somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সবাই আছে নিজ নিজ ধান্দায়

০৩ রা এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১০:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাসার কাছেই একটা মনিহারি দোকান। কমবয়সি এক ছেলে বসে। মাঝেমধ্যে বসে মধ্যবয়সি এক লোক। একদিন কিছু একটা কিনতে দোকানটায় ঢুকলাম। দোকানে বসা ৩০-৩৫ বছর বয়সি এক মহিলা বললেন, “মামা, কী লাগবে?”

আগে কখনও উনাকে দেখিনি। হঠাৎ আমাকে মামা ডাকায় বিরক্ত হলাম। এত বয়স্ক কি আদৌ হয়েছি? বললাম, “আমি আপনার কোন কালের মামা?”
মহিলা হাসলেন। বললেন, “ছেলের বয়সি তো হবেন।”

মহিলা আমার চেয়ে ৪-৫ বছরের বড়ো হতে পারেন বড়জোর। সে হিসেবে আমি উনার ছোটো ভাই হতে পারি, ছেলের মতো কীভাবে হই? যাহোক, বললাম, “ছেলের মতো যেহেতু তাহলে বাবা ডাকুন।” তিনি তাই বলে সম্বোধন করলেন।

কথাপ্রসঙ্গে উনার ছেলের সম্পর্কে জানতে চাইলাম। উনি জানালেন উনার ছেলে এবার অনার্সে ভর্তি হবে। আর আমি অনার্সে ভর্তি হয়েছিলাম ১৩ বছর আগে। বুঝতে পারছি না বয়স কি আমার বাড়েনি না কি?

প্রাণ- এ এক সপ্তাহ কাজ করার সময় একদিন এক ছেলে এলো। তুমি সম্বোধন করে কথা বলছিল। আমি জানতাম এই ছেলে আমার চেয়ে কমপক্ষে আট বছরের ছোটো হবে। তাও ওর কথা শুনছিলাম। আমার এক সহকর্মী বলল, “ভাই কিন্তু আমাদের চেয়ে বয়সে অনেক বড়ো। অনার্স-মাস্টার্স অনেক আগেই শেষ।” ছেলেটা থতমত খেল। বলল, “ভাইকে দেখে মনেই হয় না উনি বড়ো।”

একবার এক কোচিংয়ে ক্লাস নিতে গেলাম। পরিচালনায় থাকা ম্যাডাম তুমি সম্বোধন করে বললেন, “পড়াতে পারবে তো?” আমি বললাম, “৬ বছর ধরে পড়াচ্ছি। পারার কথা তো।” উনি ভাবছিলেন আমি মাত্র অনার্সে পড়ি। প্রসঙ্গত, ওই কোচিংয়ের বেশিরভাগ শিক্ষকই অনার্স পড়ুয়া ছিলেন।

যাহোক, দোকানের ওই মহিলার সঙ্গে অনেক কথা হলো। আমি কী করি, কোথায় থাকি; এসব আর কী।

অনেকদিন পর ওই দোকানে যেতেই ভদ্রমহিলার সঙ্গে ফের দেখা। আমাকে চিনতে পারলেন না। আগের কথা মনে করিয়ে দিতেই চিনতে পারলেন। বললেন, উনার ছেলের জন্য যেন একটা-দুটো টিউশনি দেখি।


অফিস শেষে বাসায় ফিরছিলাম। আমার আগের বাসার বাড়িওয়ালীর সঙ্গে দেখা হলো। অনেক কথাও হলো। আমার দিনকাল কেমন যাচ্ছে জানতে চাইলেন। বললাম সব। তারপর আমাকে বললেন উনার মেয়ের জন্য যেন ভালো চাকরি দেখি। মজার ব্যাপার হলো, উনার মেয়ে পাশেই এক জায়গায় একটা চাকরি করেন। আমার চেয়ে ৫-৭ হাজার টাকা বেশি তার বেতন। বাসায় থেকে-খেয়েও পোষায় না। আমি তাকে কী করে চাকরি দিতে পারি? বললাম না কিছুই।

বাড়িওয়ালী টিউশনি দিতে বললেন। আমি বললাম, “কার জন্য?” উনি জানালেন উনার নিজের জন্য।

আমি বুঝতে পারছিলাম না হাসব না কি কাঁদব। ষাটোর্ধ্ব এক নারী, উনি না কি টিউশনি করাবেন। যার আবার ঢাকায় ৩টা বাড়ি আছে। উনি জানালেন সময় কাটানোর জন্য টিউশনি দরকার। হালকা হাত-খরচ এলেও মন্দ না। দেখব বলে কেটে পড়লাম।

মহিলার বাসায় কয়েকমাস ছিলাম। সিঙ্গেল একটা রুমে উঠার কথা ছিল আমার। অগ্রিম টাকা দিতে পারিনি বলে অন্য রুমে গাদাগাদি করে থাকতে হয়েছিল।


চাকরি হারানোর পর এমন দুরবস্থা হয়েছিল যে বাড়ি চলে যাব ভাবছিলাম। তারপর ভাবলাম দেখি ঢাকায় কোনোমতে টিকে থাকা যায় কি না। মোড়ে মোড়ে পড়াতে চাই লিখে লিফলেট টাঙালাম। কোনো ফোন পাইনি। তারপর একটা টিউশন মিডিয়ায় যোগাযোগ করি। তারা একটা টিউশনি জোগাড় করে দেয়। মালিবাগ থেকে মুগদায় যেতাম পড়াতে। যাওয়া-আসা ১ ঘণ্টা। পড়ানোয় ১ ঘণ্টা। মাস শেষে পেতাম ২ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৫০০ চলে যেত ভাড়াতেই।

তারপর একদিন একটা ফোন পেলাম টিউশনির। বেতন নিয়ে কথা হয়নি। মাস শেষে ৪ হাজার টাকা পেলাম। ওই মুহুর্তে ওই টাকাই অনেক। অফিস শেষে এই টিউশনিটা এখনও করাই। তবে আমি যে ঠকে যাচ্ছি তখন না বুঝলেও এখন বুঝি। ইংলিশ ভার্সনের একটা ৩য় শ্রেণির বাচ্চা সপ্তাহে ৬-৭ দিন পড়িয়ে মাস শেষে ৪০০০ পাই। কোনো কোনো মাসে তারও কম। টিউশনিটা দরকার তাই ছাড়তেও পারি না।

ঢাকা শহরে টিউশনি জুগানোও কঠিন, টেকানো তো আরও কঠিন। কত বুয়েট-মেডিক্যাল-ঢাবির শিক্ষার্থী। এদের ভিড়ে অন্যান্য ভার্সিটির শিক্ষার্থীরা সুযোগই পায় না।
আমি যেখানেই যাই, অনেকেই বলে টিউশনি জুগাড় করে দেন। ওদের বলতেও পারি না ঢাকায় চলতে যে খরচ, আমার নিজেরই আরও টিউশনি দরকার।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০২৪ দুপুর ২:৫৯
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অল্প পুঁজিতে অত্যন্ত লাভজনক একটি ব্যবসার সন্ধান, যে কেউ চাইলে শুরু করতে পারে

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৫



কেউ একজন জানতে চেয়েছেন ১০/১২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে কিভাবে মাসে ১/২ লাখ টাকা ইনকাম করা যায়? বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করে দেখলাম বাংলাদেশে ১০/১২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনীতির পন্ডিত, ব্লগার তানভীর জুমারের পোষ্টটি পড়েন, জল্লাদ আসিফ মাহমুদ কি কি জানে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৯



সামুর রাজনীতির ডোডো পন্ডিত, ব্লগার তানভীর ১ খানা পোষ্ট প্রসব করেছেন; পোষ্টে বলছেন, ইউনুস ও পাকিসতানীদের জল্লাদ আসিফ মাহমুদ ধরণা করছে, "সেনাবাহিনী ও ব্যুরোক্রেটরা বিএনপি'কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নীল নকশার অন্ধকার রাত

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৬


কায়রোর রাস্তায় তখন শীতের হিম হাওয়া বইছিল। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। দুইটা বড় সংবাদপত্র অফিস: আল-আহরাম এবং আল-মাসরি আল-ইয়াউম—হঠাৎ করেই আগুনে জ্বলে উঠলো। কিন্তু এই আগুন কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×