somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আপন শহরে ফেরা

২৬ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আপন শহরে ফেরা ( কাল্পনিক )

অনেকদিন পর ফরিদপুর ফিরছি । চাকরির ব্যস্ততায় কোথাও যাওয়ার সময় পাওয়া যায় না । ফরিদপুর ছাড়ার পর একটা সময় ছিল যখন ফরিদপুরের রাস্তা-ঘাট , মানুষজন ও বন্ধুদের অনেক মনে পড়ত । সময়ের সাথে সাথে আর ঢাকার যান্ত্রিক জীবনে সেই অনুভূতিগুলোও মরে গেছে । তবে আজ বাসে বসে ধূসর স্মৃতিগুলো মনে পড়ছে । সেই স্কুল জীবন আর কলেজ জীবন । সারাদিন শহর দাপিয়ে বেড়ানো সেই সময় । স্কুল পালিয়ে সাইকেলে নিয়ে বন্ধুরা সব ঘুরে বেড়াতাম আর কোচিং শেষে বাসায় ফিরতাম সন্ধায় । সারাদিন কাটতো হুড়োহুড়িতে । আর কলেজ জীবনে তো কখনো ক্লাস ই করা হয়নি । ক্লাস বাদ দিয়ে লাইব্রেরিতে বসে আড্ডা দিতাম । খেলাধূলা , মুভি , গান , প্রেম-ভালবাসা , সবই থাকতো আড্ডার টপিকে । কেও কেও তো কেন তার মোবাইল সেরা তা প্রমাণে যুদ্ধে নেমে যেত । আর বিকেলে সবাই মিলে স্কুলমাঠে বাস্কেটবল খেলতাম । কতইনা ভাল ছিল সেই দিনগুলো ! আজ শত চেষ্টা করেও সেই দিনগুলো ফেরাতে পারবো না । স্মৃতির এপিটাফ আজ ভারী হয়ে উঠছে ।
আমি একটি প্রাইভেট ভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এ অনার্স কমপ্লিট করে এখন একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে জব করছি । এরকম অগোছালো বাল্যকাল আর শৈশব যার তার রেজাল্ট নিশ্চয় ভাল হওয়ার কথা না । এস.এস.সি. তে ঠিকই ছিল কিন্তু এইচ.এস.সি. তে জীবনের সর্বোৎকৃষ্ট বাঁশটা খেয়ে গেলাম । তারপর শুরু হল জীবনকে সোজা লাইনে আনার যুদ্ধ । এতো আঁকাবাঁকা লাইনকি এতো সহজে সোজা করা যায়! তাই শত চেষ্টা করেও জীবনের লাইন এখনো আঁকাবাঁকাই আছে । তবে আগের মত ছন্নছাড়া ভাবটা আর নেই । চোখের চশমাটা চেহারায় একটা গাম্ভীর্য এনেছে ।
লিখতে লিখতেই বাস ঘাটে এসে পৌঁছল । ছয় বছর আগে পদ্মা সেতু হওয়ার কথা ছিল । সেই একই প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাজনীতিবিদরা এখনো নির্বাচন করে যাচ্ছেন কিন্তু কাজের কোন নমুনা নেই । রাজনীতিবিদরা হল এদেশের প্রকৃত ব্যবসায়ী । বাজারের ব্যবসায়ীরা তাও লোকসানের শিকার হয় কিন্তু এরা সর্বক্ষেত্রেই লাভবান । পদ্মা ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছে । আগে নদী পাড় হতে এক ঘন্টা লাগতো আর এখন আধাঘন্টাই দৌলতদিয়া ঘাটে পৌছে গেলাম । আর আধা ঘন্টা পরেই আমি পা রাখবো সেই চীরচেনা শহরে যেখানে আমার জন্ম আর বেড়ে উঠা । ব্যপারটা চিন্তা করেই মনটা ভাল হয়ে গেল ।
সেই কতক্ষণ ধরে নিজের কথাই বলে চলেছি । আমার পাশে আরেকজন বসে আছে আর চুপচাপ আমার লেখা পড়ে যাচ্ছে । আমার স্ত্রী রিদিতা । ভার্সিটি লাইফে পরিচয় , বন্ধুত্ব , পরবর্তীতে প্রণয় আর শেষমেশ বিয়ে । এবারের ইদের ছুটিতে ফরিদপুর আসাটা মূলত রিদিতার কারণেই । আমার কাছ থেকে ফরিদপুরের এতো গল্প শুনেছে যে বিয়ের আগেও কয়েকবার আসতে চেয়েছিল । কিন্তু তখন সময়-সুযোগ না হওয়ায় নিয়ে যেতে পারি নি । এবার ইদে বেশ কয়েকদিন ছুটি পেলাম , তাই ভাবলাম ফরিদপুর ঘুরিয়ে নিয়ে আসি । সব ইচ্ছে তো পূরণ করতে পারি না , অন্তত এই ইচ্ছেটা পূরণ করা যাক ।
আব্বু-আম্মু আগেই চলে এসেছে । বাসস্ট্যান্ডে নেমেই আগে চোখবন্ধ করে বাতাসের ঘ্রাণ নিলাম । সেই চীরচেনা নির্মলতা ! একটা রিকশা নিলাম । আব্বু অবশ্য গাড়ি পাঠাতে চেয়েছিল কিন্তু রিকশায় ঘুরার মজা গাড়িতে কিভাবে পাবো ! আর পথও তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যায় । যাওয়ার পথে রিদিতাকে চেনা জায়গাগুলো চেনাচ্ছিলাম আর ও অদ্ভুত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল । সব সময় নীরব মানুষটাকে এমন প্রাণচঞ্চল দেখে ও মনে হয় অবাক হচ্ছিল । আর আমি মজা পাচ্ছিলাম ওর এই অবাক দৃষ্টি দেখে । মেয়েটির চোখদুটি অসম্ভব সুন্দর!
বাসায় ফিরেই এক এক করে ফোন দেয়া শুরু করলাম সব বন্ধুদেরকে । ইদের ছুটিতে বাড়ি ফিরেছে অনেকেই । একটাও গালি দেয়া ছাড়া কথা বলে না ! তবে অনেকদিন পর সেই গালি শুনেও ভালই লাগে । সবাই মিলে ঠিক করলাম বিকেলে স্কুলমাঠে দেখা করব । ওদিকে রিদিতা এসেই আম্মুর সাথে রান্নাবান্নায় নেমে পড়েছে । আমি হালকা রেস্ট নিয়ে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম চেনা শহরটাকে নতুন করে চিনতে । শহরটা আর আগের মত নীরব নেই , রাস্তায় যানবাহন আর মানুষের ভীড় । অনেক নতুন রেস্টুরেন্ট হয়েছে । রাস্তাগুলো আরো চওড়া হয়েছে , খেলার মাঠগুলোর জায়গায় এখন বহুতল ভবন । রাস্তার দুপাশের বড় বড় গাছগুলো এখন আর নেই ।
একটু ঘুরাফিরা করে স্কুলে ঢুকলাম । দেখলাম সব আগেই হাজির , আমিই সর্বশেষ । সবার মুখেই হাসি । কতদিন পর সবাই একসাথে সবাইকে পেলাম । সবার খোঁজ-খবর নেয়া শুরু করলাম । কয়েকজন ডাক্তার , বেশিরভাগই ইঞ্জিনিয়ার , কেও কেও ব্যবসা করছে । দুই-তিনজন তো দু-তিন সন্তানের বাপ হয়ে গেছে! ভাবতেই অবাক লাগে এইতো সেদিন এদের সাথে স্কুল-কলেজ চষে বেড়িয়েছি আর এখন যার যার জীবন নিয়ে সবাই ব্যস্ত । সত্যি সময় থেমে থাকে না ।
ইফতারের সময় হয়ে গেল । সবাই মিলে একটা রেস্টুরেন্টে বসলাম । বিল দেয়ার সময় লাগলো ঝামেলা , সবাই বিল দিতে চায় । পুরোনো দিনের কথা মনে পড়ল । তখন কার উপর বিল দেয়ার দায়িত্ব ফেলা যায় সেইটাই খাওয়ার সময় ছিল চিন্তার মূল বিষয় । আমি কারো না কারো ঘাড়ে আমার বিল এর ভার ছেড়ে দিয়ে দোকান থেকে আগে বের হয়ে যেতাম । তাই আমিই শেষ পর্যন্ত দিলাম বিলটা । রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় ফিরলাম ।
বাসায় ফিরতেই বেগম সাহেবা সামনে হাজির । এখন তাকে খাওয়ার পর আজকের সকল ঘটনা শোনাতে হবে নাহলে আমার শান্তি নাই । এটা আমার প্রতিদিনের অত্যাবশকীয় কাজ । এ পাগলীটা আমাকে যে কেন এতো ভালবাসে তা বুঝি না আমি । আমার মত ছন্নছাড়া আর বিরক্তিকর মানুষকে সহ্য করা ই তো কঠিন আমার মতে । মাঝে মাঝে নিজেই নিজের প্রতি বিরক্ত হয়ে নিজ গালে চড় দিতে ইচ্ছা করে । এই পাগলীর কারণে অফিস থেকে ফিরে সারাদিনের সব কিছু না বললে আমারও ঘুম আসে না রাতে । দুজনের ছোট্ট সংসার আর আব্বু-আম্মু , ভালই কেটে যায় দিন-কাল ।
ইদের ছুটিগুলো ভালই কাটলো বন্ধু আর পরিবারের সাথে । কিন্তু আবার ফিরে যেতে হবে সেই যান্ত্রিক শহরে । আবার ধুলো পড়বে স্মৃতির পাতায় । হয়ত কোন অবসরে পাতা উল্টাবো আর মনে পড়বে মূহুর্তগুলো ।

(লেখাটি আবেগ আর কল্পনা নিয়ে লেখা । বাস্তব জীবনের সাথে মিল থাকতে পারে । ভবিষ্যৎ কেমন হবে কেও বলতে পারে না , কল্পনা করতে পারে মাত্র ।)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:২৭
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×