somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আনুকুল্য (কিঞ্চিৎ রম্য)

২০ শে জুলাই, ২০২৫ রাত ১০:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অফিসে নওগাঁর এক ভদ্রলোক আছে, তার কাজের কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। বন্ধের দিন যেখানে বউকে সময় দেবে, মা-বাবাকে সময় দেবে, দেখা যায় এদিনও সে বন্ধুদের নিয়ে দেশ উদ্ধারে নেমে যায়। এই পার্টি ওই পার্টি- একটা না একটা আছেই। দেখা গেল আমার বন্ধের দিনও সে মেরে দেয়। পরে অন্য সময় আমার বন্ধ নিতে হয়।

প্রথম দিকে অনেক সুযোগ দিলেও এখন আর দেই না। সরলতাকে দুর্বলতা হিসেবে নিয়েছে। তাই বলি, দরকার আমারও আছে। এ কারণে দেখি মাঝেমধ্যে আমার ওপর রাগ করে থাকে। আমি পাত্তা দেই না। তার তো আর খাই বা পরি না। এত গুরুত্ব দেওয়ার কী আছে?

যাহোক, সে কিন্তু কাজে ফাঁকি দেয় খুব। অফিসে ৮ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে এক ঘণ্টা স্থির হয়ে বসে থাকে না। এই সিগারেট খেতে যায়, এই ক্যান্টিনে যায়। এটা-ওটা আছেই। আর সময় মতো তো অফিসে আসেই না।

এই যে এত ফাঁকিঝুঁকি দেয়, তাও কেউ কিছু বলে না। কেন বলে না, কারণটা ঠিক জানি না। তবে কর্তৃপক্ষের সাথে তার খুব খাতির। একসাথে সিগারেট খায়। অফিস শেষে আড্ডা দেয়। আর তৈলমর্দন তো আছেই। আমি আবার এসব পারি না। অফিসে আসি, চুপচাপ কাজকর্ম করি, দরকার পড়লে হয়তো আলাপসালাপ করি। অতঃপর চলে আসি।

এই অফিসে আরও অনেকেই আছে যারা চাকরি ছাড়ার নাম নেয় না। বছরের পর বছর এখানেই পড়ে আছে। সবার তো চেষ্টা থাকে ভালো বেতনে অন্য কোথাও যাওয়ার, আমি নিজেও চেষ্টা করি। অথচ এখানকার কেউ চেষ্টাই করে না। একেকজন সাত-আট বছর ধরে থেকে নিজের বাড়ির মতো করে ফেলছে।

আমি আসলে কোনো কাজেই আনুকুল্য পাই না। কোথাও কখনও পাইওনি। পাব কেমনে? তোষামোদি তো করতে পারি না। খেজুরে আলাপও করতে পারি না। নিজের সীমাবদ্ধতা বুঝি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। মরি স্বভাব তো যাবে না

জীবনে একবারই আনুকুল্য পেয়েছিলাম। সে ঘটনাই বলব এখানে।

বোর্ডিংয়ে বসবাসের স্মৃতি

আরও প্রায় বিশ বছর আগের কথা। তখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়তাম। পরীক্ষায় ভালো করার উদ্দেশ্যে ঠিকমতো পড়ালেখা করতে উঠলাম বোর্ডিংয়ে। এলাকায় তখন বিদ্যুৎ ছিল না। হারিকেন জ্বালিয়ে রাতে পড়ালেখা করতাম আমরা।

করোসিন কিনে আনি। কিন্তু জায়গামতো থাকে না। কে জানি নিজের মনে করে নিয়ে যায়। ভারি বিপদ! বাপের অঢেল টাকাও নেই যে বিলাব। কী করি, কী করি নানান কথা ভাবছিলাম।

হঠাৎ মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপল। যা ভাবা, তাই কাজ।

রাতের বেলা সালিশ বসল। অপরাধ গুরুতর। কী অপরাধ? কেরোসিনের বোতলে প্রশ্রাব ভরে রেখেছে। কে করেছে এই কাজ?

দশম শ্রেণির বড় ভাইদের পাশে বসা ছিলাম। এক ভাইকে বললাম, কাজ তো আমি করছি। এখন কী হবে?

বড় ভাইয়েরা আমার মেজো বোনের সহপাঠী। আমাকে স্নেহ করতেন। একজন বললেন, স্বীকার করো। এর পর চুপ করে বসে থাকো। যা করার আমরা করছি।

ভয়ে ভয়ে আমি হাত উঠিয়ে বললাম, আমি করেছি।

শিক্ষকগণ তো মহা ক্ষ্যাপা। আজকে আমার খবর আছে। বড় ভাইয়েরা বললেন, রাতের বেলা ওর প্রশ্রাব চেপেছিল। একা বের হতে ভয় পাচ্ছিল। তাই ঘরেই বোতলে কাজ সেরে ফেলছে।

আমি চুপিচুপি বললাম, ভাই, আমি তো তেল চুরির প্রতিশোধ নিতে এই কাজ করেছি। মিথ্যে হয়ে গেল না?

একজন বললেন, চুপ যাও। এটা বললে পিটিয়ে পাছা লাল করে ফেলবে।

আমি চুপ। বড় ভাইদের আনুকুল্যে মুগ্ধ হলাম। এমন আনুকুল্য কেবল আর একজনই আমাকে দিতেন। তিনি আমার বড়ো বোন

আজকাল অনেক পাতি নেতা শত অপকর্ম করে পার পেয়ে যায়। লোকজন দেখি তাদের সাফাইও গায়। যদিও বিরোধীদের সামান্য বিষয়কেও অসামান্য করে তোলে। অনেকে কাজে ফাঁকি দিয়েও পদোন্নতি পায়। প্রশংসিত হয়। আমি মাঝেমাঝে ভাবি এমন আনুকুল্য আমি পেলে জীবনে হয়তো ভালো কিছু করতে পারতাম।

জীবনে না পারলাম তোষামোদি করতে, না পেলাম আনুকুল্য। আফসোসে কেটে গেল জীবন।

ছবিঃ ইন্টারনেট





সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০২৫ সকাল ১১:৫৭
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×