somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মৃত্যুকে এড়িয়ে যাওয়ার সাধ্য কার?

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১০:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


'পথের পাঁচালী' চলচ্চিত্রটা দেখার পর দুর্গার জন্য মন খারাপ হয়নি; এমন মানুষ হয়তো নেই। 'পথের পাঁচালী' উপন্যাস হিসেবে যেমন মাস্টারপিস, চলচ্চিত্র হিসেবেও কম যায় না; এটা নিশ্চিত স্বীকৃত। অস্কারপ্রাপ্তি অন্তত তাই বলে। চলচ্চিত্রটা দেখার পর পরবর্তী সিরিজ 'অপরাজিত' আর 'অপুর সংসার' দেখা হয়নি। যদিও অপুর, তার মা-বাবার কী হয়েছিল, সেটা জানার আগ্রহ সবসময় ছিল।

এরমধ্যে একদিন হুট করে বসেই পড়লাম 'অপরাজিত' দেখতে। 'পথের পাঁচালী'তে যেমন অপু-দুর্গার শিশুকাল দেখানো হয়েছে, 'অপরাজিত'তে দেখানো হয়েছে তার কৈশোরের বেড়ে ওঠার ঘটনাবলি। বাবার মৃত্যুর পর সংসারে টানাপোড়েন। মায়ের অসহায়ত্ব। মায়ের সাথে মায়ের জ্যাঠার বাসায় চলে আসা। সেখানে বাবার পেশা পুরুতগিরি করা যে কাউকেই মুগ্ধ করবে।

অপুর স্কুলে ভর্তি হওয়া এবং ভালো ফল করা সবাইকে খুশি করলেও মাকে একা রেখে কলকাতায় চলে যাওয়া ব্যথিত করেছে। তবে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্য অন্য উপায় তো ছিল না। পুরুতগিরি করে তো জীবন পার করে দেওয়া যেত না।

স্কুলের প্রধান শিক্ষকের আনুকুল্যে কলকাতায় গিয়ে আশ্রয় নিয়ে কাজ করে পড়ালেখা চালানো বেশ কষ্টসাধ্য ছিল। তবে অপু তার কাজ ভালো মতোই করেছে। যদিও তার মায়ের সাথে যোগাযোগ কমে গিয়েছিল। সে খুব কমই বাড়িতে আসতে পেরেছে।

অসহায় মা দিনের পর দিন তার আশায় থেকেছেন। শেষে বড়ো অসুখ হওয়া সত্ত্বেও অভিমানে ছেলেকে না জানানোটা মনে দাগ কেটেছে। আর তার মৃত্যুর পর অপু যখন বাড়ি এসে দেখে বাড়িটা পুরো বিরানভূমি, তখন এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

চলচ্চিত্রটা দেখে প্রচণ্ড মন খারাপ হয়। শুয়ে এটাসেটা ভাবছিলাম। রাত এগারোটা বাজছিল তখন। এরমধ্যে বাড়ি থেকে ফোন এল। জানানো হলো আমার এক কাকা মারা গেছেন। মন খারাপের মাত্রাটা আরও বাড়ল।

গতমাসের মাঝামাঝি একবার বাড়ি যেতে চেয়েছিলাম। এ মাসের ২ তারিখ একটা পরীক্ষা ছিল। ভাবছিলাম একবারেই যাই। টানাপোড়েনের মাঝে কিছু টাকা বাঁচুক। এমন ঘটনা যে ঘটে যাবে কে জানত? বিকেলেও যদি অবস্থা আঁচ করতে পারতাম, চলে যাওয়া যেত।

যাহোক, ভোরে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। সাড়ে ১০টা বাজল যেতে যেতে। গিয়ে দেখি বাড়িতে কান্নাকাটি করে সবাই অস্থির। মনটাকে স্থির করে কাকী আর কাকাত বোনকে সান্ত্বনা দিলাম। ফোনে প্রবাসী কাকাত ভাইকেও বললাম ধৈর্য ধারণ করতে। ২০-২২ বছরের একটা ছেলে তার কি এত বুঝ আছে? বাবা সারাজীবন কষ্ট করেছে। ছেলেটা চেয়েছিল বাবা-মার দুঃখ মোচন করতে। করেছেও অনেকটা। অনেক চিকিৎসাও করিয়েছে। এখন আর কিছু করার ছিল না। কিডনি দুটোই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। শরীর ফুলে যেত। গলা দিয়ে রক্ত আসত। শুরু থেকে চিকিৎসা করার সুযোগ থাকলে হয়তো বেঁচে যেতেন, কিন্তু আমার বাবা-কাকারা বরাবরই গোয়ার্তমি করতেন। নিজেদের শরীরের ব্যাপারে বরাবরই তারা উদাসীন। বাবা-কাকারা ৭ জন। এক কাকা (পঞ্চম) মারা গেলেন। বাকি রইল ৬। আমার বাবাও মৃত্যুপথযাত্রী।

সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে কাকাকে অন্তিমশয্যায় শায়িত করে ভাবলাম কাকাত ভাইকে একটা ফোন দিই। ২ দিন ধরে সে ঘুমহীন, নাওয়া-খাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছে। বললাম, কিছু একটা খা। সবাই মরলে তো হবে না। সে যখন আফসোসের স্বরে বলে, বাবাকে শেষবারের মতো দেখতে পেলাম না। আমি বলি, তুই তো সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিস ভালো করতে। দেশে থাকলে এত টাকা তো পেতি না চিকিৎসার। সান্ত্বনা এটাই যে, শেষ চেষ্টাটুকু করতে পেরেছিস। আর আমি তো...

ঢাকায় ফেরার সময় মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যখন বাবার কাছে গেলাম, বারবার মনে হচ্ছিল এ দেখাই শেষ দেখা নয়তো?

ছবি: অন্তর্জাল
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:১৯
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

×