রাশেদ ঘাপটি মেরে শুয়ে আছে। যে কেউ দেখলে বলবে, অতি শান্ত-সুস্থির ছেলে ঘুমানর চেষ্টা করছে। পাশে মা শুয়ে আছে। রাশেদ বোঝার চেষ্টা করছে, মা ঘুমিয়েছে কি না। দেয়াল ঘড়িতে দুপুর ৩টা বাজে। রাশেদ এর হাতে আর ১৫মিনিট সময় আছে। সে ধীরে ধীরে পাশ ফিরে মা এর মুখটা দেখল। শান্ত-নিশ্চিন্ত মুখ। আপাতত চোখ বন্ধ। যদি সে উঠতে গিয়ে এই চোখ খুলে যায়, কপালে অনেক খারাবী আছে। রাশেদ শুয়েছে দেয়াল ঘেষে।
তাকে বিছানা থেকে নামতে হলে মা কে টপকে নামতে হবে। আর এটাই সবচেয়ে কঠিন। রাশেদ ধীরে ধীরে সোজা হয়ে বসল। চুপ করে বসে থাকল কিছুখন, যেন অপেক্ষা করছে কিছু ঘটার। তারপর নিশ্বাস বন্ধ করে সে মা র উপর দিয়ে একটি পা মেঝেতে রাখল। হঠাৎ মা পাশ ফিরল। ভয়ে জমে গেল রাশেদ। খুবই বিপদজনক অবস্থা। তার একটি পা বিছানায় আর একটি মেঝেতে। নাহ, মা জেগে যায় নি। আটকে থাকা শ্বাস খুব সাবধানে ছেড়ে বিছানা থেকে সম্পূর্ণ নেমে এল সে। পা টিপে টিপে এগুলো দরজার দিকে। ছিটকিনি খুলে দরজার পাল্লা সরিয়ে বাহিরে ঊঁকি দিল রাশেদ। বাহিরের ঊঠোনে তীব্র রোদ খেলা করছে। চারদিক চুপচাপ।
সবাই দিবানীদ্রায় ডুবে আছে। সে ঘুরে তাকাল দেয়াল ঘড়ির দিকে। আর ১০মিনিট। ৫মিনিটের মাঝে বাড়ি থেকে বেরিয়ে দৌড় দিতে না পারলে সে পৌছুতে পারবে না।
মেইন গেইট বন্ধ রাশেদ জানে। মা বন্ধ করে রেখেছে। তাকে যেতে হবে গোয়াল ঘরের দেয়াল টপকে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, ওপাশেই ভাঙ্গা মন্দিরটা।
প্রচুর সাপ-খোপের আড্ডা ওখানে আর দিনের বেলায়ই সুনসান থাকে জায়গাটা। রাশেদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবল-কি আর করা, ওটাই এক মাত্র পথ। সে দ্রুত পা চালিয়ে গেল গোয়াল ঘরের দিকে। বোটকা একটা গন্ধ পুরো ঘর জ়ুড়ে। রাশেদ সময় নস্ট না করে দেয়াল বেয়ে ঊঠতে শুরু করল। দেয়ালে উঠে ওপাশে তাকিয়ে হতাশ হল সে। অনেক নীচুতে মনে হচ্ছে ওপাশের মাটি। বাহিরের দেয়ালের গা ও বেশ মসৃণ, তাই দেয়াল বেয়ে নামাবে সে উপায় ও নেই। সময় ও নেই হাতে, লাফ দিতে হবে।
বিসমিল্লাহ বলে রাশেদ দিল লাফ। উফ, অবশেষে মুক্তি। হাটুর কিছু চামড়া উঠে গেছে, কিন্তু দুশ্চিন্তায় কালো হয়ে থাকা মুখে এই প্রথম হাসি ফুটলো। রাশেদ হাটুর দিকে তাকিয়ে ভাবলো, গন্ডারের চামড়া হলে ভাল হত। তারপর প্রাণপনে দৌড়।
................................................................................................
মাসুম ভাই বিরক্ত হয়ে হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছেন।আর মাত্র ২মিনিট বাকি। গাধাটা নিশ্চিত বের হতে পারে নি। দুশ্চিন্তায় ভুরু কুচকে আছে মাসুম ভাই এর। আজ বাঁচা-মরার লড়াই। যেভাবেই হক পূর্ণ শক্তিতে নামতে হবে। তিনি ঘুরে তাকালেন ছেলে দের জটলার দিকে। সবাই উন্মুখের মত তাকিয়ে আছে কলেজ রোডের দিকে। দূর থেকে নোমান টিটকিরি দিল-"কি মাসুম ভাই! সোয়া ৩টা বেজে গেল ত।"
মাসুম ভাই গম্ভীর ভাবে উত্তর দিলেন-"এখনো ১মিনিট বাকী আছে।"
আবার ঘুরে তাকালেন কলেজ রোডের দিকে। নাহ, কোন খবর নেই। দীর্ঘশ্বাস ফেলে যেই ছেলেদের কিছু বলতে যাবেন, চোখের কোণে কি জানি ধরা পড়লো মাসুম ভাই এর। ভাল মত তাকিয়ে দেখেন, ঝড়ের বেগে দৌড়ে আসছে গাধাটা। আকর্ণ হাসি হেসে, হাতের ব্যাটটা দুপাক ঘুরিয়ে, নোমান কে হেকে বললেন-"কি হে, টসে নামবে না নাকি। শুধু শুধু দাঁড়িয়ে থাকলে হবে? "
তারপর ঐতিহাসিক কলেজ মাঠে সোয়া ৩টার কাঠফাটা রোদে শুরু হয়ে গেল বকুলতলা বনাম হাজীপাড়ার ১০০টাকা বাজীর ক্রিকেট ম্যাচটি।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০১০ দুপুর ২:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




