………… লাফ দিয়ে ঘুম থকে উঠলো নিসাদ।ঘড়িতে দুপুর ২টা বাজে ।কাল রাতে বেশ চাপ পড়েছে তার নার্ভের উপর! যে ব্যাপারটা নিয়ে এত্তো রাত না ঘুমিয়ে কাটানো সে ব্যাপারটা আদৌ ঘটবে কিনা সে জানেনা। কেননা, বিজ্ঞান্মহলে আজ পর্যন্ত এ নিয়ে কোনো কথা শোনা যায়নি।
চোখে মুখে পানি দিয়ে সকালের নাস্তা করবে নাকি দুপুরের লাঞ্ছ করবে, ভাবতে লাগলো নিসাদ। ভেবে কোনো কুল-কিনারা না পেয়ে ৩টা ডিম ভাজি আর ১ লিটার ফ্রুটো খেয়ে তার পেটপুজা করলো। গত মাসে তার স্ত্রীর সাথে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছে। খাওয়া দাওয়া নিয়ে বলতে গেলে মানবেতর জীবন যাপন করছে সে বর্তমানে !!
নিসাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গনিতে অধ্যাপনা করেন। তার নাম খানা খুব্বি আধুনিক, কেননা তার বাবা-মা’রও নাম ছিলো আধুনিক এবং এ নাম তার বাবা-মা’র নামের মিশ্রন। গনিত নিয়ে কাজ-কারবার হলেও সে পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে খুব্বি ইন্টারেস্টেড !বর্তমানে তার দিন কাটছে পদার্থবিজ্ঞান নিয়েই ! আজকের এই কাহিনী সেই পদার্থবিজ্ঞানের অন্ধকার দিককে অবলম্বন করে !
ঘটনার শুরু ২০০৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ! নিসাদের স্ত্রী ঈদে জাফর ইকবাল স্যারের “প্রেত” নাটক দেখছিলো।নিসাদও দেখছিলো খুব আগ্রহ নিয়ে, নাটকটা সুন্দর করে বানানো হয়েছে। নাটক দেখে ঘুমানর সময় তার মনে পড়ল, প্রেত বা আত্মা আসলে কি? এই যে চিন্তা তার মাথায় প্রবেশ করলো , সে চিন্তা পদার্থবিজ্ঞানের নানা ইকুয়েশনের অস্তিত্বকে কে বিপন্নের মুখে ফেলে দিয়েছে !
সেমিনার শেষ করে আসতে আসতে রাত প্রায় ১১টা বেজে গেলো।গোসল করে, রাতের খাবার পর্ব শেষ করে কাগজ-কলম নিয়ে বসলো ঠিক তখুনি মোবাইলে বিকট ভাইব্রেশন শুরু হলো।
YOU HAVE A TEXT MESSEGE !!!
Happy aniversary day . I dnt wish to be wished from u , cz I knw u hadnt remembrd it at all. Stay happy wid ur equation .
মেসেজটি তার স্ত্রীর । আজ তাদের বিবাহ বার্ষিকী , খেয়াল ছিলোনা। কিছুক্ষন চুপ করে রইলো। মেসেজের রিপ্লাই দিবে কিনা ভাবতে ভাবতেই হঠাত রাগে, ক্ষোভে সে প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলো ! যে ইকুয়েশন এর জন্য সে আজ স্ত্রীর থেকে আলাদা, ৬ বছরের প্রেম আজ অস্তিত্বহীন, সে আজ তার শেষ দেখে নিবে !
সে চিন্তা করতে লাগলো আগের চিন্তাগুলো। আত্মা , আত্মা আসলে এনার্জী ছাড়া কিছুইনা !এনার্জী , হ্যাঁ , আসলেই তাই ! শক্তির ভর নাই , শক্তি দেখা যায়না, শুধু অনুভব করা যায়। আত্মাও তো তাই !! জীবিত প্রানীর ভর আর ঐ প্রানীর মৃত দেহের ভর একই থাকে, তাহলে আত্মা ভরহীন ! আত্মা শক্তি , তাহলে নিশ্চই তা শক্তির সংরক্ষনশীলতার নীতি মেনে চলার কথা ! হ্যা, মেনে চলেতো ! এখন শুধু দরকার ১টা ইকুএশন !!!
আত্মা শক্তি হলে ……… তাহলে কি …… E=mC2 এর ক্ষেত্রেও তা খাটবে?? কিন্তু , এই আত্মা নামক শক্তিকে ভরে কনভার্ট করতে চাইলে কিসে পরিনত হবে ! এ সম্পর্কে কোনো ধারণা করতে পারছেনা নিসাদ।
রাত প্রায় ৪টা । নিসাদ এখনো লিখে চলেছে । তার মুখ হাসি হাসি !সে শেষ পর্যন্ত আত্মার ইলেক্ট্রো-ম্যাগ্নেটিভ ওয়েভ ইনভার্স ফাংশনের ইকুয়েশন দাড় করিয়ে ফেলেছে! এখন শুধু এপ্লাই করে দেখতে হবে ! আজ তার শান্তির রাত , ১ বছর পর আজ সে শান্তিতে ঘুমাবে।
খুব ভয়ংকর ১টা স্বপ্ন দেখছে নিসাদ!!! অন্ধকার থেকে কিছু হাত নিসাদের দিকে আসছে, হাত গুলো সাদা মরা মানুষের হাতের মত। আর অনেক দূর থেকে স্পষ্ট ১টা গুমোট বাধা কন্ঠ শোনা যাচ্ছে !
“ নিসাদ , তুমি প্রকৃতি দেখেছ? দেখোনি, কেউ দেখেনি। আমি কাউকে প্রকৃতি দেখতে দেইনা, কেননা আমিই প্রকৃতি ! আমার মাঝে আমি সবাইকে আশ্রয় দেই, কারো মাঝে আমি আশ্র্য় নেইনা। তুমি তোমার মাঝে আমাকে প্রকাশ করতে চেয়েছো , অনেক বড় ভুল করেছ! প্রকৃতির শাস্তি বড্ড কঠিন নিসাদ”
লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠে গেলো নিসাদ ! সারা শরীর ঘেমে গেছে ! ঘড়িতে দেখলো দুপুর ২টা বাজে । কাল রাতে বেশ চাপ পড়েছে ………………………