারে, ভালো লাগার কথা জানাতেই পারে। তাই বলে যা তা ব্যবহার করা তো উচিত না।
আমার বয়স তখন পঁচিশ। মেয়েটা অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। বয়স বড়জোর পনেরো। আসলে দশ বছরের ছোটো কোনো মেয়ে প্রপোজ করবে, তাও আবার শিক্ষককে আমি এমন ভাবতেই পারিনি। খুব অস্বস্তি হচ্ছিল। আমার দেখা সবচেয়ে ভালো মেয়েদের একজন এই সেতু। পড়ালেখা তো বটেই, আদব-লেহাজে অতুলনীয়।
পরদিন আমিই মেসেজ দিলাম তাকে। কেমন চলছে; এসব জানতে চাইলাম। স্কুলের ব্যাপারেও জানতে চাইলাম। সে উত্তর করল শুধু, নিজে থেকে কিছু বলল না। এরপরও মাঝেমধ্যে মেসেজ হতো। আমি ওর খোঁজ নিতাম। সাবেক স্কুলটা সম্পর্কেও জানতে চাইতাম। আরও যারা ছিল, তাদের বিষয়েও জানতে চাইতাম।
দুই দিন পর দেখি সে আমাকে আনফ্রেন্ড করে দিয়েছে। আমার প্রথমদিনের আচরণ বোধহয় ভুলতে পারেনি। মেয়েরা হয়তো প্রত্যাক্ষানের লজ্জা ভুলতে পারে না। কিন্তু আমি কি ঠিক প্রত্যাক্ষান করেছিলাম তাকে?
ছবিঃ গুগল
একটা কবিতা প্রাসঙ্গিক মনে হলো তাই এখানে দিলাম। হাপিত্যেশ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০২৪ দুপুর ১:৪১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




