নিজেকে আমরা ২৫ পয়সা রেটে বিক্রি করে দিচ্ছি
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
…………………… তারপর ভোর পোনে ৭টায় বের হলাম। হায়রে বাংলা কোচিং! বিষয় হিসেবে পড়তে সবচেয়ে অনাগ্রহী, তার উপর সকাল ৭টায় পড়া। ২ ক্লাস মিস যাবার পর আজকে গেলাম।
স্যার প্রকৃতি-প্রত্যয় পড়াচ্ছে। কম্বাইন্ড ব্যাচ, ডানদিকে সব মেয়েরা, বাম দিকে সব ছেলেরা (আমার এই বিষয়ে কোনো আগ্রহ নাই, কারণ ফার্স্ট ইয়ারে আগ্রহ সর্বোচ্চ বিন্দু অতিক্রম করে গিয়েছে)। তো প্রায় আধা ঘন্টা পড়ানোর পরেও শেষের ২টা মেয়ে কুটুর-কুটুর করে কথা বলেই যাচ্ছে। স্যার বিরক্ত হচ্ছে, বুঝা যাচ্ছে। ওদের বোঝানোর জন্য ২টা ছেলেকে ধমক লাগাইছে ( অনেকটা ঝি-কে মেরে বৌকে শেখানোর মতো), কার কি ! আমার কাম আমি কইরা যাই এই অবস্থা!
এরপর স্যার শুরু করলো! হায়রে স্যারের পচাঁনী!
“ এত্তো কি রসের আলাপ? সারা রাত কি কথা হইসে ফোনে, সেগুলা নিয়ে গোল টেবিল বৈঠকে বসছো? কতোতে বিক্রি করেছো নিজেকে কাল রাতে? ২৫ পয়সা পার মিনিটে? হ্যা? নিজের সতীত্বের দাম কতো দিয়েছো, বলো? ২৫ পয়সা দাম রেখেছো নিজের?”
এই কথা শুনে আমার মেজাজ খারাপ হয়া গেলো স্যারের উপর! সামনের বেঞ্চের মেয়েটা বললো – “ হয়েছে তো স্যার !”
এরপর যা ঘটলো, টোটালী আমার কল্পনার বাইরে! ৩মাস যাবত চিনি আতিক স্যারকে, জীবনেও উনাকে ১টা জোরে ধমক দিতে শুনিনাই। বাংলার শিক্ষক, নির্ভেজাল ঠান্ডা কিসিমের মানুষ। সামনের বেঞ্চের মেয়েটার “ হয়েছে তো স্যার” শুনে স্যার বিশাল এক চিৎকার দিয়ে বললেন , “ না হয়নাই! শেষ হয়নাই আমার কথা! ২৫ পয়সায় নিজেকে বিক্রি করে দিচ্ছ আর লাশ হয়ে ঘরে ফিরছো। বাবা-মা কি এই দিন দেখার জন্য জন্ম দিয়েছিলো? ছেলে-মেয়ের লাশ হয়ে ঘরে ফেরার দৃশ্য দেখার জন্য? এখন বুঝবেনা বাবা-মা’র জন্য ছেলে-মেয়ের লাশ কি ! যেদিন মা হবে, বাবা হবে, সেইদিন বুঝবে।“
আমি থ বনে গেলাম! আমার চিন্তা ভাবনা কতো নীচ! প্রথমে ভেবেছিলাম স্যার বোধ হয় সস্তা রসিকতা কিংবা পচঁইয়ে মজা নেবার জন্য এইসব বলছেন। কিন্তু শেষতক এসে আমি অবাক হয়ে গেলাম! স্যারের চিন্তা-ভাবনা আর কিছুইনা বরং অভিভাবকের মতোন । স্যার কিছুক্ষন আমাদের দিকে তাকালেন না। বোর্ডের দিকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে আবার পড়ানো শুরু করলেন –
“ অব থাকলে সেটা উ-কার হয়ে শব্দের শেষ বর্নের সাথে যুক্ত হবে আর প্রথম বর্নের স্বরবর্নের বৃদ্ধি ঘটবে”
আবারো অবাক! আমি হলে আজকে ক্লাসই নিতাম না! এরকম বেয়াদপ পড়ানো অসম্ভব!
শিক্ষক হওয়া খুব কঠিন! ক্লাস এইটে থাকতে রবীন্দ্রনাথের একটা বানী পড়েছিলাম, খেয়াল নেই শুধু মুল থীমটা মনে আছে যে - “যে শিক্ষক বেশী জানে সে ভালো শিক্ষক নয় বরং যে শিক্ষকের ধৈর্য্য যতো বেশী সে ততো ভালো শিক্ষক”
স্যার, আমরা ২৫ পয়সা রেটে নিজেদের বিক্রি করে দিচ্ছি, দিয়েছি! ব্যাক্তিগতভাবে আমি অনুতপ্ত। চেষ্টা করবো আর যাতে স্বকীয়তার বিনাশ না ঘটে।
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।
আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন
মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?
সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন
মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.
গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন
=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=
©কাজী ফাতেমা ছবি
বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন
ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।
ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন