শুচি সৈয়দ
দেশের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ বলেন, ‘বই একটি আন্তর্জাতিক পণ্য। বহির্বিশ্বে একটি জাতিকে তুলে ধরতে বইয়ের বিকল্প নেই। বাংলা ভাষায় রচিত বিশ্বমানের রচনাকর্ম পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে উদ্যোগী হতে হবে আমাদের। এজন্য প্রয়োজনে বিদেশী ভাষায় প্রকাশনালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে সরকারি আনুকূল্যে। গ্লোবালাইজেশনের যুগে এ কাজটি করা জরুরি হয়ে উঠেছে। একুশে ফেব্র“য়ারি জাতিসংঘ স্বীকৃত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাংলা ভাষা পৃথিবীর অন্যতম একটি ভাষা, তাই এর সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে পৃথিবীর অন্য জাতিসমূহের সামনে নিবিড়ভাবে তুলে ধরতে হবে।
একুশে ফেব্র“য়ারি আমাদের আÍপরিচয়ের গরিমা মেলে ধরার সুযোগ করে দিয়েছে।’
অমর একুশের গ্রন্থমেলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বইমেলা আমাদের প্রাণের মেলা হয়ে উঠেছে। বছরের একটা মাস বইকে কেন্দ্র করে যে সামাজিক মেলামেশা, দেখাসাক্ষাৎ বাংলা একাডেমীর চত্বরে ঘটে তা প্রাণসঞ্চার করে আমাদের সম্পর্কের ভেতর।’ দেশের প্রধান কবি আল মাহমুদ ব্যক্ত করেন অনুভূতি, ‘বইমেলায় যাই প্রাণের টানে। সেখানে গেলে অনেক প্রিয়জন, প্রিয়মুখ এবং প্রিয় পাঠকের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ হয়। আমার বইয়ের বিভিন্ন প্রকাশকের সঙ্গে দেখা হয়Ñ একই চত্বরে; বছরের অন্য সময় যাদের সঙ্গে হয়তো দেখা করতে হলে আলাদা আলাদা সময় ও সুযোগ করতে হয়Ñ সেই কষ্ট ছাড়াই তাদের একই ময়দানে পাওয়াও একটা বড় সুবিধা। বইমেলায় আমার কিছু আর্থিক প্রাপ্তিযোগও ঘটেÑ মেলা এলে প্রকাশকদের কাছ থেকে।’
কবি আল মাহমুদ বলেন, ‘একুশে ফেব্র“য়ারিকে কেন্দ্র করে, বইমেলাকে কেন্দ্র করে গোটা ফেব্র“য়ারি মাস আমাদের সাংস্কৃতিক উৎসবের কালে পরিণত হয়েছে। আমাদের উচিত এই উৎসবের আবহকে মাতৃভাষা ও মাতৃভূমির জন্য, একুশে ফেব্র“য়ারির শহীদদের আÍত্যাগের মহত্তম আবেগকে তথা একুশের চেতনাকে তরুণ প্রজšে§র মধ্যে সঞ্চারিত করে দেয়া। সেটা অবশ্য লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, নাট্যকারদেরই কাজ। তবু এই কাজে মানুষের সম্মিলিত প্রয়াসও দরকারি বলে আমি মনে করি।’
তিনি আরও বলেন, বইমেলা যেন বইপড়া, বই কেনা, বইয়ের সঙ্গে আÍীয়তার রাখিবন্ধন পরানোর কাজ করে সেজন্য লেখক-পাঠক-প্রকাশকসহ বই-সংশ্লিষ্ট সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে।’ কবি আল মাহমুদ জানান, এবারের মেলায় তাঁর সনেট সমগ্রসহ নতুন বই বের হচ্ছে ‘ছায়ার সঙ্গে মায়ার লড়াই’ (কলাম), ‘আমি এই ধরণীর মেয়ে’ (প্রবন্ধ), উপন্যাস ‘পোড়া মাটির জোড়া হাঁস’Ñ এক প্রাচীন বাঙালি কবিকে নিয়ে লেখা। এছাড়াও পুনর্মুদ্রণ আসছে কয়েকটি বইয়ের লোক লোকান্তর, পানকৌড়ির রক্ত, মরুমূষিকের উপত্যকা এবং সোনালী কাবিন। সোনালী কাবিনের ইংরেজি অনুবাদও প্রকাশ পাচ্ছে একই সঙ্গে।
কবি বলেন, বইমেলার জন্য এখন আরও বৃহৎ পরিসর প্রয়োজন। বাংলা একাডেমীসহ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, শিশু একাডেমী, পাবলিক লাইব্রেরি, জাদুঘর, শহীদ মিনার নিয়ে বিস্তৃত পরিসরে মেলার আয়োজনের প্রয়োজন অনুভূত হচ্ছে। বাংলা একাডেমীকে সঙ্গে নিয়েই মেলার বিস্তৃতি চান তিনি।