মাঝে মাঝে ভাবি, নিজের একটা বোন থাকলে মন্দ হতো না ! জমা রাখা সবটুকু আদর বোনের জন্য থাকতো !!
সকালে ঘুম থেকে ডেকে দিতো , বেড থেকে না উঠলে হয়তো ঘুম তাড়ানোর হাজারটা উপায় বাতলে দিয়ে ঘুম ভাঙ্গাতো । সারাদিন হয়তো খুনসুটিতেই কাটিয়ে দিতাম । কখনো ঝগড়া বা কখনো মারামারি , আবার কখনো রাগ ভাঙ্গানোর জন্য চকলেট কিনে আনা । কখনো আবার মায়ের কাছে নালিশ দেওয়া , কখনো বা বাসার বকুনি থেকে বাঁচিয়ে দেওয়া । অসুস্থ হলে হয়তো সারাদিন ওষুধ আর ওষুধ করে সারা বাসা এক করে ফেলা । আমার ওষুধের প্রতি একটা বিরূপ মনোভাব আছে । হয়তো কখনো জোর করেই ওষুধ খাইয়ে দিতো । আমি হয়তো ওষুধ না খাওয়ার হাজারটা কারণ বের করে বলতাম যে ওষুধ খাবো না । আমার বোন হয়তো বলতো, ভাইয়া , তুই ওষুধ খেয়েই তারপর চুপ করবি । রাতের খাবারের জন্য হয়তো টেবিলে বসে থাকতো তার ভাইয়ার জন্য । আরো কতো কি !!! বোন নেই , তাই এতোটা বুঝি না । একটা বোনই হয়তো হতে পারে বাসায় ভাইয়ের সবচেয়ে আপন বন্ধু ।
আমরা দুই ভাই ! আমাদের দুই ভাইয়েরই সবচেয়ে আফসোসের জায়গাটা হয়তো বোন না থাকা । ছোট বলে আফসসের পরিমাণটা আমার একটু বেশি । ছোট থেকেই ভাইয়াকে কাছে পাওয়া হয়েছে অনেক কম । আমি যখন বুঝতে শিখেছি , তখন ভাইয়া ক্যাডেট কলেজের চার দেয়ালে বন্দী । দেখতে দেখতে ছয় বছর চলে গেলো । আমি বড় হতে লাগলাম , ভাইয়াকে কাছে না পাওয়া , ভাইয়ার আদর না পাওয়ার হতাশা , কস্টটাও বড় হতে থাকলো । এরপর ভাইয়া চলে গেলো বিএমএ তে , দুই বছরের ট্রেনিং । ততোদিনে আমি বুঝতে শিখে গেছি , চলতে হবে একাই । কথায় আছে , ''ব্যস্ততা দেয় না মোরে অবসর'' । দিনশেষে আমরা সবাই ব্যস্ত । ভাইয়া ব্যস্ত তার দেশসেবার মহান দায়িত্ব নিয়ে , চাকরি নিয়ে । আমরা ব্যস্ত দিনটাকে দিন করে দেখতে ।
মাঝে মাঝে বোনের শুন্য জায়গাটা বড্ড কষ্ট দেয় । সবসময় ভাবি , বোন থাকলে এটা করতাম , সেটা করতাম । অনেক আদর করতাম , আমাদের দুই ভাইয়ের রাজ্যে বোনটা আমার থাকতো আদরের একমাত্র দাবিদার ।
আল্লাহ সবাইকে সবকিছু দেয় না । কিছু অপূর্ণতা নিয়েই আমাদের বেঁচে থাকতে হয় । আমরা বেঁচেও থাকি । বেঁচে থাকাতেই দুনিয়ার যতো স্বার্থকতা ।
মাঝে মাঝে কিছু লিখতে গেলে চোখটা ভিজে যায় জলে । এটা খুব বাজে একটা জিনিস !!
শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা , পৃথিবীর সকল বোনদের জন্য...