হাশেম খান
২০১২ সালের ষোলোই ডিসেম্বরে বাংলাদেশ বিজয়ের ৪১ বছর পেরিয়ে ৪২-এ পা রাখবে। ১৯৭১-এ একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের জন্য আমরা যে যুদ্ধ করেছিলাম, ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মোৎসর্গ, ২ লক্ষ মা-বোনের আত্মত্যাগে তা অর্জিত হয়েছিল। শুধু নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধই নয়, সুদীর্ঘ সংগ্রামের ফসল এই স্বাধীনতা। জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপেটন মনসুর আলী, কামরুজ্জামান, কর্নেল আতাউল গণি ওসমানীসহ অসংখ্য প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিবিদদের ধারাবাহিক সংগ্রামের পরিণতি স্বাধীন বাংলাদেশ। এমন অতুলনীয় আত্মত্যাগ আর অকুতোভয় সাহসী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জনের উদাহরণ পৃথিবীতে বিরল। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ কেবল পশুশক্তিকে পরাজিত করে মনুষ্যত্বের বিজয়ই ছিল না, ছিল মনুষ্যত্বকে এগিয়ে নিয়ে যাবার অঙ্গীকারও। সেই অঙ্গীকার পূরণের লক্ষ্যে যখন আমাদের নেতৃত্ব নতুন রণক্ষেত্র মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের সংগ্রামে অবতীর্ণ ঠিক তখনই ১৯৭৫-এ একাত্তরের পরাজিত শক্তি হিং¯্র বর্বরতায় জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করে, তার স্তব্ধ করে দিতে চায় বাঙালি জাতির অগ্রযাত্রাকে। একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে পঁচাত্তরে তারা যে গভীর ষড়যন্ত্রের নীল নকশা প্রণয়ন করে তা বা¯তবায়নে ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ডের রূপ দেয়। কাপুরুষোচিত বর্বরতায় জেলখানায় বন্দী অবস্থায় খুন করে জাতির অবিসংবাদী নেতা তাজউদ্দিন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপেটন মনসুর আলী ও কামরুজ্জামানকে। তারা বাংলাদেশের ইতিহাসের চাকাকে পেছনের দিকে ঘুরিয়ে দেবার যাবতীয় আয়োজন বা¯তবায়ন শুরু করে।
মুক্তিযোদ্ধা মানেই দেশপ্রেমিক নন, তার উদাহরণ জেনারেল জিয়াউর রহমান। যার আশ্রয়-প্রশ্রয় ও প্রত্যক্ষ মদদে রাজাকার, আলবদর, আলশামসরা সমাজে পুনর্বাসিত হয়েছে। তার মন্ত্রিসভায় পর্যšত ঠাঁই পায় কুখ্যাত রাজাকাররা। দেশের ঘাড়ে চেপে বসে সামরিক স্বৈরাচারÑ তাদেরও কাজ ছিল পরাজিত পাকহানাদারদের এদেশীয় সহযোগী দালাল যুদ্ধাপরাধীদের পৃষ্ঠপোষকতা করা। এই পাকি¯তানী ভূতদের তাড়াতে, দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে গণতন্ত্রের জন্য সুদীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম করতে হয়েছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বের পুরোভাগে থেকে, দেশের অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে চালিয়েছেন সেই সুদীর্ঘ লড়াই। আজ দেশের মানুষ যখন গণতন্ত্রের সেই সুফল পেতে যাবে ঠিক তখনই আবার পরাজিত শক্তির আস্ফালন দেখতে পাচ্ছি। গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে স্বৈরতন্ত্রের দোসররা আজ আবারও ‘নৈতিক সমর্থন’ ঘোষণা করছে একাত্তরের পরাজিত হানাদার পাকি¯তানীদের সহযোগীদের প্রতি। যারা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ চায়নি, যারা স্বাধীন দেশকে আজো মেনে নিতে পারেনি, তাদেরকে যে-কোনও অজুহাতেই ‘নৈতিক সমর্থন’ দেয়া ক্ষমাহীন অপরাধ!
‘‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে,
তব ঘৃণা দুজনারে তৃণসম দহে’’Ñ অপরাধ যে করেছে, অপরাধ যে করে আর যে সে অপরাধের প্রশ্রয় দেয়, সাফাই গায় অপরাধীর পক্ষে তাকে কেবল ঘৃণা দিয়ে দহনের সুযোগ নেইÑ প্রয়োজন তাকে প্রতিরোধের! এই অপরাধীদের চিনে রাখতে হবে এবং যেভাবে গতবার ভোটের মাধ্যমে এদের অতীতের অপরাধের বিচারের পক্ষে তরুণ প্রজš§ রায় দিয়েছে তেমনই সামনের নির্বাচনে এদের বর্তমান অপরাধের বিপক্ষে দেশের তরুণপ্রজš§ দৃঢ় পদে দাঁড়াবে বলেই আমি বিশ্বাস করি।
একটি অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল, ভবিষ্যৎমুখী বাংলাদেশ বিনির্মাণের সংগ্রামে দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে বর্তমান তরুণপ্রজšে§র। তাই দেশের প্রকৃত ইতিহাস সম্পর্কে তাদের থাকতে হবে স্পষ্ট ধারণা। কারা আমাদের শত্রু, কারা আমাদের মিত্র সে সম্পর্কে থাকতে হবে স্পষ্ট উপলব্ধি।
হাশেম খান, শিল্পী