আমার সবসময়ই মনে হতো তোমার প্রতি আমার কোন মায়া নেই, নেই কোন বন্ধন। শুধুমাত্র সময় আমাদের একই পথে নিয়ে এসেছে। যাপিত সময় ফুরোলেই যে যার পথে। নতুবা এতোগুলো বছর কাটালাম তবুও আমার একবারও কেন মনে হল না, আমি তোমায় ভালবাসি! সত্যি কথা বলতে কি, তোমাতে আমার একঘেয়েমিতা পেয়ে বসেছিল। সেই প্রতিদিন একই মুখ কতদিন ভাল লাগে বল? তাই মনে মনে পরিবর্তন চাচ্ছিলাম! তোমার পরিবর্তে অন্য কাউকে আপন করতে মন চাচ্ছিল। যতই তোমার আমার বিচ্ছেদের সময় এগিয়ে আসছিল, আমার মন বুনো আনন্দে পরিপূর্ণ হচ্ছিল। মনে মনে আসন্ন দিনগুলোয় কল্পনার সবগুলো রং মিশিয়ে দিচ্ছিলাম। নতুন 'তার' সাথে কি কি করব তা ভাবতে ভাল লাগছিল। আচ্ছা, আমি কি প্রতিদিন সকালে খোলা বাতাসে তার শরীরের সুবাস নেব? মধ্য দুপুরের ভ্যাপসা গরমও কি তখন মধুর লাগবে? লাল সন্ধ্যার অতিপ্রাকৃতিক আকাশ দেখে অস্তিত্বহীন বিরহে ডুবে যাব? এমন কতশত চিন্তা যে মাথায় ভর করছিল!
গতকাল সন্ধ্যায় হাটছিলাম আপন মনে। এক ভিখারি ভিক্ষে চাইল। তুমিও চিনবে তাকে, খুব পরিচিত সে! আমি তাকে 'না' বলে দিলাম। সে মন খারাপ করে দু'কদম যেতেই বুকের মধ্যে কেমন যেন মোচড় দিয়ে উঠল। মায়া হতে লাগলো ভিখারিটার জন্য! মনে হল- তোমাকে ছেড়ে দিলে এই ভিখারিটাও তো আমার পর হয়ে যাবে! তোমার সাথে সম্পর্কযুক্ত কিছুই আর আমার থাকবে না! ছুটে গিয়ে তাকে ধরলাম, অনেকটা লজ্জিত হয়েই কিছু টাকা দিলাম। আমার ভাল লাগলো! আমার কেমন যেন অস্থির লাগতে লাগলো। এরপর বাসায় আসার সারাটা পথ তোমার কথা ভাবলাম! ভাবতে ভাবতে চোখে জল চলে এলো! তোমার জন্য এতো মায়া কোথায় লুকিয়েছিল? সব ভাল লাগতে লাগলো- রাস্তার বাতি, শয়ে শয়ে অচেনা মানুষ, যান্ত্রিক বাহন, বেওয়ারিশ কুকুর, সব কিছু আশ্চর্য সুন্দর লাগছিল। বুঝতে পারলাম, তোমাকে ছেড়ে যাওয়া অসম্ভব।
হে আমার প্রিয় শহর, তোমাকে ভালবাসি, সত্যি সত্যি অনেক ভালবাসি।