সবে ঢাকায় এসেছি। কাজ শুরু করেছি একটা অফিসে। হিসেবনিকেশের কাজ করতে হয়। দিতে হয় কর্মচারীদের দিক-নির্দেশনা। যদিও খাপ খাওয়াতে একটু-আধটু সমস্যা হয়, ভাবলাম নিজেরই অযোগ্যতা হয়তো। ঢাকায় তো আগে থাকি নি, মিশি নি তেমন কারও সাথে।
৭ তলা ভবনে ৪ টা অফিস। বাকি অংশে বাচ্চাদের স্কুল। আমার বস একজন সচিবের ছেলে। ওনার সহকারী হিসেবেই কাজ করি আমি। ৪ টা অফিসের বিল দেখতে হয়, কত টাকা বিদ্যুৎ বিল আসে সেসব ভাগ করতে হয়। ব্যাংকে দৌড়াতে হয়। স্কুলটাও দেখাশোনা করতে হয়।
করোনার সময় তখন। স্কুল আপাতত বন্ধ। তবুও অনলাইনে ক্লাস হয়। শিক্ষক কর্মচারীরা আসেন। তাদেরকে সহযোগিতা করতে হয়। কোনো কিছু দরকার পড়লে কেয়ারটেকারকে দিয়ে আনাই।
সশরীরে একসময় ক্লাস শুরু হলো। শিক্ষার্থী কম। দেখা যায় শিক্ষার্থীদের চেয়ে শিক্ষক বেশি। কেউ ভর্তির ব্যাপারে এলে আমি তেমন কিছু জানাতে পারি না। আমাকে তেমন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
৬ বছরের টিচিং এর অভিজ্ঞতা আছে আমার। কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেমনে চালাতে হয়, ভালোমতোই জানি। আমার বস যে প্রতিষ্ঠান ভালোমতো চালাতে পারছেন না, বিলক্ষণ বুঝতে পারি। কিন্তু বলি কেমনে? যদি কিছু মনে করেন?
আমি ভাবি এভাবে স্কুল চালিয়ে লাভ কী? মনে হয় না খরচও উঠে। লাভ তো পরের কথা। নিজস্ব ভবন হওয়ায় হয়তো কোনোমতে টেনেটুনে চলছে।
সপ্তাহে ২-৩ দিন এসে অফিসে বসে জ্ঞান ঝারলে তো লাভ নেই। শিক্ষার্থী আনতে হলে তো প্রচার করতে হবে। লিফলেট টাঙাতে হবে। কোনো অভিভাবক এলে তো কমপক্ষে বসারও জায়গা দিতে হবে। এখানে এসে অভিভাবকরা দাঁড়িয়ে থাকেন।
উপযাচক হয়ে প্রিন্সিপাল হিসেবে যে ম্যাডাম আছেন, ওনাকে বললাম করণীয় সম্পর্কে। ওনি হ্যাঁ, হু করলেন। বুঝলাম ওনারও করার কিছু নেই। সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর ওনি নিজেই অন্যের গলগ্রহ। এখানে অনুকম্পায় চাকরি করছেন। ওনি তেমন কোনো অবদান রাখতে পারবেন না।
বস রেজওয়ান সাহেবকে জানানো হলো আমি কী বলতে চাই। যদ্দুর বুঝলাম ওনি বিরক্ত হলেন। আমি দু টাকার কর্মচারী। আমার কথা ওনি শুনবেন কেন?
একটা সময় পর ওনি বুঝলেন আমি ওনার ভালোর জন্যই বলছি। কিছু কার্ড রাখলেন আমার কাছে যাতে আমি ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সাথে কথা বলে কার্ডগুলো তাদের মধ্যে বিতরণ করি।
গাড়ির কাগজ আপডেট করতে হবে। ড্রাইভারকে নিয়ে গেলাম গাজীপুর। ম্যালা টাকা পয়সার ব্যাপার। রেজওয়ান সাহেব বিশ্বাস করছেন না আমাদের। মনে করলেন ড্রাইভারকে নিয়ে ধান্দা করছি।
কোথায় কোথায় যেন ফোন করলেন তিনি। দেখা গেল আমি এক পয়সাও বেশি বলিনি। তাও ওনার সংশয়। অফিসে চলে আসতে বললেন। যদিও একসময় কাজটা আমাকেই করতে হলো।
গাড়ির গ্যাস বাঁচাতে বনানীর একটা শাখায় বিল জমা দিলাম। ওনি রুষ্ট। কিছুতেই বুঝতে চাননি এনআরসিসি ব্যাংকের যে কোনো শাখায় টাকা জমা করলেই হয়।
গাড়ি ঠিক করাতে গ্যারেজ খুঁজছেন তিনি। আমাকেও বললেন খুঁজতে। খুঁজে কত খরচ হতে পারে জানালাম। ওনার বিশ্বাস হয় না।
কয়েকদিন পর জানলাম, আমি যত বিল বলেছি, তার চেয়ে বেশি টাকা খরচ করে ওনি গাড়ি ঠিক করেছেন। আমার কাছে ছোটো হতে হবে বলে আমাকে জানাতে চাননি।
এরকম মানুষ আমি আরও দেখেছি, পেছন দিয়ে লাখ টাকা গেলেও ওদের জ্বলুনি হয় না অথচ সামনে দিয়ে ১ টাকা গেলেও হা-হুতাশ শুরু করে। অধীনস্থ কাউকে মূল্যায়ন করতে জানে না এরা। নিজেদের সবসময় ঠিক মনে করে। পদে পদে ভুল করে আফসোস করবে, তবুও অন্যের সাথে শেয়ার করবে না ছোটো হয়ে যাওয়ার ভয়ে। ভীষণ অদ্ভুত এদের ব্যাপার-স্যাপার।
ছবিঃ ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:৪৫