
মৌচাক মোড়ে যাওয়ার পর বুঝতে পারলাম আজ (৫ মে ২০২৩) নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা। কাঁধে ঝোলানো ব্যাগে আবেদন ফর্মটা খুঁজছিলাম। সাবেক সহকর্মী সোহাগ বললেন, “এখন আর কিছু করার নেই। গতরাতে বললেও হতো।”
সত্যিই তাই। এখন আবেদন ফর্ম খুঁজে পেলেও প্রবেশপত্র তুলতে পারব না। সকাল সাড়ে ৭টা বাজে। কম্পিউটারের দোকান খোলা থাকবে না। তাছাড়া আমার কেন্দ্র পড়েছে সম্ভবত ময়মনসিংহে। যথাসময়ে সেখানে পৌঁছতে পারার কথা না।
সোহাগের কেন্দ্র মোহাম্মদপুর। তাকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে আমি মহাখালীর গাড়িতে উঠলাম। সেখান থেকে সরাসরি ময়মনসিংহের গাড়ি।
সোহাগ গাজীপুর থেকে এসেছেন। সেখানে একটা স্কুলে আমার সহকর্মী ছিলেন তিনি। ঢাকায় পরীক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে আমার এখানে রাত্রিযাপন করেছিলেন। আমার খুব আফসোস হচ্ছিল, আমি কেন রাতে তাকে জিগ্যেস করলাম না কী পরীক্ষা। আগে তো এমন হয়নি।
আমার মোবাইলে মেসেজ আসে না। জানতে পারি না কোনদিন কী পরীক্ষা। এর ওর কাছ থেকে শুনে তারপর জানতে হয়।
সারা রাস্তা অস্থিরতায় কাটল। কেন পরীক্ষাটা মিস করলাম! সেই তো ময়মনসিংহে যাচ্ছিই। আগে জানলে পরীক্ষাটা তো দিতে পারতাম।
গাজীপুর থেকে কয়েকমাস আগে বই এনেছিলাম। এখনও খুলে দেখা হয়নি। পরীক্ষা দিয়েও যে ভালো করতাম, তার সম্ভাবনা নেই। আগেও লিখিত দিয়েছি। সম্ভবত ’১৯ এ। কিন্তু কাজ হয়নি। ব্যবসায় শিক্ষায় আসনও কম।
১৩ বছর আগের কথা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা ছিল আমার। ময়মনসিংহ শহরে তখন নতুন আমি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি কোচিং করি। ফর্ম তুললাম কয়েকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের। তবে আমার বেশি পছন্দ জাহাঙ্গীরনগর। সবার লক্ষ্য থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কিন্তু আমার লক্ষ্য জাহাঙ্গীরনগর।
কারও সঙ্গে তেমন চেনাজানা নেই। কোচিং করি, বাসায় যাই। পড়ালেখা করি। মাঝেমাঝে ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে গিয়ে বসে থাকি। নদের ঢেউ দেখি। পাড় ঘেঁষে হাঁটাহাঁটি করি।
পরীক্ষার আগের দিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বড়ো ভাইকে ফোন দিলাম। জিগ্যেস করলাম, “জাহাঙ্গীরনগর যেতে কতক্ষণ লাগবে?” উনি বললেন, “সর্বোচ্চ ৩ ঘণ্টা।” তার মানে, ৯টায় গাড়িতে উঠলে ১২টার মধ্যে পৌঁছতে পারব।
খেয়েদেয়ে প্রস্তুত হয়ে গাড়িতে উঠলাম। পাক্কা ৩ ঘণ্টায় পৌঁছলাম মহাখালী। ফোন দিলাম ওই বড়ো ভাইকে। তখন ১২টা বাজে। বললাম, “ভাই, জাহাঙ্গীরনগর যাব। কতক্ষণ লাগবে?”
উনি অবাক হয়ে জানতে চাইলেন, “কোথায় তুমি?” আমি বললাম, “মহাখালী।”
উনি যা বললেন, তাতে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। পরীক্ষা নাকি হয়ে গেছে! আমি কী বলব, কী করব বুঝতে পারছিলাম না। মাটিতে বসে পড়লাম। জগতের সব ক্লান্তি আমাকে ঘিরে ধরল।
আসলে, উনি ভেবেছিলেন আমি ঢাকায় থাকি। ঢাকা থেকে হয়তো ৩ ঘণ্টাই লাগবে। আমি যে ময়মনসিংহ থেকে আসব, তা তো উনি জানতেন না। ময়মনসিংহ থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা নেমে নবীনগরের দিকে যে রাস্তাটা চলে গেছে, আমি যদি সে রাস্তা দিয়েও যেতাম, হয়তো পরীক্ষাটা দিতে পারতাম। সুযোগ পাই আর না পাই, পরীক্ষা দিয়ে তো অন্ততপক্ষে স্বস্তি পেতাম। নির্বুদ্ধিতার দরুণ ভুগতে হলো।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


