লিখেছেনঃ অন্ধকারের যাত্রী >> সময়: শনি, 23/11/2013 - 1:01অপরাহ্ন
নজরুলের "মানুষ" কবিতা দিয়ে শুরু করি, ___গাহি সাম্যের গান-- মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান । নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি, সব দেশে সব কালে ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি,--- হ্যাঁ, মানুষের চেয়ে বড় কিছু থাকতে পারে না, কিন্তু বাংলাদেশে আজ জাত ধর্ম নিয়ে চলছে দাঙ্গা-হাঙ্গামা, মানুষে মানুষে সৃষ্টি করছে ভিবেদ, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও নিপীড়ন যত তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে, কিন্তু তার বিরুদ্ধে যতটুকু দরকার ততটুকু প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গরে উঠেনি, এ নিয়ে আলাপচারিতা তুলনামূলকভাবে কম, বাম রাজনৈতিক দল ও কিছু সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন এর প্রতিবাদ করে। এই নিয়ে সমাজবৈজ্ঞানিক গবেষণা নেই বললেই চলে। সংখ্যালঘুদের উপরে সহিংসতা ও নিপীড়ন নিয়ে লেখা-লেখি ও অনেক কম, সহিংসতা হলে শুধু পত্রিকায় ও টিভিতে খবরই যথেষ্ট । নাটক বা চলচ্চিত্রে সাম্প্রদায়িকত সহিংসতার চিত্র তুলে ধরা হয় না। এর কারণ হিসাবে বলা যায় সেক্যুলার ও প্রগতিশীল শক্তিশালী রাষ্ট্রে দাবি করে, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি অনেক ভিন্ন। এই দেশে যুগ যুগ ধরে হিন্দু-মুসলমানরা শান্তিতে, সৌহার্দ্যে, সম্প্রীতিতে এবং মিলেমিশে পাশাপাশি বসবাস করে আসছে। এই মত অনুসারে, যে-সকল সহিংসতা ও নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে তা নিছক দুবৃত্তদের কাজ, কিংবা সুনির্দিষ্ট একটি বা দুটি রাজনৈতিক দলের মদদে ঘটা ঘটনা। যে ক্ষমতায় থাকে তার বিরোধী দল এইসব কান্ড করে বেড়ায়। ...রাজনৈতিক মদদের ঘটনায় আর পরিকল্পিত নিপীড়নের কথা সত্যতা আছে বলাই বাহুল্য। তবে, সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকে কেবলই এমন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা সরলীকরণ ও সমস্যাজনক। এর পিছনে দারিয়ে আছে অনেক ধ্যন-ধারনা, বিশ্বাস-সংস্কার। এই মুহূর্তে আমাদের কাছে যখন প্রতিদিন সাম্প্রদায়িক সহিংসতার খবর আসে, তখন আমরা এটা একটা সামাজিক বিচ্যুতি হিশেবে ধরে নেই। আসলেই কি তা সাধারন সামাজিক বিচ্যুতি??
লক্ষ ছিল অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ।
১৯৪৭-এর ১৪ই আগস্ট বৃটিশ শাসনের অবসান ও সাম্প্রদায়িক দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে অখণ্ড ভারতবর্ষকে খণ্ডিত করে প্রতিষ্ঠিত হয় সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র পাকিস্তান। বাঙালী সুপ্রাচীন কাল থেকে উদার অসাম্প্রদায়িক ভাবধারার যে জমিন তৈরী করেছিল, উত্তরকালে খণ্ডিত অস্তিত্ব নিয়ে জাতি হিসেবে তার জন্য শুরু হলো দুর্ভাগ্যজনক নয়া দাসত্ব। এই নয়া ঔপনিবেশিক নিকৃষ্ট শাসন থেকে মুক্ত হতে প্রধান প্রধান ঘটনা ধারা যায় ’৫২-এর মহান ভাষা আন্দোলন; ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্টের ২১ দফার ভিত্তিতে নির্বাচন; নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক মুসলিম লীগের শাসনের চির অবসান এবং সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে পৃথক ও স্বতন্ত্র নির্বাচন ব্যবস্থার স্থলে যুক্ত নির্বাচন প্রথার প্রবর্তন; ’৫৬তে শাসনতন্ত্রের জন্য আন্দোলন; ’৬২তে শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৪তে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে রুখিয়া দাঁড়াও আন্দোলন, ’৬৬তে জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার তথা স্বাধিকারের দাবীতে ৬ দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর মহান গণঅভ্যুত্থানে সার্বজনীন ভোটাধিকার অর্জন, ’৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে ৩০ লক্ষ প্রাণ আর ২ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আত্মসমর্পণের দলিলে পাকিস্তানী বাহিনীর পরাজয় লিপিবদ্ধ করে ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করে এনেছিলাম আমাদের এই বাংলাদেশ, তারপর ১৯৭২-এর ৪ঠা নভেম্বর বাঙালী জাতির পুনরায় অসাম্প্রদায়িক অবস্থানে পুনঃপ্রত্যাবর্তনের মধ্যদিয়ে গঠিত হল ৪ মূলনীতির আধুনিক রূপ হিসেবে ৭২ এর সংবিধান।..
৪ মূলনীতি?
সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা....যা ছিল আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের মুল চেতনা। এছাড়াও ৭২'এর সংবিধানে সকল সাম্প্রদায়িক দল নিষিদ্ধ ছিল, সংবিধান ছিল বাংলাদেশের সকল মানুষের, সংবিধানের প্রথমে 'বিসমিল্লাহ্' ছিল না, কোন রাষ্ট্র ধর্ম ছিল না।...কিন্তু এই অসাম্প্রদায়িক চেতনা বেশি দিন টিকে থাকতে পারে নি...!
নিজেদের স্বার্থে সংবিধান সংশোধন! এবং রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার!
১৯৭২ সালে যে অপূর্ব সংবিধান রচিত হয়েছিলো, সেটিতে একটির পর একটি পরিবর্তন এনে সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার মতো রাষ্ট্রের মুল আদর্শে হাত দেওয়া শুরু করলো....দুই স্বৈরাচার ..সবাই একি পথ ধরলো..আজও চলছে!
১. ১৯৭৮ সালের ২য় ঘোষণা পত্র আদেশে সংবিধান থেকে সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দ দুটি বাদ দেওয়া হয়।
২. ১৯৭৮ সালের ২য় ঘোষণাপত্র আদেশ নম্বর ৪ এর ২য় তপসিল বলে বাংলাদেশের সংবিধানের শুরুতে 'বিসমিল্লাহ্' সন্নিবেশিত হয়।
৩. সংবিধানের ৮ম সংশোধনিতে ১৯৮৮ সালের ৩০ নং আইনের ২নং ধারা বলে, সংবিধানে রাষ্ট্র ধর্ম সন্নিবেশিত হয়।
৪. সর্বশেষ পঞ্চদশ সংশোধনিতে ৭২ এর চার মূলনীতিতে ফিরে গেছে কিন্তু, সংবিধানের শুরুতে 'বিসমিল্লাহ্' ও রাষ্ট্র ধর্ম এখন রয়ে গেছে।মানুষ আজ আর মানুষ নেই অমানুষ হয়ে গেছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৫৪