প্রযুক্তির আশীর্বাদে ও ক্রমবর্ধমান প্রয়োজনের তাগিদে আমরা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছি। আমাদের এই চাহিদা মিটাতে আকাশে উড়োজাহাজের ভিড় বেড়েই চলেছে। আমরা যারা উড়োজাহাজের যাত্রী তাদেরও উড়োজাহাজ ও এয়ারলাইন্স সম্পর্কে বিস্তারিত অনেক বিষয় জানা হয়ে উঠে না। আসুন আমরা জেনে নেই এই উড়াল যন্ত্র উড়োজাহাজের ভ্রমণের পিছনের মহাযজ্ঞের কিছু কথা।

বিমান যাত্রা-টেকঅফ টু ল্যান্ডিং-১ম পর্ব ।
view this link
তারপর....
(২) আরোহন (Boarding):
বোর্ডিং গেট থেকে বোর্ডিং ব্রিজ পর্যন্ত যাত্রীরা পৌছানো সময়টুকুর মধ্যেও চলতে থাকে অনেক কাজ, যা একজন যাত্রীর পক্ষে দেখা সম্ভব হয় না। এই সময়ের মধ্যে শুধু উড়োজাহজটি প্রস্তুত করাই নয়, তার পেছনেও অনেক কাজ সংঘটিত হয়। ধাপে ধাপে বিমান সংস্থার কর্মীরা সঠিক সময়ে উড়োজাহাজের ডিপার্চার দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যান। এই সময়টি যেহেতু অনেক মূল্যবান, তাই প্রতিটি ধাপ সুচারুরূপে সম্পন্ন করার জন্য বিশেষ নজর দেওয়া হয়। তথাপিও যথাসময়ে ডিপার্চার দেওয়া সম্ভব হয়ে উঠে না। যেমন, হঠাৎ কোন যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পরল বা যাত্রীদের কেবিনে কোন মেরামতের দরকার পড়ল। তখন এই স্বল্প সময়ে দ্রুত রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। আবার এই রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ক্লিনারদের কাজ আটকে যেতে পারে। তাতেও বিলম্বিত হতে পারে ফ্লাইট ডিপার্চারের সময়সুচী।

এই পর্যায়ে এমন অনেক পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে বা এমন কোন ঘটনা ঘটতে পারে যা আপনার ফ্লাইটকে বিলম্বিত এমনকি বাতিলও করতে হতে পারে। এই স্বল্প পরিসরে তা বর্ণনা করা অসম্ভব। তবে এই পরিস্থিতিতে এয়ারলাইন্স কর্মীদের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে দ্রুত অনেক সমস্যার সমাধান করে সিডিউল মত ফ্লাইট ডিপার্চার অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয়, যার পূরটাই থাকে পর্দার আড়ালে। এক্ষেত্রে অন্যান্য এয়ারলাইন্স কর্মীদের সহযোগীতোয় একজন ক্যাপ্টেন মুখ্য সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করে থাকেন এবং বিমান যাত্রা বিলম্বের হার অনেকাংশে কমিয়ে আনতে সক্ষম হন।
(৩) যাত্রা শুরু(Taxi-out)( একটি উড়োজাহাজ বোর্ডিং ব্রিজ থেকে টেকঅফের আগ পর্যন্ত সময়কে ট্যাক্সি আউট বলা হয়):

ট্যাক্সি আউট পর্যায়ে ককপিট এবং কেবিন সংক্রান্ত অনেক কাজ সম্পন্ন করা হয়। ফ্লাইট । এ্যাটেনডেন্টরা নিশ্চিত করেন যে, কেবিন টেকঅফের জন্য সম্পূর্ন প্রস্তুত এবং ইমার্জেন্সি ব্রিফিং সম্পন্ন হয়েছে কিনা।। এরপর পাইলট ইঞ্জিনগুলি চালু করেন এবং ট্যাক্সি করার অনুমতি চান টা্ওয়ারের কাছে।। যদিও মনে রা হতে পারে যে এটি একটি ফ্লাইটের অপেক্ষাকৃত সহজ পর্যায়, কিন্তু বিশেষ করে যখন বিমানটি একটি খুব ব্যস্ত এয়ারপোর্টে থাকে, আসে পাশে অনেক বিমান চালাচল করে, এমনকি দৃশ্যমানতাও অনেকসময় কমে যায়। এই সময় পাইলট কেবল ট্যাক্সি করার কাজে বেশি যত্নবান থাকেন এবং তার পক্ষে ফার্স্ট অফিসার ট্যাক্সি চেকলিস্ট" সম্পাদনে সহায়তা করেন।
(৪) উড্ডয়ন-প্রস্থান(Take-off/Departure):

একটি ফ্লাইটের টেকঅফ-ডিপার্চার ধাপটি নিরাপত্তার দিক থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । তাই এ সময় পাইলট যতদূর সম্ভব অনুমোদিত ত্রুটির ব্যাপারে খুবই সজাগ থাকেন। এজন্য পাইলট প্রশিক্ষণকালীন সময়ে এধাপটি খুটিয়ে খুটিয়ে বিশ্লেষণ করা হয় এবং সে অনুযায়ী পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এই প্রশিক্ষণ পর্বটিকে "V1(vee-1)cut" বলা হয়। সময় এবং গতি বিবেচনা করে সঠিক দিক বজায় রেখে বিমানটিকে ভূমি থেকে আকাশে উড়ানো এবং সেই সাথে ইমারজেন্সি চেকলিস্ট অনুসরণ করা প্রশিক্ষনের অন্যতম অংশ।
(৫) যাত্রা পথ (Enroute):

একটি বিমানের উড্ডয়নকালীন সময় থেকে ল্যান্ডিং পর্বের আগ পর্যন্ত যাত্রা পথের মূল সময়টিই হল এনরুট(Enroute) পর্ব। এই পর্বে পাইলট ফ্লাইট প্ল্যান অনুযায়ী নির্ধারিত উচ্চতা বজায় রেখে বিমানটিকে নির্ধারিত গন্তব্যের দিকে নিয়ে যান। বিমান যাত্রায় দূরত্ব অনুযায়ী মূল সময় এই পর্বে ব্যয় হয়। চূড়ান্ত উচ্চতায় যাওয়ার পর পাইলট এবং ফ্লাইট এ্যাটেনডেন্টদের অনেক কাজ করতে হয়। যাত্রীদের আপ্যায়নের ব্যবস্থাও এই পর্বে সম্পন্ন হয়।
(৬) অবতরণ প্রস্তুতি ও অবতরণ(Approach-Landing):

অবশেষে আপনার গন্তব্যের কাছাকাছি ধাপটি হল আপনার ফ্লাইটের Approach-Landing পর্যায়। এই ধাপে পাইলটের চাপ নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়। এই ধাপে পাইলট এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা অনুযায়ী বিমানটিকে তার জন্য নির্ধারিত রানওয়েতে অবতরনের সকল কর্মকান্ড শেষ করে নিরাপদে অবতরণ করেন। ফ্লাইট এ্যাটেনডেন্টরা অবতরণ জন্য কেবিন প্রস্তুত করেন ও যাত্রীদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেন। ।
(৭) যাত্রা শেষ (Taxi-in):

এই ধাপে পাইলট বিমানটিকে তার জন্য নির্ধারিত গেটে ট্যাক্সি করেন এবং যাত্রীদের আগমন প্রস্তুতি ও প্রয়োজনীয় কাজে নিয়োজিত কর্মচারীদের উপস্থিত নিশ্চিত করার জন্য রেডিও যোগাযোগ সম্পন্ন করেন। পাইলট ট্যাক্সি করার সময় অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পাশে অবস্থিত অন্যান্য উড়োজাহাজ ও যন্ত্রপাতি লক্ষ্য রেখে বিমানটিকে নিরাপদে গেইটে নিয়ে যান। ফ্লাইট এ্যাটেনডেন্টরা যাত্রীদের বিমান থেকে নির্গমনে সহায়তা করেন।
আর এভাবেই সম্পন্ন হয় একটি বিমানের যাত্রা পথ।
সকলের বিমান যাত্রা শুভ হোক, নিরাপদ হোক।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:০৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




