somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় তরুণরাই বাংলাদেশকে গড়বে [] অসীম সাহা

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন তো স্বাধীনতা। একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ত্রিশ লক্ষ মানুষের জীবনদান এবং দু’লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে রাষ্ট্রপিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি, মুক্তিযুদ্ধের অর্জন হিসেবে এরচেয়ে বড় আর কী হতে পারে? পরবর্তীকালে যাই কিছু অর্জিত হয়ে থাক না কেন, তা তো মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতারই ফল। একটি জাতি, হাজার বছরের শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীনতা অর্জন করলো, তার ফল সকলেই আমরা ভোগ করছি। কিন্তু অনেকের মধ্যেই দেখি প্রবল হতাশা। যদি আমরা এই স্বাধীনতা না অর্জন করতাম, তা হলে কী হতো? পাকিস্তানের ক্রীতদাস হয়ে বেঁচে থাকতে হতো। একটি সাম্প্রতিক উদাহরণই এর অন্যতম উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হতে পারে। আজ যে বাংলার টাইগাররা ১১জন মিলে ক্রিকেট খেলে সারা পৃথিবীকে মাতিয়ে দিচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জিত না হলে তা হতো? পাকিস্তানিরা কখনও সেই সুযোগ দিতো?
জানি, হতাশ হবার মতো অনেক ঘটনা স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে সংঘটিত হয়েছে। তা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করার মধ্য দিয়ে অনেকেই এটা বলবার চেষ্টা করেন, এরচেয়ে তো পাকিস্তানই তো ভালো ছিল! এসব যারা বলেন, তারা কারা? আজ-যে দেশের মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে সারা পৃথিবীতে নিজেদের জায়গা করে নিচ্ছে, লক্ষ লক্ষ লোক, যারা কোনদিন ঢাকা শহরেই আসার কল্পনা করতে পারত না, তারাও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অভিবাসী হতে পারছে, এটা কি কল্পনাও করা যেতো?
তাই মুক্তিযুদ্ধের অর্জনগুলোকে সংখ্যাতত্ত্বের বিচারে হিসেব করতে গেলে তা খুব যুক্তিসঙ্গত হবে বলে আমার কাছে মনে হয় না। মনে রাখতে হবে, হতাশাবাদীরা মানুষকে ব্যর্থতা ছাড়া অন্যকিছু দিতে পারে না। আশাবাদীরা স্বপ্ন দেখে, স্বপ্ন দেখায় আর তার মাধ্যমেই বৃহত্তর অর্জনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।
মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যাশা ছিল একটি স্বাধীন দেশ, একটি নিজস্ব পতাকা, গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশের প্রত্যাশা। সেটা হয়ত সম্পূর্ণরূপে অর্জিত হয়নি। কেন হয়নি, তা অনুসন্ধান করতে গেলে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার দিনগুলোতে ফিরে যেতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালিরা যাতে একটি নিজস্ব অস্তিত্বের রাষ্ট্রিক অবয়ব নির্মাণ করতে না পারে. তার জন্যে যে ষড়যন্ত্র শুরু হয়, তার ফলশ্র“তিতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে আমাদের প্রত্যাশা পূরণের পথটিকে শুধু দুর্গম নয়, সুদূরপরাহতও করে তোলা হয়। এ নিয়ে অনেকেই হয়ত বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা করবেন। কখন প্রত্যাশা ভঙ্গ হলো, কে প্রত্যাশার পথে কাঁটা বিছিয়ে দিলÑএ নিয়ে যারা কূট তর্কে অবতীর্ণ হয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের ধারাবাহিকতার ক্ষেত্রে অন্তরায় সৃষ্টি করতে চান, তারাই মূলত আমাদের প্রত্যাশার বিপরীতে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশকে একটি অন্ধকার আবর্তের মধ্যে ঘুরপাক খেতে বাধ্য করে। সেই অপশক্তি আজও তৎপর আছে। তাদের প্রতিহত করার মধ্য দিয়েই কেবল মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যাশা ও স্বপ্ন পূরণ হতে পারে।
মুক্তিযুদ্ধকে কীভাবে এই প্রজšে§র চেতনায় ও কর্মে উদ্ভাসিত করে তোলা যায় এর প্রধানতম উত্তর একটাই হতে পারে বলে আমি মনে করি, আর তা হলো, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের কাছে দায়বদ্ধ হওয়া। এদিক দিয়ে তরুণ প্রজš§কে উজ্জীবিত করে তোলার দায়িত্ব যাদের ছিল, সেই রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজ প্রায় সম্পূর্ণরূপেই ব্যর্থ হয়েছেন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে কূট ভূমিকা পালন করেছে স্বাধীনতাবিরোধীচক্র এবং অবৈধভাবে ক্ষমতাদখলকারী স্বৈরাচারী সামরিক শাসকরা। আর গণতন্ত্রের আবরণে সামরিক স্বৈরাচারের অপভ্রংশ- প্রেতাত্মারা এখনও সেই ষড়যন্ত্রই করে চলেছে। সেই কূট ষড়যন্ত্রকারীদের ভূমিকা এই প্রজšে§র তরুণ-তরুণীদের কাছে তুলে ধরে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আকৃষ্ট করা এবং একটি সাম্যের সংস্কৃতি অন্তস্তলে গ্রন্থিবদ্ধ করে দেওয়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ও কর্মে তাদের উদ্ভাসিত করে তোলার সবচেয়ে কার্যকরী পথ বলে আমার মনে হয়। অবশ্য এক্ষেত্রে বর্তমান তরুণ প্রজšে§রও দায়িত্ব রয়েছে। তারা কেন শুধু গতানুগতিক ধারার অনুগামী হয়ে নিজেদের ব্যর্থতার অনুকারক করে তুলবে? মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার জন্য তারাও কেন অগ্রগামী ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসবে না? বঙ্গবন্ধু কিংবা পৃথিবীতে যারা ইতিহাসের স্রষ্টা, তারা তো নিজেরাই নিজেদের অনুপ্রাণিত করার জন্য ইতিহাসের কাছে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ তাদেরকে হাত ধরে এগিয়ে দিয়ে যাননি। আমাদের তরুণ প্রজšে§রও সেই শক্তি আছে। শুধু প্রয়োজন, তাকে ইতিহাসের প্রবহমান গতির বাঁকের মধ্যে আবর্তিত করে দেওয়া। আর তা হলেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সফল হবে এবং তরুণরা তাদের সফল কর্মের মধ্য দিয়ে নতুন করে বাংলাদেশকে বিনির্মাণ করতে পারবে, এটাই আমার স্থির বিশ্বাস।

অসীম সাহা : কবি
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:০৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×