পার্কের কোন এক বেঞ্চিতে একা একা বসে থাকাটা হয়ত মানানসই না। স্বভাবগতই একা বসে থাকা লোকটার দিকে সবাই একটু আলাদা দৃষ্টিতে তাকায়। তবে যখন মানুষ একাকী বসে থাকে তখন কে কেমন তাকালো তা দেখার উদ্দেশ্য থাকে না।
,
কোন এক বিকেলে মেঘ নামের ছেলেটাও এভাবেই বসেছিল। তখন সময়টা বিকেল পাঁচটা হবে। বিকেল গাড় হলে যদি সবাই ভর বিকেল বলত, তাহলে আমিও এখানে ভর বিকেল শব্দটা ব্যবহার করতাম ।
কিন্তু ভর শব্দটা শুধুমাত্র দুপুর এর সঙ্গেই মানায়। ভর বিকেল বললে কেমন যেন খাপছাড়া লাগে।
,
,
যদিও মেঘ একাই বসে আছে, তাই বলে সে যে কারো জন্যে অপেক্ষা করতেছে তা কিন্তু না। আসলে যার জন্য অপেক্ষা করার কথা সে তো এক বছর আগেই চলে গেছে। মেঘ বসে প্রতিটা জুটির দিকে লক্ষ করতেছে। আর ভাবতেছে সে ও সবার মত এরকম একটা সময় অনেক সুখের মুহূর্ত কাটিয়েছে। তাও আজ মেঘ নিঃসঙ্গ। কেউ নেই তাকে সঙ্গ দেওয়ার। তাইতো এখানে এসে বসে থাকে মাঝেমাঝে ।
,
,
কি যেন মেঘ হঠাৎ একটা গভীর ভাবনায় ডুবে গেল।
,
বছরখানেক আগের একদিনের কথা, মেঘ এর ফোন বেজে চলেছে আর মেঘ নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। ওদিকে প্রজাপতি অপেক্ষা করতে করতে পাগল হয়ে যায়। কোনদিক না ভেবে সোজা মেঘের বাসায় চলে আসে প্রজাপতি।
দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে ডেকে তুলে মেঘ কে, দরজা খুলে মেঘ হতভম্ব হয়ে যায়, তার মনে পরে আজ প্রজাপতির সাথে দেখা করার কথা ছিল। আর মেঘ তো তা ভুলে ঘুমাচ্ছিল।
,
প্রজাপতি রাগে গজগজ করতে করতে জিজ্ঞাসা করে.........
-তোমার ফোন কই?
-না মানে।
-কি মানে মানে করতেছো? যা জিজ্ঞাসা করছি কানে যায় না?
-ফোন খাটে আছে ।
-দেখো কয়বার কল দিছি?
,
মেঘ ফোনের দিকে তাকিয়ে ৪০ টা কল দেখা মেঘ কিছুটা লজ্জা পায়। পরে প্রজাপতির দিকে নিচু চোখে তাকায়। প্রজাপতি বলে যাও ফ্রেশ হয়ে তারাতারি তৈরি হও। মেঘ ফ্রেস হতে গেলেই প্রজাপতি রুমের দিকে তাকিয়ে বলে, কি অবস্থা করে রেখেছে দেখ রুমের? প্রজাপতি রুম টা ঠিক করে গুছিয়ে রেখেছে। মেঘ এসেতো পুরা টাস্কি খেয়ে যায় সাজানো গুছানো রুম দেখে।
,
,
,
এরপর তারা দুজনে বের হয়ে পার্কের দিকে যায়। প্রজাপতি যতটা রেগে ছিল এখন অবশ্য রাগ কিছুটা কম। কিন্তু যখন তারা দেখে তাদের পরিচিত বেঞ্চ টাতে কারা যেন বসে আছে। প্রজাপতি আবার রেগে ওঠে। সোজা গিয়ে সেই মানুষগুলোর সাথে ঝগড়া বাধিয়ে দেয়। তারা ভয় পেয়ে উঠে চলে যায়। এই নিয়ে মেঘ আর প্রজাপতি সেদিন অনেক হেসেছে। মেঘ জিজ্ঞাসা করা, তুমি কি বললে ওদের? প্রজাপতি বলে, বলেছি এটা আমাদের বেঞ্চ। তোমরা বসেছো কেন? আর তারা আমতা আমতা করতে করতে উঠে চলে গেল।
,
মেঘ ঘোরের মধ্যে থাকা সত্বেও, স্মৃতিগুলো মনে করে একটু একটু হাসতেছে।
,
একটা ছোট্ট মেয়ের ডাকে মেঘ এর ঘোর ভাঙে। মেয়েটাকে মেঘ চিনতে পারে। মেয়েটাকে একবার মেঘ, আর প্রজাপতি অনেক জামাকাপড় কিনে দিয়েছিল, মেয়়েটা অনেক গরীব। পার্কে ফুল বিক্রি করে। মেয়েটি জিজ্ঞাসা করে
-ভাইয়া, আপু কোথায়?
-তোমার আপু চলে গেছে।
-কোথায়?
-বিদেশে।
-আর আসবে না?
-না তোমার আপু আর একটা ভাইয়ার সাথে বিদেশে চলে গেছে।
বলেই মেঘ হুহু করে কেঁদে ওঠে। এতদিন মেঘ একবার ও কাঁদেনি। কিন্তু এই ছোট্ট মেয়েটার প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে মেঘকে কাঁদতে হয়।
,
মেয়েটা মেঘের চোখের জল মুছিয়ে দেয় আর বলে ভাইয়া আপু একদিন ফিরে আসবে।
মেঘ মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে, আর ভাবে ও আর কোনোদিন ফিরে আসবে না, ওর যে বিয়ে হয়ে গেছে। ও তো অনেক সুখে আছে।