সন্ধ্যা পার হয়ে রাত্রি ঘনিয়ে এলো। 'এলাহী ভরসা' বাড়ি নিয়ন আলোয় আলোকিত। অতিথিদের পদচারণে চার দিক মুখরিত হয়ে উঠলো। বন্ধ-বান্ধবী, আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশি প্রায় সকলের উপস্থিতিতে গায়ে হলুদের মঞ্চে বসা মাহি। শহরের এক নাম করা ব্যবসায়ীর ছেলের সাথে তার বিয়ে। অনেকে বলাবলি করছে চাঁদ কপাল নিয়ে মেয়েটা জন্মালো। এত বড় ঘরে বিয়ে হচ্ছে ভাবা যায়!
রাত প্রায় শেষের দিকে। চরম হইহুল্লুড়ে গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান শেষ হলো। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষে অতিথিরা অনেকেই বিদায় নিল আর বাড়ি অন্য সকলে ঘুমিয়ে পড়েছে। সারা বাড়ি শান্ত। মাহির ঘুম আসছে না। সে একা বাড়ির মধ্যে পায়চারি করছে। পায়চারি করতে করতে এক সময় সে ছাদে উঠলো। হঠাৎ পাশের গলির শেষ বাড়ির দিকে তার চোখ পড়লো। এই শেষ রাতেও বাড়ির বারান্দার লাইট জ্বলছে। সে দেখতে ফেল বারান্দায় ইজি চেয়ারে আসিফ শুয়ে আছে। বারান্দায় রাত কাটানো আসিফের দীর্ঘ দিনের অভ্যাস।
মাহি মোবাইল হাতে নিয়ে ম্যাসেঞ্জারে লগ ইন করে দেখে আসিফ অন লাইনে। মাহি জানে আসিফ ডাটা অন রেখেই ঘুমিয়ে আছে যা সে প্রতিনিয়ত করে। তবুও সে ম্যাসেজ দেয়, আজ আসো নি কেন? সবাই এলো শুধু তুমি ছাড়া!
ম্যাসেঞ্জারে ম্যাসেজ পেয়ে আসিফ রিপ্লাই তে লিখে, 'গত কয়েক বছর ধরেই তো তোমার বাড়ি যেতে চেয়েছিলাম। যাওয়া হয় নি। যেতে পারি নি। তাই আজ আর ইচ্ছে করে যাই নি।' ম্যাসেজটি সেন্ড না করে তা কেটে দিয়ে সে লিখে, আজিজ ভাইয়ের ছেলে অসুস্থ। উনার সাথে ছেলেকে নিয়ে মেডিকেলে ছিলাম। এই মাত্র মেডিকেল থেকে আসলাম। তাই যেতে পারি নি।
অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর ম্যাসেজ পেয়ে মাহি মনে মনে বলে, এই রকম হাজার অযুহাত গত কয়েক বছর ধরে শুনছি। তোমার আর অযুহাত গেল না!
মাহি রিপ্লাই দেয়, ও আচ্ছা! ছেলেটা এখন কেমন আছে?
আসিফ: এখন খানিকটা ভাল আছে। ডাক্তার বলছে তেমন সিরিয়াস কিছু না। দুই/তিন দিন কেয়ারে থাকলে ভাল হয়ে যাবে। তুমি কেমন আছো?
মাহি: এই তো ভাল। সারা দিন রাত অনেক ধবল ধোলায় গেল। এখন মাত্র ফ্রি হলাম। অন লাইনে এসে দেখি তুমি।
এভাবে ম্যাসেজিং এ দু'জনে কথা বলতে বলতে রাত শেষ হয়ে ভোরের আলোয় চারিদিক আলোকিত হতে থাকে। নতুন একটি দিন শুরু হলো। একটু পর এলাহী ভরসা বাড়ি হৈ চৈ ভরে উঠবে। আজ যে বড় আনন্দের দিন। আজ যে মাহির বিয়ে।