বার্ষিক পরীক্ষা শেষ। প্রচুর বই, খাতা আছে যার আর এখন কোন দরকার নেই (যদিও কোন কালেই ছিল না), তার একটা ব্যবস্থা করতেই হবে। কী করা যায় ভাবছি। দিস্তা দিস্তা নোট খাতা ( যদিও ভেতরে কি আছে, তা আর কোন দিনই জানা সম্ভব হবে না, ইস যদি আমি আমার নোট খাতার মতই জ্ঞানী হতাম তা হলে অন্তত পাশের বাড়ির আন্টির ছেলেকে একবার দেখিয়ে দিতাম আমি কি জিনিস ), প্রচুর বই ( প্রয়োজনের চাইতে অবশ্যই অনেক বেশী, কারন বই আমি কিনেছি, কিন্তু টাকাটা আমার বাপই আমাকে দিয়েছে। যদিও কত গুলো বই কেনার জন্য টাকা নিয়েছি আর কতগুলো কিনেছি তা একটা তর্ক সাপেক্ষ্ বিষয়, আমরা সেদিকে না যাই ) আছে । কিছু একটা করতেই হবে। কি করা যায়? আমার কাছে কিছু আইডিয়া আছে
১) কাউকে বই গুলো দিয়ে দেয়া:
সবচাইতে ভাল হয় যদি এই বই, নোট খাতা গুলো আমার ছোট কাউকে দিয়ে দেই। আামার ছোট ভাইতো কোন ভাবেই এই সব নেবে না। কারন যদি সে এই বই আর নোট খাতা গুলো নেয় তাহলে আমি যে খাতা আর বই কেনার জন্য আব্বার কাছ থেকে টাকা নিয়েছি তা সে কিভাবে নেবে? আমি কি আমার ভাইকে খুবই ভালবাসি? মোটেও না ( বজ্জাত, বদের হাড্ডি সব সময় আমার চুরির টাকার উপর লোভ করে )।যদি আমি তাকে জোর করি এই বই-খাতা ব্যবহার করার জন্য ( অবশ্যই মা-আব্বার মাধ্যমে), তাহলে আমার অনেক গোপন কথা তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসবে। আর আমি চাই না সে বলুক আমার নোট খাতার জন্যই সে পরীক্ষায় খারাপ করেছে। যদিও পৃথিবীর কোন নোট খাতার পক্ষেই তার পরীক্ষার রেজাল্ট ভাল করা সম্ভব না।
তাহলে অন্য কাউকে দেয়া যায়। মানে পাশের বাসার আন্টির ছোট ছেলে, অথবা অমুক খালার চাচাতো খালা শাশুড়ীর ভাগনির ছেলে। কিন্তু এখানেও একটা সমস্যা আছে। প্রথমত আমার বই গুলো আমার বাসার দুষ্ট (আলসে) ইদুর গুলো ব্লেড দিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কেটে নিয়েছে (কিন্তু ওরা কেনযে শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোই নিয়েছে তা আমি জানি না, ওরাও কি এই পরিক্ষা দিয়েছে)। কিন্তু ওনারা ভাববে আমি মনে হয় নকল করেছি। এত বড় ভুল করা যাবে না। জান যাবে কিন্তু মান যাওয়া যাবে না। কারন একবার যদি মান যায়, তাহলে আমার আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস বন্ধ হয়ে যাবে।
আর আমার ভাই যদি এই বই গুলো একবার দেখে তাহলে একবার আমার কাছ থেকে, আর একবার আব্বার কাছ থেকে বই কেনার টাকা নেবে।
আর একটা কাজ করা যায়, তা হল, বই-খাতা (নোট) গুলো কোন গরীব ছাত্রকে দিয়ে দিতে পারি। কিন্তু সমস্যা হয়, ওই ছাত্র যদি বলে, “ ভাই বই দিছেন খুব ভাল কথা। কিন্তু আপনার নোট খাতায় কি কোন গোপন কোড আছে অথবা আপনার নোট খাতা পড়ার জন্য কি ভাই ভাল কোন টিউটোরিয়াল আছে? আর বই গুলো সবই নতুন কিন্তু পাতা এত কম কেন? অনেক সময় দেখি যে ৩০ পৃষ্ঠার পর ৩৪ পৃষ্ঠা “
অনেক সমস্য। তাহলে বই কাউকে দেয়া যাবে না।
২) বই ফেলে দেওয়া:
বই-খাতা গুলো কোন অবস্থাতেই অন্য হাত হওয়া যাবে না। তাহলে একটাই উপায় আছে, তা হল বই গুলো ফেলে দেওয়া। ফেলে দেওয়া মানে ডাষ্টবিনে ফেলতে হবে। কিন্তু ডাষ্টবিনে অনেক টাইপের ময়লা থাকে, সেখানে আমার বই-খাতাও থাকবে। পচা খাবার, ভাঙ্গা প্লেট এর সাথে আমার বই-খাতা থাকবে! তারপর সব এক সাথে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হবে। তারপর সেগুলো কার্বন-ডাই-অক্সাইড হয়ে পরিবেশ দূষণ করবে। ভাবতেই গা শিউরে উঠছে। আমার এতদিনের পড়াশুনার এই ফল। মানুষ হিসেবে নিজেকে ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে। না বই ফেলে দেওয়া সম্ভব না।
৩) বই বিক্রি করা:
বই বিক্রি করাই মনে হচ্ছে সবচাইতে ভাল হবে। কিন্তু বইগুলো কােন পুরাতন বইয়ের লাইব্রেরী কিনবে না (যদি বইয়ের দোকানদার বইগুলো দেখে, তা একটা ভয়াবহ লজ্জার কারন হবে আমার জন্য)। তাই বইয়ের ফেরিওয়ালাদের কাছেই বিক্রি করতে হবে। কারন এত বই কাটাকাটি থাকলেও কোন সমস্যা নাই ( বিক্রি করব কেজি হিসেবে)। আমার বই-খাতা গুলো আবার রিসা্ইক্লিন হবে। হয়ত কোন ঝালমুড়ি ওয়ালা, অথবা কোন আচার ওয়ালারা আমার এই বই-খাতা গুলো ব্যবহার করে তার গ্রাহকদের আপ্যায়ন করতে পারবে। হয়ত আমারই কোন পরিচিত এই বই-খাতায় ঝালমুড়ি অথবা আচার খাবে। কিন্তু তারা কি আমার বই-খাতা চিনতে পারবে। আমি নিশ্চিত, যে তারা কোন অবস্তয়ই চিনতে পারবে না। আচ্ছা আমি কি চিনতে পারবা। আমি নিশ্চিত না। তবে এটা নিশ্চিত যে, ঝালমুড়ি বা আচাড় খেতে সমস্যা হবে না।
আপনাদের কি আরো ভাল কোন আইডিয়া আছে?
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:২৮