গল্পের শুরু ...
তখন থেকে যখন কল্প বাসা থেকে বেরিয়েছে,কমলাপুর রেল স্টেশনে যাবে বলে । পাশে একটা চা এর দোকানে বসে আছে । কেমন ক্লান্ত লাগছে তার, মনে হচ্ছে অনেকটা পথ সে দৌড়ে এসেছে। আশ্চর্যের বিষয়, সারাদিন পর এই মাত্র সে চা পান করছে কিন্তু, চা এর স্বাদে মুখটা কেমন তিতকুটে হয়ে আছে । চা এর দাম দিয়ে, কল্প তার ব্যাগ নিয়ে উঠে পড়লো । এখান থেকে বেশি একটা দূরে না স্টেশন, তাই হেটে পৌছাবার সিদ্ধান্ত নিলো কল্প ।
সন্ধ্যা হয়ে আসছে। মতিঝিল পেরিয়ে কমলাপুর এর দিকে একা একা এগুচ্ছে কল্প । কেমন একটা অস্বস্তি কাজ করছে তার ভেতর আর কেবল মনে হচ্ছে, কল্প শুধু হেটে চলছে অনেক সময় ধরে, কিন্তু গন্তব্যে পৌছাতে পারছে না । এমন মনে হবার কারন কি ? জানা নেই কল্প’র । কল্প হাটছে ...
বিকেলের আলো ছাপিয়ে এখন অন্ধকার হয়ে গেছে । শহরটা কেমন ছিমছাম লাগছে। দ্রুত এগুনোর চেষ্টা করছে কল্প । তবু পথ যেন শেষ হতে চায় না । কিছুদূর সামনে এগুতে ...কল্প কিছু একটা লক্ষ করলো । ২ মিটার চওড়া ফুটপাথ এর ওপর একটা কিছু পড়ে আছে এবং যার কিঞ্চিৎ উপস্থিতি কল্প কে , কেমন যেন বিব্রত করছে । বিষয়টা কি কল্প জানতে আরো কিছুদুর সামনে এগিয়ে গেল...
সামনে গিয়ে কল্প যা দেখলো, তা যেন তার সারা শরীরে শিহরন জাগিয়ে গেল । এ কি করে সম্ভব ? কিছু মুহূর্তের জন্যে তার মনে হল, সে স্বপ্ন দেখছে । কিন্তু আরো কাছে যেতেই পুরো ব্যাপারটা যে বাস্তব, তা বুঝতে আর বাকি রইলো না কিছুই ।
ফুটপাতের ওপর পড়ে আছে এক নিথর দেহ, কোন প্রকার শ্বাস- প্রশ্বাস বিহীন । মৃতদেহটি এক পাশ করে রাখা, তবে চোখ দুটো যে খোলা,তা বুঝা যাচ্ছে। একটা কাপড় দিয়ে শরিরটা ঢাকা । কল্প কি করবে বুঝতে পারছে না, কেননা আশে পাশে কাউকে দেখতে পাচ্ছে না । একবার ভাবলও কিছু করার দরকার নেই, কল্প তার মত হেটে চলে যাবে । কিন্তু কি মনে করে, মৃত দেহের আশে-পাশে বেশ কিছু কাগজ পরে থাকতে দেখে সেগুলোকে তুলে নিলো । কাগজ গুলো কে তুলে নেয়ার আরেকটা কারন হল,কাগজ গুলো কল্প’র খুব পরিচিত আর প্রিয় । শেষবার কল্প, রুমু কে এই কাগজে তার চলে যাবার কথা লিখে একটা চিঠি দিয়েছিল । যদিও রুমু সে চিঠির কোন উত্তর দেয়নি ।
কল্প কাগজগুলো তুলে নিলো । বেশ কয়েকটা কাগজ ওখানে । কল্প, একটা খুলে পড়তে শুরু করলো, এই মৃতদেহের কোন পরিচয় পাওয়া যায় কি না, সে জন্যে ।
কল্প পড়তে লাগলো ...
“ আমার তোমাকে অনেক কিছু বলার ছিল। দিন ৫ এক আগে আমার বাবা মারা গেছেন । এখন আমি সত্যি একা, তোমার অনুপস্থিতি আমাকে খুব অসহায় করে তুলছে। হয়তো তোমাকে আর ফিরে পাবো না, ফিরে পাবার আশাও করি না । তবে তোমাকে আর বিরক্ত করবো না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি । আমি চলে যাচ্ছি রুমু – কোথায় যাচ্ছি জানি না ।
যদি আমার কথা কখনও মনে পড়ে, তো একবার একটা চিঠির জবাব দিয়ো ।
-ইতি
( আমার )
রুমঝুম
এর -কল্প”
চিঠিটা পড়া শেষ করা মাত্র, সব কেমন উলট – পালট লাগতে শুরু করলো । কল্প যেন কিছুতেই কিছু মিলাতে পারছে না। এই চিঠিতো রুমু কে লিখেছিলো কল্প । হাতের লেখাও তার। এই চিঠি এখানে এল কেমন করে, তাহলে কি এখানে যে মৃতদেহ পড়ে আছে এটা রুমু’র ? না এ হতে পারে না। কল্প’র অস্থিরতা যেন বেড়েই যাচ্ছে । কল্প আর দেরি না করে, মৃত দেহের মুখের ওপর থেকে কাপড়টা সরাতেই ... এক ঝটকায় দূরে সরে গেল । এতো রুমু নয়, এত কল্প’র নিথর দেহ । ঠোঁটের কোণে ঈষদ হাসি, অথচ কোন হ্রদস্পন্দন নেই । কল্প তাকিয়ে দেখছে, তার মৃত দেহ তার দিকেই হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে ... কল্প’র সমস্ত শরির ঠান্ডা হয়ে আসছে । বুকের বামপাশে কেমন ব্যথা অনুভব করছে । কি করবে বুঝতে না পেরে এক দৌড়ে সেখান থেকে ছুটে বেড়িয়ে এলো ।
অনেক দূর ছুটে আস্তেই, সামনে একটা চা এর দোকান পেল । সেখানে বসে এক কাপ চা এর অর্ডার দিল । অস্থিরতা এখন যেন আরো তীব্র হতে লাগলো কল্প’র । চা এ চুমুক দিতেই আবারো তার কেমন তিতকুটে এক অনুভুতি এলো । মুহূর্তের মধ্যেই তার মনে পড়ে গেল, সে একটু আগেও এখানে এসেছিল । এবং এই একি ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল প্রায় ৬ বার । কল্প চা রেখে উঠে দাড়ালো ...। আবারো হাটতে লাগলো স্টেশন এর উদ্দেশ্যে । হৃদস্পন্দন যেন বেড়েই চলছে ...। সাথে তার হাটার গতিও ...
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৪১