একটা গল্প প্রচলিত আছে এমন: রমজান মাসে বাংলাদেশে বেড়াতে এলেন উত্তর কোরিয়ার এক নাগরিক। কোনো এক রোজাদারকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনারা সারাদিন না খেয়ে থাকেন কেন?
উত্তরে রোজাদার বললেন, আমরা স্রষ্টার সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখি।
কোরিয়ান জানতে চাইলেন, গোপনে কিছু খেয়ে নিলেই তো পারেন। উপোস করার দরকার কী?
রোজাদার বললেন, স্রষ্টা সর্বত্র বিরাজমান। তিনি সবই দেখেন।
কোরিয়ান বিস্ময়াভিভূত হয়ে বললেন, তাহলে তো আপনাদের দেশে নিশ্চয়ই খুন-খারাবি, চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই কিছুই হয় না?
আমি জানি না এরপর বাঙালি রোজাদারের উত্তর কী ছিল। গত রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চোর সন্দেহে একজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা প্রকাশ্যে এলে আমার কাছে মনে হলো- এই দেশে মনে হয় চুরি-ডাকাতি বলতে কিছু নেই। এমন কিছু করলেই হিসাব বুঝিয়ে দেওয়া হয়। আসলেই কি তাই?
আমরা তো দেখেছি এ দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে বিগত বছরগুলোতে। দেশের বড় বড় প্রকল্পগুলোতে দুর্নীতি আর দুর্নীতি। এমন কোনো খাত আছে যেখানে দুর্নীতি নেই? যারা এহেন কর্মে জড়িত, তাদের টিকিটিও তো ছুঁতে পারে না এই তথাকথিত সচেতন জনতা। অনেককে তো দেখা গেছে বড় বড় চোরদের সঙ্গে ছবি তুলতে। তবে কি এদের আক্রোশ শুধু ছিঁচকে চোরদের প্রতি? বড় চোরেরা এদের কাছে পূজনীয়?
এতদিন দেখে এসেছি পড়ালেখা না জানা, মুটে, মজুরেরা চোরদের গণধোলাই দিয়ে মেরে ফেলত। এরা তো আইন-কানুন জানত না। অথচ যারা গতকাল ঘৃণ্য কাজটা করল, তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। যারা নিজেদের দেশের সবচেয়ে মেধাবী দাবি করে। যত বড় অপরাধীই হোক, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। এ বোধ কি মেধাবীদের ছিল না?
জানা গেছে, নিহত তোফাজ্জল হোসেন পাথরঘাটার তালুকের চরদুয়ানী গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে। তিনি কাঠালতলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে প্রেমসংক্রান্ত একটি বিষয় নিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। এর কিছুদিনের মধ্যেই তার বাবা সড়ক দুর্ঘটনায় এবং মা ও একমাত্র বড় ভাই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার পরিবারের কোনো সদস্য জীবিত নেই।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টার দিকে তার বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে ফজলুল হক মুসলিম হলে প্রবেশ করেন। ওই সময় চোর সন্দেহে তাকে আটক করে শিক্ষার্থীরা। পরে রাত ১০টার দিকে হলের গেস্ট রুমে কয়েক দফা মারধর করা হয়। একপর্যায়ে ক্যান্টিনে বসিয়ে ভাতও খাওয়ানো হয়। তারপর পুনরায় মারধর করা হয়।
দীর্ঘ সময় মারধরের ফলে তার অবস্থার অবনতি ঘটে। গুরুতর অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এমন একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষকে যারা মারল, তাদের বিবেক কী বলে? তারা কি কখনও নিজেদের ক্ষমা করতে পারবে?
ছবি: ফেসবুক
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:২২