somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুধু ভালো পড়ালেই টিউশনি থাকবে; ব্যাপারটা এত সহজ না

১৫ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ৮:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ময়মনসিংহে থাকার সময় জামালপুরের এক ছেলে আমার রুমমেট ছিল। তার নাম ছিল আবু সুফিয়ান। সে এক উকিলের ছেলেকে প্রাইভেট পড়াত। এই ছেলে কীভাবে একজন উকিলের ছেলেকে পড়ায়, আমার বুঝে আসত না। কারণ, সে নিজেই বাংলা 'রিডিং' পড়তে পারত না। ইংলিশ বা গণিত কেমন পারত; সে কথা তো বলাই বাহুল্য।

একদিন জিগ্যেস করলাম, 'কেমনে কী?' সে হাসে। কিছুই বলে না।

একদিন দেখা গেল বাসার কাছে এক দোকানে বসে দোকানদারি করছে। রাতে জিগ্যেস করলাম, দোকান নিয়েছে কি না। সে জানাল, দোকানদারের ৭ম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়েকে পড়ায় সে। দোকানদার বলেছেন, সুযোগ পেলে মাঝেমধ্যে দোকানে যেন বসে।

চমৎকৃত হলাম এটা ভেবে, অন্য এলাকার একটা মানুষ কীভাবে এখানে এসে এত সহজে একটা পরিবারের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করল। পরে নিজের জন্য আফসোসও হলো, আহা আমি একটা টিউশনির খোঁজে ত্রিশাল থেকে ময়মনসিংহে এলাম, অথচ একটা টিউশনি পেলাম না। অচেনা শহরে একটা উপার্জনের রাস্তা হলো না।

কী না করলাম একটা টিউশনির জন্য। সিভি বানিয়ে কোচিং এ কোচিং এ ঘুরলাম। একে ওকে অনুরোধ করলাম একটা টিউশনি জোগাড় করে দিতে। অথচ কিছুতেই কিছু হলো না।

এক সহপাঠী একটা কোচিং এ নিয়ে গিয়েছিল। একদিন সেখানে ক্লাসও করালাম। দ্বিতীয়দিন গিয়ে শুনি, যে শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে আমি ক্লাশ করাতে গিয়েছি, উনি নাকি আবার আসবেন। কপাল পুড়ল আমার।

এক কাজিন একটা টিউশনির প্রস্তাব এনেছিল। একটা ঝামেলায় পড়ে দু'দিন পেছানোয় টিউশনিটা শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। অবশ্য শুরু করলেও পড়াতে পারতাম কি না, সে বিষয়ে সন্দেহ ছিল। টিউশনির অভিজ্ঞতা তেমন ছিল না।

ময়মনসিংহে যখন থাকা হলো না, চলে এলাম ভালুকায়। এখানে স্কুল-কোচিংয়ের পাশাপাশি টিউশনি ধরলাম একটা। প্রথমদিন গিয়ে পুরো দেড় ঘন্টা ঠিকমতো পড়ালাম। আমার ধারণা, নিজের সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করলাম। দ্বিতীয়দিন গিয়ে দেখি কেউ বাসায় নেই। ফোন দিলে অভিভাবক জানালেন, তার ছেলে স্কুলের এক শিক্ষকের কাছে পড়বে। খুব অবাক লাগল এটা ভেবে যে, এত যত্ন করে পড়ালাম; এই তার প্রতিদান!

তখন পুরোপুরি বুঝতে পারি, শুধু ভালো পড়ালেই টিউশনি থাকে; ব্যাপারটা এমন সহজ না। শিক্ষার্থীদের মনমর্জিও বুঝে চলতে হয়। এখনকার ছেলেমেয়েরা আগেরদিনের মতো নয় যে শিক্ষকের মেজাজ সহ্য করবে। শত ভালো পড়ালেও মন জুগিয়ে না চললে তারা পড়বে না। তারা স্কুল-কলেজের শিক্ষককে বদল করারও ক্ষমতা রাখে।

এরপর থেকে নিজের মধ্যে বিরাট এক পরিবর্তন চলে আসে। সব রোগের যেমন এক ওষুধ না, তেমনই সব ছাত্রকে পড়ানোর কৌশলও এক না। পড়ানোর শুরুতে ওদের মনস্তত্ত্ব বুঝতে শিখি। যারা বেশি মনোযোগী তাদের বেশি পড়ালে তেমন সমস্যা না, তবে যারা অপেক্ষাকৃত দুর্বল, অমনোযোগী, বা কম বুঝে, তাদের পর্যায় বুঝে পড়াতে শুরু করি। শুধু যে পড়াই, তা না। গল্প-গুজবও করি। এমনও হয়েছে, স্কুলে পড়ানোর সময় ক্লাসে ছেলেমেয়েদেরকে নিয়ে নাচ-গান-কবিতার আসর বসিয়েছি।

দেখা গেছে, একসময় আমি সবচেয়ে জনপ্রিয় শিক্ষকে পরিণত হয়েছি। ছেলেমেয়েরা সব শিক্ষকের কাছে, এমনকি বাড়িতে গিয়েও অভিভাবকগণের কাছে আমার গল্প করে। যারা নিন্দে করত, তারা দেখত আমার বিষয়ে ছেলেমেয়েরা ভালোও করত। সুতরাং, তারা অভিযোগ করতে পারত না যে আমার বিষয়ে পড়ালেখা কম হয়।

আরও একটা বিষয় অভিভাবকগণের মনমর্জি। অফিস আদালতে কাজ করলে যেমন বসের মনমর্জি বুঝতে হয় (যদিও অনেক বস আর সবকিছু এড়িয়ে শুধু কাজটাকেই প্রাধান্য দেন। তাদের হিসেব ভিন্ন।)। অভিভাবকগণকে যদি অবহিত করা যায় যে ভালো পড়ানো হচ্ছে, তাহলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ কিছু ক্ষেত্রে সামলানো যায়। অনেক শিক্ষক অভিযোগ করেন অভিভাবকগণ সামনে থাকলে পড়াতে সমস্যা। অথচ আমি খুব স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতাম অভিভাবকদের সামনে পড়াতে। একসময় একজন যখন উকিলের ছেলেকে পড়াত, নিজেকে অক্ষম মনে হতো। অথচ একদিন আমি নিজেও বহু পুলিশ, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারের সন্তানকে পড়িয়েছি। আমাকে পছন্দ করেছে সবাই।

ক্ষুদ্র জ্ঞানে এতটুকু বুঝেছি, কাজের ব্যাপারে সৎ থাকলে আর কী করছি সেটার যথাযথ জবাবদিহিতা করতে পারলে তেমন সমস্যা হয় না। অফিস পলিটিক্স বা অভিভাবকগদের কূটনীতি; এসবের হিসেব অবশ্য আলাদা। অনেকসময় শত ভালো করলেও কারও কারও চক্ষুশূল হতে হয়।

ছবিঃ ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ৮:২৫
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরিবি

লিখেছেন মৌন পাঠক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ৯:২১


চিত্রঃ অন্তর্জাল

গরিবি বা ফকিন্নি ও সেল করা যায়,
উহারে এনক্যাশ করা যায়।

সেই এনক্যাশমেন্টটা গরিব নিজেও সেল করতে পারে, আবার তার গরিবানারে অন্য কেউও এনক্যাশ করতে পারে।

দেশের সিংহভাগ এতিমখানা মাদ্রাসা এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

হেলুসিনেশন। চ্যাপ্টার ৮

লিখেছেন স্প্যানকড, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:৩৪

ছবি নেট ।

এ তুমি কি সেই তুমি?
যাকে খুঁজি দিবানিশি
এ তুমি কি সেই তুমি?
যার জন্য নিজেকে
খতম করতে রাজি।

এ তুমি কি সেই তুমি?
যার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কবিতা

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:৪২

"শেষ অধ্যায়"

তুমি আমায় দেবতাদের দেয়া
অভিশপ্ত সিসিফাস ভেবোনা,
আসলে আমি হই, জলন্ত কোনো অগ্নিকুণ্ড,
অথবা ভালোবাসার দুরন্ত কোনো
এক দুর্বাঘাস।

যেখানে তুমি নিশ্চেন্তে মুখ ডুবিয়ে
শ্বাস নিতে পার। অথবা তুমি
জানই না,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ প্লিজ বলে না, ধন্যবাদ বলে না, সরিও বলে না। ***************************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:১৫

আমাদের দেশের মানুষের খুব কমন একটি বিষয় একটু খেয়াল করলেই যে কারো চোখে পরে। আমাদের দেশের মানুষ পারতপক্ষে প্লিজ, সরি, ধন্যবাদ এই জাতীয় শিষ্টাচার বা এটিকেট (Etiquette) সমৃদ্ধ শব্দগুলোর ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন

হ্যালোকাহিনী :) The HELLO Story

লিখেছেন আফলাতুন হায়দার চৌধুরী, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৫:৪৬

আমরা ফোন বাজলে প্রথমে বলি হ্যালো। প্রশ্ন হল হ্যালো আসলে কি?

কিছু মানুষ বিশ্বাস করতো হ্যালো হলেন টেলিফোনের আবিষ্কারক বিখ্যাত বিজ্ঞানী আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেল এর প্রেমিকা। এই নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×