মায়াবিনী
লেখা :: Sabuj SB (স্বপ্ন চোর)
,
,
,
সুন্দর তো অনেক ধরনের হয়। অল্প সুন্দর, বেশী সুন্দর, মাঝারি সুন্দর। আরো কয়েক ধরনের সুন্দর আছে বলে মেঘ এর ধারণা। তবে অসম্ভব সুন্দর কাকে বলে তা মেঘ জানত না। জানার কোনদিন প্রয়োজন পড়েনি বলে জানার চেষ্টাও করেনি মেঘ। তবে সেদিন অসম্ভব সুন্দর টাকে সঙ্গায়িত করার চেষ্টা করে মেঘ।
,
তার মতে যে সুন্দরের কোন তুলনা নেই, যে সুন্দরের কোন নাম নেই, ভাষা দিয়ে যে সুন্দর কে প্রকাশ করা যায় না এমনকি বিপরীত কোন শব্দ ও নেই এর তাকে অসম্ভব সুন্দর বলে। না তাও কেন জানি কিছু একটা কম পরে যাচ্ছে সঙ্গায়। মেঘ ভাবতে থাকে ঠিক কি কম পড়ল।
,
,
তবে দুরন্ত এই ছেলে মেঘ যার প্রেম ভালোবাসার প্রতি বিশ্বাস নেই। সারাদিন দুষ্টামি আর দুরন্তপানা নিয়ে মেতে থাকা ছেলের এরকম একটু ভাবার ও যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
,
সেদিন মেঘ তার বন্ধুদের নিয়ে পাড়ার মোরে আড্ডা দিতে ছিল। কোনদিকে খেয়াল ছিল না তার। কখন যে রাস্তার মাঝ বরাবর চলে গিয়েছিল টের ও পায় নি। হঠাৎ রিকশার বেল এর শব্দে যেন জ্ঞান ফিরে পায় মেঘ। রিকশাওয়ালা বলে ওঠে কি মামা পাশে যাবেন তো? কিন্তু মেঘ তখন পাশে যাওয়ার মত অবস্থায় ছিল না মেঘ। নিজেকে যেন নতুন রুপে দেখতে পায় মেঘ। কারণ রিকশায় একটি মেয়ে বসা ছিল। মেয়েটি মানুষ না পরী তা ঠিক আন্দাজ করতে পারলো না মেঘ। শুধু ছোট্ট করে বলল মায়াবিনী। যেটা কেউ শুনতে পায় নি।
,
,
মেঘের বন্ধুরা ধরে ওকে পাশে আনল । মেঘ ওর বন্ধুদের জিজ্ঞাসা করল মেয়েটা কে রে? তবে কেউ ই মেয়েটাকে চেনে না মেঘ এর বন্ধুদের মধ্যে।
মেঘ শুধু ওর বন্ধুদের বলল একটু খোঁজ নিস তো। বলেই বাসার দিকে চলে গেল।
,
,
ওর বন্ধুরা একে অন্যকে বলতে লাগল ছেলের হয়ে গেছে। মেঘের প্রায় সব বন্ধুই প্রেম করত। তাই মেঘ কে প্রেম করানোর জন্য সবাই মেয়়েটার খোঁজ করতে লাগল।
,
,
ওদিকে মেঘ শুধু বাসায় বসে ওই মায়াবিনীকে আর তার মায়াবী চেহারাকে বিশ্লেষণ করতে থাকে। তার টানাটানা চোখ, কমলার মত ঠোঁট, হাসলে গালে টোল পরে, একরাশ মেঘকালো চুল। সব মিলিয়ে মায়াবিনী। সারারাত এই নিয়েই কেটে যায় মেঘ এর।
,
,
পরেরদিন মেঘ তার বন্ধুদের কাছে মেয়েটির সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। কিন্তু কেউ ই সঠিক কোন জবাব দিতে পারল না। হঠাৎ রবিন যেন কোথা থেকে হাপাতে হাপাতে এল। এসে বলল আমি সব জেনে এসেছি মেয়েটির সম্পর্কে।
সবার তারা পেয়ে নবীন বলতে লাগল,,,,,,, মেয়েটির নাম নীলাঞ্জনা। বাসার সবাই নীলা বলে ডাকে। আমাদের পাড়ায় মেয়েটি নতুন এসেছে।
,
,
মেঘ বলে আহহ কি সুন্দর নাম।
,
,
কথাটা বলতে মেঘ এর একটু সময় লাগলেও ওর বন্ধুরা ওকে টিটকারি মারতে একটু সময় ও নিল না।
,
ওরা বলতে লাগল। ,,,,,,,, কই গেল তোর প্রেমের বিপক্ষে ডায়লগ? তুই নাকি প্রেম বিশ্বাস করিস না তাহলে এখন?
,
,
মেঘ সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বলল আচ্ছা তোদের কাছে হার মানলাম। এখন বল কিভাবে ওকে বলব?
,
এই কথা শোনার পর সবাই হো হো করে হেসে উঠল। নাইম সবাইকে বলল তোরা হাসিস না। মেঘ তো কখনো কাউকে প্রোপোজ করেনি। ওর কাছে এরকম হওয়াটাই স্বাভাবিক।
,
,
কিন্তু সবাই একসাথে ভেবেও কোনো সুরাহা করতে পারল না। কারণ মেয়েটা একটু আলাদা কারো সাথেই কথা বলে না।
,
,
ওদিকে মেঘ আর পারছে না। শেষে মেঘের বন্ধুরা সিদ্ধান্ত নিল যে মেঘ নিজে গিয়েই নীলা কে বলবে। কারণ মেঘ এর কোন বন্ধুর সাথে নীলা কথা বলেনি। মেঘ শেষমেষ কোন পথ খোলা না দেখে রাজি হয়ে যায়। কিন্তু ঠিক কি বলবে বুঝতে পারে না। তাও অনেক কষ্টে বন্ধুদের কাছে থেকে একটু শিখে নীলার সামনে যায় মেঘ। তবে ভালোবাসা কেউ কাউকে শিখিয়ে দিতে পারে না।
,
,
ওদিকে নীলাও মেঘ কে একটু একটু পছন্দ করে।
,
মেঘ নীলার সামনে গিয়ে কাপা কাপা কন্ঠে বলে, তোমার সাথে একটু কথা বলতে পারি?
,
নীলা তার ব্যাগ টা খুলে। ব্যাগ খুলতে দেখে মেঘ কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।
,
কিন্তু নীলা ব্যাগ থেকে একটা ডায়েরী বের করে এবং লিখে আমি কথা বলতে পারি না। মেঘ এর দিকে ডায়েরী টা এগিয়ে দেয়।
,
মেঘ কথাটা পড়ে কিছুটা আঘাত পেলেও নিজেকে সামলে নেয় এবং মনে তোমার মন থেকে সারাজীবন আমার সাথে কথা বলবে?
,
মেঘ কে ফিরিয়ে দেওয়ার মত ক্ষমতা নীলার ছিল না। নীলা কেঁদে ফেলে আর মেঘ তাকে পরম যন্তে বুকে আগলে ধরে।
,
,
,
ভালোবাসা মুখের কথার কাছে জিতে গেল।