somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিমান যাত্রা-টেকঅফ টু ল্যান্ডিং-১ম পর্ব

১১ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রযুক্তির আশীর্বাদে ও ক্রমবর্ধমান প্রয়োজনের তাগিদে আমরা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছি। আমাদের এই চাহিদা মিটাতে আকাশে উড়োজাহাজের ভিড় বেড়েই চলেছে। আমরা যারা উড়োজাহাজের যাত্রী তাদেরও উড়োজাহাজ ও এয়ারলাইন্স সম্পর্কে বিস্তারিত অনেক বিষয় জানা হয়ে উঠে না। আসুন আমরা জেনে নেই এই উড়াল যন্ত্র উড়োজাহাজ যাত্রার মহাযজ্ঞের ধারাবাহিক কিছু কথা ও উড়োজাহাজে ভ্রমণের প্রয়োজনীয় সাধারণ তথ্য যা আপনার উড়োজাহাজে ভ্রমণ সহায়ক হতে পারে। যারা উড়োজাহাজ সংক্রান্ত তথ্য জানতে আগ্রহী তাদের জন্যও হয়ত সহায়ক হবে।
প্রথমেই বলে রাখা ভাল যে, এই পোষ্টে সকল বর্ণনা সাধারণ ও প্রচলিত যন্ত্রাংশের এবং প্রচলিত পদ্ধতির বর্ণনা করা হয়েছে যা নির্দিষ্ট কোন উড়োজাহাজের সাথে এবং পাইলটের নির্দিষ্ট কোন পদ্ধতির সাথে নাও মিলতে পারে। কারণ প্রতিটি উড়োজাহাজের ধরন, পরিচালনা এবং রক্ষনাবেক্ষনের জন্য আছে কিছু নিজস্ব পদ্ধতি ।



উড়োজাহাজের একটি সাধারণ ফ্লাইট সাতটি পর্যায়ে যাত্রা সম্পন্ন করে থাকে। পর্যায়গুলি হল:

১। যাত্রাপূর্ব প্রস্ততি(Pre-flight)
২। আরোহন (Boarding)
৩। যাত্রা শুরু(Taxi-out)
৪। উড্ডয়ন-প্রস্থান(Take-off/Departure)
৫। যাত্রা পথ (Enroute)
৬। অবতরণ প্রস্তুতি ও অবতরণ(Approach-Landing)
৭। যাত্রা শেষ (Taxi-in)


১। যাত্রাপূর্ব প্রস্ততি(Pre-flight):

এই পর্যায়ে রক্ষনাবেক্ষন প্রকৌশলী, সংশ্লিষ্ট কর্মী, পাইলট এবং কেবিন ক্রু সকলেই ফ্লাইটের জন্য নির্ধারিত উড়োজাহাজটিকে ভ্রমন উপযোগী করার জন্য যা যা প্রয়োজন তার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। সঠিক সময়ে ও নিরাপদে উড়োজাহাজটি যাতে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যেতে পারে তার সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহন করেন।


যখন উড়োজাহাজ রক্ষনাবেক্ষন প্রকৌশলীরা উড়োজাহাজটিকে উড্ডয়নক্ষম ঘোষণা করেন এই সময় প্রি-ফ্লাইট চেকলিস্ট(উড়োজাহাজ প্রস্তুতকারী সংস্থা ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত)অনুযায়ী ককপিটে পাইলট নেভিগেশন ও কমুনিকেশন, বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা, অক্সিজেন ব্যবস্থা ইত্যাদি সমস্ত কিছু চেকলিস্ট অনুযায়ী পরীক্ষা করে দেখেন। অপর একজন পাইলট উড়োজাহাজের বাইরের নিয়ন্ত্রণকারী অংশগুলি নিরীক্ষণ করেন যেমন ডানা ও এর বিভিন্ন অংশ, ইঞ্জিন, উড়োজাহাজের বাইরের সম্পুর্ন অংশ এবং ল্যান্ডিং গিয়ার পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা করে নিশ্চিত করেন। কেবিনের ভিতরে কেবিন ক্রুরা জরুরী যন্ত্রপাতি, যাত্রীদের প্রয়োজনীয় সকল কিছু ও খাবার সংরক্ষণ করেন।

(ক) উড়োজাহাজের জ্বালানী তেলঃ
আপনার ফ্লাইটটি যাত্রার আগে যে সব কাজ সম্পন্ন করতে হয় তার মধ্যে উড়োজাহাজের জ্বালানী সংগ্রহ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।


ফ্লাইট ডিসপ্যাচার প্রথমে ফ্লাইট প্ল্যান অনুযায়ী প্রয়োজনীয় জ্বালানী তেলের পরিমান নির্ধারণ করেন। পরে ঐ ফ্লাইটের ক্যাপ্টেন একমত হলে(প্রয়োজনে কিছু পরিমান বৃদ্ধি করলে) একটি ফুয়েল সার্ভিস ফরম(ফুয়েল স্লিপ) তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানে প্রেরণ করা হয় এবং সেই অনুযায়ী উড়োজাহাজে জ্বালানী তেল সরবরাহ করা হয়।

এই স্লিপে ফ্লাইট নম্বর, উড়োজাহাজের রেজিঃ নম্বর এবং তারিখ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। জ্বালানী তেল সংক্রান্ত কোন সমস্যা যাত্রার আগেই মিটিয়ে ফেলা হয়। উড়োজাহাজের প্রধান দরজা বন্ধের আগেই এই স্লিপ পাইলটের হাতে আসতে হয়। কেননা এটি ফ্লাইট সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল।

(খ)ফ্লাইট পরিকল্পনাঃ(Flight Plan)


উড়োজাহাজের প্রতিটি ফ্লাইটের জন্য একটি ফ্লাইট প্ল্যান অতি আবশ্যক। ফ্লাইট প্ল্যান প্রস্তুত করতে অনেক গুলি বিষয় বিবেচনা করা হয় যেমনঃ যাত্রা শুরু, গন্তব্য, যাত্রা পথের আবহাওয়া, শিডিউল ফ্লাইট টাইম, যাত্রাপথ, প্রয়োজনীয় জ্বালানীর পরিমান, উড়োজাহাজের ওজন, উচ্চতার সাথে বাতাসের গতিবেগ এবং যে কোন রক্ষনাবেক্ষন যা উড়োজাহজের পরিচালনায় প্রভাবিত করতে পারে ইত্যাদি। এই ফ্লাইট প্ল্যান ৩০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। উড়োজাহাজের ক্যাপ্টেন এই ফ্লাইট প্ল্যানটি ফ্লাইট ডিসপ্যাচারের কাছ থেকে বুঝে নেন এবং তিনি এই উড়োজাহাজটির সার্বিক দায়িত্ব গ্রহন করে ডিসপ্যাচ রিলিজে স্বাক্ষর করেন।


(গ)ক্রু-নির্দেশনাঃ
যাত্রা শুরুর প্রাক্কালে উড়োজাহাজের ক্যাপ্টেন কেবিন ক্রু ও ককপিট ক্রুদের নিম্নলিখিত বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করে থাকেনঃ



১) প্রত্যেকের পরিচিতি
২) যাত্রার সময়সূচী
৩) কি ধরনের প্রতিকূল আবহাওয়ার সম্মুখীন হতে পারে
৪) জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম
৫) কোন ধরনের রক্ষনাবেক্ষন(কেবিন/উড়োজাহাজের) যা ফ্লাইটকে বিঘ্নিত করতে পারে
৬) ফ্লাইট ডেক প্রবেশের নিয়ম-কানুন
৭) নিরাপত্তা বিষয়ক নির্দেশনা (যদি থাকে)
৮) ফ্লাইট বাতিল হলে কিভাবে যাত্রীদের উড়োজাহাজ থেকে বাহিরে আনা যায়
৯) ফ্লাইটটি সম্পর্কে বা কোন বিষয় দৃষ্টিগোচর হলে
১০) জরুরী অবস্থায় কি কি করতে হবে
১১) ডিপার্চার/এরাইভালে উড়োজাহাজ পরিচালনা নির্দেশনা
১২) গন্তব্যের আবহাওয়া,
১৩) গো-এরাউন্ড প্রক্রিয়া, ইত্যাদি।

(ঘ) পিটট-স্ট্যাটিক সিস্টেমঃ


উড়োজাহাজের মৌলিক ফ্লাইট সিস্টেমগুলির একটি হল পিটট-স্ট্যাটিক সিস্টেম। এই সিস্টেমের তিনটি মৌলিক যন্ত্রগুলি হল এয়ারস্পিড ইন্ডিকেটর, ভার্টিকেল স্পীড ইন্ডিকেটর এবং অল্টিমিটার যারা বাতাসের চাপের পার্থক্য নিরূপন করে প্রয়োজনীয় তথ্য নির্দেশ করে। প্রায় সব উড়োজাহাজে এই সিস্টেম বিদ্যমান। পিটট সিস্টেমের ডাটা গুলি সকল বানিজ্যিক উড়োজাহাজে ব্যবহৃত এয়ার ডাটা কম্পিউটার, এয়ার ডাটা ইনার্সিয়াল রেফারেন্স সিস্টেম এবং অন্যান্য সিস্টেম যেমন কেবিন প্রেশারাইজেশন সিস্টেম এবং গ্রাউন্ড প্রক্সিমিটি ওয়ার্নিং সিস্টেমেও ব্যবহার করা হয়। তাই এই সিস্টেমটি অতি গুরুত্বপূর্ণ।
উড়োজাহাজের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থিত টিউব এবং স্ট্যাটিক পোর্টের মাধ্যমে পিটট সিস্টেমে বাতাস প্রবেশ করানো হয়। যদি কোন কারণে তা বাধাগ্রস্ত হয় তবে ত্রুটিপূর্ণ তথ্যের কারণে ঘটতে পারে মারাত্মক দূর্ঘটনা। তাই উড়োজাহাজের পাইলট এবং প্রকৌশলী যাত্রার আগে ভাল ভাবে এই বিষয় গুলি পর্যবেক্ষন ও নিশ্চিত করেন।

(ঙ)অক্সিজেন সিস্টেমঃ


বানিজ্যিক উড়োজাহাজের জরুরী অক্সিজেন সিস্টেমে রয়েছে প্যাসেন্জার, ফ্লাইট ক্রু এবং পোর্টেবল অক্সিজেন সিস্টেম। ভিন্ন ভিন্ন ভাবে এই তিন সিস্টেমে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়। যাত্রার পূর্বে এই জরুরী অক্সিজেন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রকৌশলী এবং পাইলটের দায়িত্ব।

এছাড়াও প্রয়োজনীয় অনেকগুলি ধাপ পেরিয়ে উড়োজাহাজের যাত্রাপূর্ব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয় যা এই সল্প পরিসরে বর্ণনা করা সম্ভব নয়।

যাত্রাপূর্ব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে যাত্রীদের উড়োজাহাজে আরোহনের ঘোষনা দেওয়া হয়।

বিমান যাত্রা-টেকঅফ টু ল্যান্ডিং পর্ব-২।
view this link
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:১৩
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×