ভাইয়ার স্কুল বন্ধু নুরন্নবি গত হয়েছেন। তাকে নিয়ে এটা ভাইয়ার মৃত্যু পরবর্তী দ্বিতীয় পোষ্ট ফেইসবুকে। প্রথমটাও আমার এখানে সামু ব্লগে শেয়ার করেছি, এটাও করলাম।
Syed Ahmed Shameem
12m ·
প্রাণের দোস্তকে নিয়ে আরও কী লিখবো আল্লাহ জানে
আত্মার যে চোখ তাকে তো আমরা দেখি না
তথাপি আত্মার চোখে দেখি
আত্মাকে আমাদের চর্মচক্ষুর পাতে রেখে যখন তাকাই, চক্ষের দীনতা সত্ত্বেও, জগত আনন্দে ও ভয়ে বিহ্বল হয়ে পড়ে, ও রকম চর্মচক্ষের গভীরতা আমি পেতাম আমার মরহুম বন্ধু নুরুন্নবীর কণ্ঠে : দোস্ত, আমি ঘরবাড়ী বানাইছি দেখতে আসিও!
টলস্টয়ের গল্প না থাকলে নুরুন্নবীকে আমি ব্যাখ্যা করতে পারতাম না।
একবার তার বাড়ীতে গিয়েছি রাত্রি বেলা অনেক বছর পর, সে কী আশা করেছিল আর তার স্ত্রী কন্যা পরিজন পুছল না এ তোমার বাল্যের প্রিয় বান্ধব কিনা
এই ঘটনার কোনো আঞ্চলিক ভাষা ব্যাখ্যা না দিয়ে কেবল অজাগতিক করুণ এক হাসি হেসেছিল
নুরুন্নবীর দুঃখগুলো ফাদার সিয়ের্গি গল্পের পাশেনকার মতো, হয়তো অত গৌরবের নয় তথাপি তার দুঃখের নিচে পিংক কালার মেঘ ভেসে বেড়াতো হেসে হেসে
প্রাণের দোস্ত আত্মার বন্ধু এই শব্দগুলো আমি কোনোদিন বলতাম না নুরুন্নবী মারা না গেলে
অথচ এই অসংস্কৃত কালারলেস শব্দগুলোর মাঝে তেতাল্লিশ বছর ধরে সত্যসাধ লুকিয়ে ছিল!
নুরুন্নবীকে আমি আসলে চিনেছিলাম! নিজের প্রতি মূর্খ সরল পাগল যা তা ইত্যাদি আরোপের পর সে হা হা করে হাসতো। পাগলামি দেখে আমি অট্টহাসি দিতাম না কিন্তু এক অবিচ্ছিন্ন রম্যভাব দলবেঁধে আমার মনে ঘুরতো, অন্তর্গত এক হাসির রোল পেটের চাম ব্যথা করে দিত। এগুলো আমার আর নুরুন্নবীর যৈবক বয়স পর্যন্ত ঘটনার ইতিহাস। ঐসময় তরুণদের যেসব যৈবককালিন আন্তঃঅনাচার, নুরুন্নবী সেসব হতে অন্তত আমার অভিজ্ঞতায় আশ্চর্য মুক্ত। সে নিজেকে কখনও এতিম বলত না কিন্তু এতিমের এক আশ্চর্য সৌন্দর্য তার বিশাল শরীরজুড়ে ছায়া ছায়া ঘুরে বেড়াত আর প্রতিকার হিসেবে আমি তার আত্মঅবমাননামূলক সমস্ত হাসিঠাট্টা সরল অথচ বলিষ্ঠ রম্য বাক্যাবলী এমন সাদরে উপভোগ করতাম, সে কৃতার্থ হয়ে কেঁদে দেবার বদলে হেসে দিত। আমাকে সে কী মনে করতো স্পষ্ট কোনোদিন বলেনি। আমি যে লেখিটেখি এটা হয়তো তাঁকে আশ্চর্য অভিভূত করে দিত। আমিতো লেখার ভান করতাম খ্যাতির লোভে। মেহের আফজল হাই স্কুলে বাপের কবিতাখাতা নিজের নামে প্রচার করে দারুণ সাড়া ফেলে দিয়েছিলাম। আমার চোখে অভিজাত ছাত্র টিটু(পুরো নাম মনে নাই) বলেছিল, শামীম আমার আপা তোমার কবিতার খাতাটা নিতে বলেছে! এইরকম কবিখ্যাতি। একটুও গ্লানি আসে নাই যে পুরা খাতাটাই বাপের লেখা পদ্য দিয়ে ভরা। স্কুলের বাংলা স্যার(ইব্রাহিম স্যার?) পদ্যগুলো পড়ে বেকুব বনে গিয়েছিলেন। বলেছিলেন, তুমি লিখেছ! শরমে মরে যাই আরকি। তবে শেষের দিকের কয়েকটা পদ্য স্বরচিত ছিল। হাতের লেখা দুইরকম অথচ কারো নজরে পড়লো না। এইরকম দুর্ধর্ষ খ্যাতির কালে নুরুন্নবীর সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়ে গেল!
প্রায় অবসরে তাঁর বাড়ীতে যাই। দুইজনে কী কী কথা বলি। স্কুল লেখাপড়া এসব কোনোদিন আলোচনার বিষয় ছিল না। আমি তো কবি। আর নুরুন্নবী পাগল। কোথায় লেখাপড়া। সে কারাতে শিখতো শাহজাদার কারাতে স্কুলে। বাড়ীর বাগানে সেসব প্রাকটিস করতো। মাঝে নেসাগু(মাঝে লোহা স্টিলের চেইন দুইদিকে কাঠের দুটি দণ্ড)র নেশা পেয়ে গিয়েছিল। আশ্চর্য দক্ষতা। কিন্তু মনে মনে আমি এসবের প্রতিপক্ষ খুঁজে নাকাল হয়ে যেতাম। নুরুন্নবী এসব ডেশিং একশন কার ওপর প্রয়োগ করবে! তার কোনো শত্রু আবিষ্কার করতে না পেরে কেমন যেন আউলবাউল লাগতো। সামনে কোনো সম্ভাব্য দুশমন না থাকলেও কীসের প্রেরণায় কারাতে, নেসাগুর পেছনে সে জীবনযৈবন ঢেলে দিয়েছিল, তখন বুঝতাম না। এখন বুঝি। সে আসলে কবি। সৃজন বিনে এক মুহূর্ত থাকতে পারে না। যখন কিছু করতো না শুধু কথা বলতো। আত্মঅবমাননামূলক রসিকতা।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০২৩ সকাল ১০:০৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



