somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একুশ আমার অহংকার

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম শহীদ

একুশের প্রথম শহীদ রফিকউদ্দিন আহমদ। তিনি ছিলেন মানিকগঞ্জের আবদুল লতিফের বড় ছেলে। তাঁর মায়ের নাম রাফিজা খাতুন। সিংগাইর উপজেলার পারিল গ্রামে ছিল তাঁদের বাড়ি। ঘটনার সময় শহীদ রফিকের বয়স হয়েছিল ২৬ বছর। পুলিশের লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাসের কারণে ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ব্যারাকে আশ্রয় নেওয়ার সময় তাঁদের সঙ্গে ছিলেন রফিক। গুলিতে তাঁর মাথার খুলি উড়ে যায়। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে তখনই মারা যান তিনি।

প্রথম লিফলেট

একুশে ফেব্রুয়ারি রক্তাক্ত ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় একটা কিছু করার তাগিদে ওই দিনই সন্ধ্যায় আলাউদ্দিন আল আজাদ, মুস্তফা নূরউল ইসলাম, ফজলে লোহানী, হাসান হাফিজুর রহমান পাটুয়াটুলির সওগাত অফিসের বিপরীত গলিতে অবস্থিত পাইওনিয়ার প্রেসে যান। দুটি টেবিলে বসে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তাঁরা লিখে ফেলেন কয়েকটি প্রবন্ধ, নিবন্ধ। তাৎক্ষণিকভাবে তৈরি হয়ে যায় একটি বুলেটিন।
‘বিপ্লবের কোদাল দিয়ে আমরা অত্যাচারী, শাসকগোষ্ঠীর কবর রচনা করব।’
বুলেটিনে লিখেছিলেন আলাউদ্দিন আল আজাদ।

প্রথম সংকলন

একুশের প্রথম সংকলন একুশে ফেব্রুয়ারি। সম্পাদনা করেন হাসান হাফিজুর রহমান। ’৫৩ সালে পুথিপত্র থেকে এটি প্রকাশ করেন বিশিষ্ট রাজনৈতিককর্মী মোহাম্মদ সুলতান।

আলী আশরাফ, শামসুর রাহমান, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, আবদুল গণি হাজারী, ফজলে লোহানী, আলাউদ্দিন আল আজাদ, আনিস চৌধুরী, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, জামালউদ্দিন, আতাউর রহমান, সৈয়দ শামসুল হক, হাসান হাফিজুর রহমান, শওকত হোসেন, সাইয়িদ আতীকুল্লাহ, আনিসুজ্জামান, সিরাজুল ইসলাম, আতোয়ার রহমান, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, তোফাজ্জল হোসেন, কবির উদ্দিন আহমদের লেখায় সমৃদ্ধ এই সংকলনের অসাধারণ স্কেচগুলো করেন মুর্তজা বশীর। হাসান হাফিজুর রহমানের অনুরোধে নিজ হাতে উৎসর্গপত্রটি লিখে দেন আনিসুজ্জামান।

মায়ের গয়না বিক্রি করে সংকলনটি প্রকাশের টাকা জোগাড় করেছিলেন হাসান হাফিজুর রহমান।

একুশের প্রথম স্মরণিকা

ঢাকা কলেজ ছাত্রাবাসের পক্ষ থেকে ’৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত চার পৃষ্ঠার পুস্তিকা শহীদের স্মরণে একুশের প্রথম স্মরণিকা। শুরুতেই আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী ভয় নাই ওরে ভয় নাই/নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।’
পরে কাজী নজরুল ইসলামের ‘বন্দী থাকা হীন অপমান হাঁকবে যে বীর তরুণ/শিরদাঁড়া যার শক্ত তাজা রক্ত যাহার অরুণ’।

এ পুস্তিকাতেই ছাপা হয় আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর লেখা একুশের গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’। এ ছাড়া স্মরণিকায় ছিল ‘আমাদের কথা’ ও ‘ভুলি নাই রক্তরাঙা একুশের কথা’ শিরোনামের দুটি ছোট নিবন্ধ। ‘ঢাকা কলেজ ছাত্রাবাসের পক্ষ থেকে জাতীয় জীবনে চির্নরণীয় একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার সংগ্রামে যাঁরা প্রাণ দিয়েছেন, সেই বীর শহীদদের স্মরণে’ উৎসর্গ করা হয় এই স্মরণিকা। এটিতে একটি আবেদনও ছিলঃ ‘নিজে পড়িয়া অপরকে পড়িতে দিন।’

শহীদ মিনার ধ্বংসের প্রতিবাদে প্রথম কবিতা

’৫২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পুলিশের হাতে প্রথম শহীদ মিনার ধ্বংসের প্রতিক্রিয়ায় কবি আলাউদ্দিন আল আজাদ রচনা করেন ‘স্মৃতিস্তম্ভ’। ঐতিহাসিক এই কবিতাটির কয়েকটি চরণ-‘স্মৃতির মিনার ভেঙ্গেছে তোমার? ভয় কি বন্ধু আমরা এখনো/চারকোটি পরিবার/খাড়া রয়েছি তো। যে-ভিৎ কখনো কোনো রাজন্য/পারেনি ভাঙ্গতে।’

প্রথম শহীদ মিনার ভাঙার প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিলেন আলাউদ্দিন আল আজাদ। পুলিশের এ নির্মমতা তাঁর হৃদয়কে বেদনাহত করে, তাঁকে বিদ্রোহী করে তোলে। পুলিশের হাতে প্রথম শহীদ মিনার ধ্বংসের তীব্র প্রতিক্রিয়ায় ইকবাল হলে বসে সঙ্গে সঙ্গেই এই কবিতাটি রচনা করেন।

প্রথম কবিতা

একুশের প্রথম কবিতাটি লেখেন মাহবুব-উল-আলম চৌধুরী। কবিতাটির নাম
‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি।

২২ ফেব্রুয়ারি ১৭ পৃষ্ঠার একটি পুস্তিকায় ছাপা হয় কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি।
ওই দিনই চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানের জনসভায় রাজনৈতিক কর্মী হারুনূর রশীদ কবিতাটি পাঠ করে শোনান।
কবিতাটি ছাপানোর সময় চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লার কোহিনূর প্রেসে হামলা চালায় পুলিশ। কিন্তু প্রেসের কর্মীরা আগেভাগেই পাণ্ডুলিপি, সাজানো ম্যাটার ও মুদ্রিত কপি গোপন করে ফেলতে সক্ষম হন। পুলিশ চলে গেলে আবার নতুন করে শুরু হয় ছাপার কাজ। প্রকাশের পর কবিতাটি বাজেয়াপ্ত করে সরকার, কবির বিরুদ্ধে জারি করে হুলিয়া। আর এটি ছাপার অপরাধে কোহিনূর প্রেসের ম্যানেজার দবির আহমেদ চৌধুরী ও প্রথম পাঠক চৌধুরী হারুনূর রশীদকে দীর্ঘ কারাবাস করতে হয়।

প্রথম গান

একুশের প্রথম গান রচনা করেন ভাষাসৈনিক আ ন ম গাজীউল হক। গানটির প্রথম চরণ ‘ভুলব না, ভুলব না, একুশে ফেব্রুয়ারি ভুলব না’। এটি সে সময়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:১০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×