‘ভালো করে দেখলে এখানে নাত্থার পায়ের চিহ্ন দেখা যাবে। পলায়ন বলেন বা অন্য কিছু, নাত্থাজি তার অন্তিম আসন এখানেই বসিয়েছিলেন। আর সে আসনের নির্গত ফল এখানেই আছে। সবাই যা পায়খানা নামেই জানে, তা এখানেই দেখা যাবে। আপনি এটা দেখে নাক মুখ কুঞ্চিত করবেন না। মানুষ যত দিন বেঁচে থাকবে তত দিন তার মলমূত্র প্রবাহিত হবেই। মনোবিজ্ঞানীদের দাবি, কোন ব্যক্তির মল তার মানসিক অবস্থার জানান দেয়। মল দেখেই মানসিক অবস্থা সম্পর্কে জানা যায়। কিন্তু এখানে অনেক রঙের মিশ্রণ দেখা যাচ্ছে। এ জন্য কোনো সিদ্ধান্ত টানার আগে চাইব যেন মনোবিজ্ঞানীদের রায় নেওয়া হয়। কেননা নাত্থাজি একজন সাধারণ কেউ নয়।’
লাইভ রিপোর্টিংয়ের এই নমুনাটি নেওয়া হয়েছে আমির খান প্রোডাকশনের পিপলি লাইভ চলচ্চিত্র থেকে। বাস্তব নয়, চলচ্চিত্রে পিপলি থেকে কুমার দিপক দিচ্ছিলেন এই বর্ণনা। অভাবে জর্জরিত নাত্থা রাম মণিপুরির আত্মহত্যার ঘোষণা গণমাধ্যমে এলে তার গ্রাম পিপিলিতে স্যাটেলাইট নিউজ গ্যাদারিং মেশিন নিয়ে ভিড় জমায় অনেক চ্যানেল। সাংবাদিক-নিরাপত্তারক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে নিখোঁজ হয় নাত্থা। সেই দিনে চলচ্চিত্রে যেসব লাইভ দেখানো হয়, এটি তারই একটি। লাইভ রিপোর্টিংয়ের এই দৈন্য এবং ব্যঙ্গাত্মক উপস্থাপনায় দর্শকদের হেসে গড়াগড়ি করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। বর্ণনাটি নিজেই রিপোর্টারের সাধারণ জ্ঞান, সংবাদ বিষয়ে তার ধারণা এবং দর্শকদের প্রতি তার দায়বদ্ধতা প্রকাশ করেছে চলচ্চিত্রে। অভিনয় হিসেবে তা দুর্দান্ত। কেননা, কথার সঙ্গে মিল রেখে বসা, দাঁড়ানো এবং বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ছিল বেশ।
যা হোক, এই উদাহরণ না টেনেও রচনাটি শুরু করা যেত। কিন্তু লাইভ সংবাদ প্রচারের ঝুঁকি এত সহজে বলা যেত না। বলা হয়, ক্যামেরা খুব নিষ্ঠুর। সে প্রচার করে বাস্তবতা। এই বাস্তবতা বলতে একজন মানুষের চেহারা কেমন তার হুবহু প্রচার বোঝায় না। মাথার চুল, কাপড়ের রং ঠিক আছে কি না, তা বোঝায় না। ক্যামেরা শুধু দৃশ্যের প্রচার নয়, বরং চেহারার পেছনে ব্যক্তির জানার দৌড়টিও প্রকাশ করে। এই প্রকাশটি হয় নীরবতা ভাঙার মাধ্যমে। যদিও আমাদের দেশে নীরবতাকে বেশ মূল্যায়ন করা হয়। বলা হয় নীরবতা হিরণ¥য় বা মৌনতা সম্মতির লক্ষণ। এ জাতীয় প্রবাদ প্রবচন নীরবতাকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করলেও, সামান্য কয়েক সেকেন্ডের নীরবতা ধূসর করতে পারে একজন চৌকস স¤প্রচার সাংবাদিকের ইমেজ। লাইভে তাকে কথা বলতে হবে অনর্গল এবং বলতে হবে সংবাদ উপযোগী সব তথ্য। একজন অভিজ্ঞ সাংবাদিকের পক্ষে লাইভে ভালো করা সহজ, কিন্তু অপেক্ষাকৃত নতুন সাংবাদিক এই লাইভে তার অনেক সিনিয়রদের টপকে বেশি মানুষের হৃদয়ে নাম লিখে দিতে পারেন। এ প্রসঙ্গে তুষার আবদুল্লাহর লেখা ঐতিহ্য থেকে প্রকাশিত ‘রিপোর্টার’ বই থেকে এক প্যারা পড়ে নেওয়া যায়। বইটিতে তুষার আবদুল্লাহ লিখেছেন, ঘটনাস্থল থেকে লাইভ স¤প্রচার একুশে টেলিভিশনেও হয়েছে। একুশের রিপোর্টাররা নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে ২০০১ সালের নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা এবং চারদলীয় জোট জয়ী হওয়ার পর বঙ্গভবন থেকে মন্ত্রিপরিষদের শপথ অনুষ্ঠান সরাসরি স¤প্রচারে অংশ নেয়। এ ছাড়া লঞ্চডুবি, বোমা বিস্ফোরণের মতো ঘটনায় লাইভে অংশ নেওয়ার মতো অভিজ্ঞতাও তাদের ছিল। এরপর লাইভ নিয়ে বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে লাইভের জোয়ার ওঠে। বিশেষ করে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর চারদলীয় জোট সরকারের বিদায়, তারপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন প্রক্রিয়া, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সংলাপ প্রক্রিয়া চলাকালীন রিপোর্টাররা লাইভ এ অংশ নিতে থাকেন। এ সময় অনেক নতুন মুখ লাইভ স্বতঃস্ফূর্ত সামাল দিয়ে দর্শকদের নজর কাড়েন। পুরোনো রিপোর্টাররা বরং এ যাত্রায় অনেক পিছিয়ে পড়েছিলেন। (পৃষ্ঠা ৯৪)
স¤প্রচার সাংবাদিকতায় লাইভ রিপোর্টিং বা সরাসরি প্রতিবেদন এখন নতুন একটি মাত্রা এনেছে বাংলাদেশে। এ দেশের মানুষ যেমন এটিকে গ্রহণ করেছেন ভালোভাবে, তেমনই সংবাদ প্রচারেও বৈচিত্র্য আনার সুযোগ বেড়েছে অনেকখানি। এখন অপটিক ফাইবার বা ইন্টারনেট ব্যবহার করে ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত কিংবা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংবাদ সংগ্রহ করা সহজ হয়েছে। সহজলভ্য হয়েছে প্রযুক্তিও। আজ থেকে মাত্র এক দশক আগেও তা এত সহজ ছিল না।
কিন্তু ইটিভি বন্ধের পর ঘটনাস্থল থেকে সরাসরি স¤প্রচারে আগ্রহী দেখা গেছে চ্যানেল আই ও এটিএন বাংলাকে। এখনো উৎসব সরাসরি স¤প্রচার ছাড়াও সংবাদে সরাসরি প্রতিবেদন প্রচার করতে পিছপা নয় এই চ্যানেল দুটি। তবে ২০০৫ সালে বইমেলা থেকে মাসব্যাপী সরাসরি অনুষ্ঠান ও সংবাদ স¤প্রচার ছাড়াও রমনার বটমূল থেকে ছায়ানটের বর্ষবরণ সরাসরি স¤প্রচার করে তখন নন্দিত হয় চ্যানেল আই। সে সময় চ্যানেল আইয়ে কর্মরত থাকার সুবাদে সরাসরি স¤প্রচারে আমারও হাতেখড়ি হয়েছে সেখানেই।
লাইভ রিপোর্টিংয়ের আগে একটি এজ লাইভ প্রতিবেদন করার অভিজ্ঞতা হয়েছে চ্যানেল আইতে। এজ লাইভ করা সহজ, স্টেশনের কাছের কোনো একটি ঘটনাস্থলের বর্ণনা দিয়ে, পাঁচ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যেতে হয় নিউজরুমে। তা একবার দেখে সরাসরি স¤প্রচার করা হয়। বিশেষ করে থার্টি ফার্স্ট রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্ণনা এক বছর এভাবেই প্রচার করতে হয়েছিল। সে ২০০৫-এর আগের কথা। পরে চ্যানেল আই লাইভে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করে। এখন অনেক নতুন চ্যানেলে এজ লাইভ প্রচার করা হলেও সে সংখ্যা হাতে গোনা। বরং চ্যানেলগুলো ক্যাবলের মাধ্যমে কিংবা এসএনজির মাধ্যমে একাধিক ক্যামেরা ব্যবহার করে ঘটনাস্থল থেকে ফুটেজ সম্পাদনা করে সরাসরি সংবাদ প্রচার করার দক্ষতা অর্জন করেছে। এমনকি গত সাধারণ নির্বাচনে বাংলাভিশন বিভাগীয় শহরগুলোতে স্টুডিও বানিয়ে সেই শহর থেকে সরাসরি নির্বাচনের সংবাদ প্রচার করেছে। বাংলাভিশনের সংবাদ উপস্থাপকেরা সেসব শহর থেকে সংবাদ উপস্থাপন করছেন। বিষয়টি অনেকটা বিবিসির হাবের মতো। নির্বাচনী টক শোতেও একই সঙ্গে বিভিন্ন শহরে অবস্থানরত ভিন্ন ভিন্ন দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের একসঙ্গে হাজির করা হয়েছে বাংলাভিশনের পর্দায়, যা দর্শকপ্রিয়তার বিচারে বাংলাভিশনকে এক ধাপ সামনে নিয়ে গেছে।
এখন অবশ্য বড় বড় ইভেন্টে প্রতিযোগিতামূলকভাবেই লাইভ স¤প্রচার করে চ্যানেলগুলো।
যা হোক, নির্বাচন জাতির একটা বড় ঘটনা। সারা দেশের মানুষ এ সময় পুরো দেশের বা নিজের এলাকায় কী ঘটছে, তা জানতে চোখ রাখে গণমাধ্যমে। ঘটনারও দ্রুত পরিবর্তন হয়। ফলে, টাটকা খবর জানতে মানুষের আগ্রহ থাকে বেশি। এই আগ্রহই সংবাদ নির্বাহীদের লাইভ স¤প্রচারে আগ্রহী করে। এই বিবেচনায় নির্বাচন ছাড়াও জাতীয় সংকটে লাইভ স¤প্রচার চ্যানেলের দর্শক বাড়ায়। কারণ সংকটে মানুষ চোখ কান খোলা রাখতে চায়। এ জন্য এক-এগারোর আগে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের সময়ে বঙ্গভবনের সামনে দিনের পর দিন পরে থেকেছে সাংবাদিকেরা লাইভের সরঞ্জাম নিয়ে। বড় দুর্ঘটনাও মানুষের নজর কাড়ে। তারা জানতে চান কতজন উদ্ধার হলো। বড় অপরাধী আটক বা প্রতিষ্ঠিত কোনো ভবনে অগ্নিকাণ্ডও সে বিবেচনায় লাইভ প্রচারের দাবি রাখে।
শুধু নেতিবাচক সংবাদেই মানুষের আগ্রহ আছে এমনটি নয়। বাঙালির প্রাণের মেলা বইমেলা নিয়েও মানুষের আগ্রহ কম নয়। বর্ষবরণে রমনা পার্ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে মানুষের যে সমাগম হয়, তা অতুলনীয়। ২১ ফেব্র“য়ারি শহীদ মিনার থেকে, ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় স্মৃতিসৌধ থেকে নেতা-জনতার শ্রদ্ধা জানানো সরাসরি সম্প্রচার করা হলে তা মানুষের মনোযোগ কাড়ে।
লাইভে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ঘটনাস্থল থেকে স্টুডিওর সঙ্গে সংযোগ করা। এ কাজটি অবশ্যই প্রডিউসার লক্ষ রাখবেন। অর্থাৎ একজন প্রডিউসার, স¤প্রচার প্রকৌশলীদের সহায়তায় কারিগরি বিষয়গুলো ঠিকঠাক করে রাখবেন আগে থেকেই। সাংবাদিককে শুধু সংবাদ সংগ্রহ ও প্রচারের জন্য নিযুক্ত করা হলেও বাস্তবতা অবশ্য এ ক্ষেত্রে ভিন্ন। দেখা যায় ঘটনাস্থলে তার টানা থেকে শুরু করে অনেক কাজেই টিমওয়ার্কের অংশ হিসেবেই ঝাঁপিয়ে পড়েন সাংবাদিক।
লাইভে রিপোর্টার কী বলছেন, তার গুরুত্বও কম নয়। আগে থেকেই রিপোর্টিংয়ের পুরো বিষয়টি মাথায় গুছিয়ে নিতে হবে। ব্যাপারটি ঠিক মুখস্থ নয়, তার চেয়ে একটু বেশি, বুঝে নিতে হবে। তথ্য হাতে থাকলেই লাইভ প্রাণবন্ত হয় না, তথ্যকে জাদুকরি বাচনে উপস্থাপন করতে হয়। তবে তা আবৃত্তি নয়, বিনয়ী কিন্তু দৃঢ় গলায় জানাতে হবে।
এ জন্য ঘটনা, ঘটনাপ্রবাহ, এ বিষয়ে জনমত কোন দিকে যাচ্ছে, তা জানা থাকা চাই সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের।
লাইভে সম্পাদনার কোনো সুযোগ নেই। যাদের সুলিখিত প্রতিবেদন সম্পাদনার কলমে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে, তাদের জন্য লাইভ রিপোর্টিং একটি ভালো সুযোগ, বিশেষ করে নিজের দক্ষতার প্রমাণ রাখার জন্য। এখানে নিজেকেই সম্পাদনা করতে হবে। যা বলা হচ্ছে তা রিপোর্টারের একান্ত নিজস্ব। এ যেন সে তীর, যা ছোড়া হয়েছে, একে আর ফেরানোর কোনো উপায় নেই। ফলে, সাংবাদিকতার নীতিনৈতিকতা, মানহানি, নিজ নিজ স্টেশনের সম্পাদকীয় কৌশল সম্পর্কে প্রতিবেদকের আগেই জানা থাকা উচিত, অন্তত জাতীয় স্পর্শকাতর কোনো বিষয়ে লাইভে যাওয়ার আগে।
ধরা যাক, কোনো একটি বিক্ষোভের সরাসরি সংবাদ দেওয়া হচ্ছে, যার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ, তার নামে অকথ্য গালাগালি করা হচ্ছে মিছিলে। লাইভে কী বলবেন সাংবাদিক? হুবহু গালি তুলে দেবেন? বলবেন ‘ক’ কে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করা হয়েছে মিছিলে? নাকি বলবেন ‘ক’-এর তীব্র সমালোচনা করেছে বিক্ষোভকারীরা? এসব বিষয় আগেই ঠিক করে রাখতে হবে।
ধরা যাক, তত্ত্বাবধায়ক সরকারে কাদের নাম আছে, তা লাইভে জানাতে হবে প্রতিবেদককে। এরই মধ্যে তিনি উপদেষ্টাদের নাম জেনে বসে আছেন। সরকারিভাবে ঘোষণা দেওয়ার তখনো বাকি। কী করবেন প্রতিবেদক? তিনি কি সরকারি ঘোষণার আগেই নাম বলবেন? নাকি বলবেন, ক কিংবা খ-এর নাম উপদেষ্টা হিসেবে শোনা যাচ্ছে, তালিকায় পরিবর্তন আসতে পারে। ঠিক করে নিতে হবে বার্তা সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলে। এভাবে নীতিনির্ধারণী বিষয়ে লাইভেও একটা সম্পাদনা আরোপ করা যায় বটে, কিন্তু কোন কথাটি কীভাবে বললেন প্রতিবেদক, তার ওপর কোনো সম্পাদকীয় কাটছাঁটের সুযোগ থাকছে না লাইভে। তাই, ঘটনাস্থলে প্রতিবেদকের মাথা ঠান্ডা রাখা জরুরি। দেখা গেল, রিপোর্টার অন এয়ারে, প্রেজেন্টার তাকে স্বাগত জানাচ্ছেন, কিন্তু সেদিকে লক্ষ নেই তার। তিনি ধমকাচ্ছেন প্রডিউসারকে। দারুণ বেমানান একটি বিষয়। আবার রিপোর্টারের কথা শেষ হয়নি, তার মুখের ওপর লাইন কেটে দেওয়া হলো, সেটিও বেমানান। এ ক্ষেত্রে আবারও টিমওয়ার্কের ওপর গুরুত্ব দিতে হয়।
লাইভ রিপোর্টিং যদি হয় দাবা খেলা, তবে মনে রাখতে হবে ক্যামেরাম্যান তার মন্ত্রী। আই লেভেল ঠিক রাখা, সাউন্ড কোয়ালিটি দেখা, কথার মাঝে সংশ্লিষ্ট ফুটেজ দেখানো, ক্যামেরাম্যানের ইত্যাদি কাজ একটি লাইভের মান অনেকখানি বাড়িয়ে দেয়। যদিও একই ঘটনাস্থল থেকে একাধিক চ্যানেলের লাইভ দেওয়ার সময় ক চ্যানেলের পর্দায় খ চ্যানেলের রিপোর্টারকে কথা বলতে দেখা, বিনিময়ে খ চ্যানেলের রিপোর্টারকে ক চ্যানেলের পর্দায় কথা বলতে দেখা বেমানান। এই জটিলতা দূর করার একমাত্র ক্ষমতা রাখেন ক্যামেরাম্যান।
লাইভে নট গুড বা এনজি ফুটেজ কতটুকু গ্রহণ করা যায়? এটা অবশ্য নির্ভর করে পরিবেশের ওপর। সম্প্রতি সাভারের সালেহপুর সেতু থেকে বাস পানিতে পড়ে যাওয়ার সংবাদ এসএনজি ব্যবহার করে সরাসরি সম্প্রচার করে বাংলাভিশন। নৌকায় দাঁড়িয়ে দেওয়া লাইভ বর্ণনায় ক্যামেরা কাঁপতে পারে। কেননা, পানিতে নৌকা কাঁপে। ফলে, টিভির পর্দায় দেখানো ফুটেজ কাঁপতে পারে। তা পরিবেশের কারণেই গ্রহণ করে দর্শক। কিন্তু বঙ্গভবনের সামনে তোলা ছবি কাঁপলে তা দৃষ্টিনন্দন হয় না। লাইভে সংবাদ প্রচার ছাড়াও অনেক সময় কোনো একটি ঘটনার শুধু ফুটেজ প্রচার করা হয় টিভিতে। সেটিকে এজ লাইভও বলা যায়। কোনো এক হরতালে দেখা গেল পুলিশ বিক্ষোভকারীদের পেটাচ্ছে। ক্যামেরাম্যান সে ফুটেজ ধারণও করলেন ভালোভাবে। রিপোর্টার ও ক্যামেরাম্যান অফিসে পৌঁছে দেখলেন, কোনো একটি বুলেটিন চলছে। কর্তব্যরত সংবাদ নির্বাহীরা সিদ্ধান্ত নিলেন, সে ফুটেজ প্রচার করা হবে খানিকটা। স¤প্রচার সাংবাদিকদের কাছে এটি রাশ চালানো নামেই পরিচিত। এখানে রিপোর্টার স্পটে থাকলেও এই সম্প্রচারে তার কোনো দায়িত্ব নেওয়ার সুযোগ নেই। তিনি শুধু বলতে পারেন ঘটনা কতটুকু গুরুতর। পুলিশ কতজনকে আহত করেছে বা বিক্ষোভকারীরা কতজন পুলিশকে আহত করেছে, সে তথ্য। ফুটেজ তুলেছেন ক্যামেরাম্যান, কী তুলেছেন, ফ্রেম কী, তা তিনি জানেন। রিপোর্টারের সে ছবি দেখার সুযোগ প্যানেলে না আসা পর্যন্ত হওয়ার কথা নয়। এ ক্ষেত্রে ফুটেজ প্রচার উপযোগী কি না, সে সিদ্ধান্ত দিতে হবে ক্যামেরাম্যানকে।
মোট কথা, নিয়োজিত প্রতিটি কর্মীর অবদানের ফলেই প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে একটি লাইভ সম্প্রচার।
স্বত্ব: আনোয়ার সাদী । প্রথম প্রকাশ মিডিয়াওয়াচ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




