গাড়িতে উঠার আগেই আমার একটু সন্দেহ হয়েছিল। এই প্রথম ঢাকা শহর এলাম, চেনাজানা পরিচিত কেউ নেই। একটা বিশেষ কাজে এসেছিলাম রাতের ট্রেনে ফিরে যাব। পুরোটা দিন কী করা যায় ভাবতে ভাবতে ভাবলাম চিডিয়াখানা ঘুরে আসি। দেখাও হল সময়ও পার হল। গাড়িতে উঠে কেমন যেন অস্বস্থি লাগছে। ড্রাইভারকে সুবিধার মনে হচ্ছেনা। সারাক্ষণ মোবাইলে কথা বলছে। বারবার মনে হচ্ছে মাঝপথে দুইপাশে দুই প্যাসেঞ্জার তুলে আমার কাছে যা আছে সব ছিনিয়ে নেবে। নিউজ পত্রিকায় এমন ঘটনা প্রায়ই দেখি, ঢাকাতে খুব বেশী হয়, বিশেষ করে সিএনজি অটো রিকশায়।
ভয় কাটানোর জন্য ড্রাইভার এর সাথে আলাপ জুড়ে দিলাম। ভাই আপনার নাম কী? বাড়ি কোথায়? ইত্যাদি। সেও প্রশ্নের জবাব দিচ্ছে কিন্তু মন থেকে বলছে সেটা বুঝা যাচ্ছেনা। প্রশ্ন করলে জবাব দিচ্ছে এবং সেটা কেমন যেন মন ভারভার ভাব নিয়ে। কথা বলে জানা গেল গ্রামে তার মুদি দোকান ছিল এবং বেশ ভালই চলছিল। দুই মেয়ে। বড়জন চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে আর ছোটজন মাত্র নয় মাস।
গুণেগুণে সাতটা বছর পার হল সে ঘরছাড়া। রাজনীতি করত। প্রতিপক্ষ দল এখন ক্ষমতায়। তার নিজের দোকানটা ভেঙ্গে দেবার পর পরিবারও পাঠিয়ে দিয়েছিল শ্বশুর বাড়িতে। এখনো সেখানে আছে। মাসে একবার গিয়ে দেখা করে আসে। নিজের এলাকায় যাওয়া নিশেধ। কালভদ্রে কোন কাজে গেলেও চুপিসারে চলে আসে। ঢাকায় এসে প্রথমে রিকশা চালিয়েছিল, পরে সিএনজি অটোরিকশা চালনা শিখে। ভেবেছিল এবারের নির্বাচনের আগে ফিরে যাবে ঘরে, কিন্তু মনে হয়না যাওয়া সম্ভব হবে, পরিস্থিতি সুবিধার নয়।
কথাগুলো শুনছিলাম মন দিয়ে, আবার কল আসল তার মোবাইলে। ওকে ওকে জি জি টাইপ কিছু কথাবার্তা। তারপর গাড়ি সাইড করল। আমাকে বলল ভাই নামেন চলে আসছি। তায় নাকি বলে আমিও নেমে ভাড়া দিতে যাব এমন সময় ওনি বলে উঠলেন, না ভাড়া লাগবেনা। আপনার সাথে কথা বলে ভাল লেগেছে, ভাড়া নেবনা। কিন্তু চিড়িয়াখান দেখছিনা, কোথায় জিজ্ঞেস করতেই বলল রাস্তার ওপারে। সে চলে গেল কিন্তু আমি পড়লাম এক ঘোরের মধ্যে। জায়গাটা কেমন চেনাচেনা মনে হচ্ছে। রাস্তার ওপারে তাকাতেই দেখি সংসদ ভবন। তাইতো, ভাবছি চেনাচেনা লাগছে কেন! টিভিতে কতোবার দেখা হয়েছে জায়গাটা।
রাস্তা পার হতেহতে ভাবছি, সে কেন এখানে নামিয়ে দিল! ভাড়াও নিলনা। আমিতো যেতে চেয়েছি চিড়িয়াখানা, সে কেন আমাকে সংসদ ভবন এলাকায় নামিয়ে দিল.....
(অণুগল্প লেখার চেষ্টা কিন্তু হয়ে উঠেনি)
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:৫৯