somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্ত বাক,মুক্ত চেতনা, freedom of speech

১৩ ই জুন, ২০১৯ রাত ৯:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাক স্বাধীনতা,মুক্ত বাক
তারিখ:-১৩ জুন ২০১৯ ঈসায়ী।
ব্লগ এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে আপনি আপনার চিন্তা-চেতনা, মনের কথা,কবিতা,গল্প,উপন্যাস ইত্যাদি সব ধরনের কথা আমরা পাঠকদের সামনে মোবাইল,ল্যাপটপের কি বোর্ডের মাধ্যমে তুলে ধরি। ব্লগ হলো হাজারো গুনি লেখকদের একটি মিলন সেতু। আমরা ব্লগাররা ব্লগে লেখি,পাঠক ও অতিথিগণ সে সব গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল গুলো পড়ে সেখানে মন্তব্য করেন। এক কথায় বলা যায় ব্লগ একটি পাবলিক সাইট। হাজারো মানুষের হাজারো চিন্তা ও মন্তব্য বলার একটি জায়গা।
ব্লগে বাক স্বাধীনতা রয়েছে,বাক স্বাধীনতা বলতে কি বুঝায়,এর কি অর্থ সে বিষয়ে আজ কথা বলার জন্য লিখছি।
বাক স্বাধীনতা,মুক্ত চিন্তা ভাবনা সম্পর্কে শুরুতেই কিছু জেনে নেয়া যাক,আসলে মত প্রকাশ বা বাক স্বাধীনতা বলতে কি বুঝায়?
যে কোন মতামত কি আমরা প্রকাশ করতে পারি বা করার সার্মথ্য রাখি??কিংবা বাক স্বাধীনতার ক্ষেত্র কতটুকু? বাক স্বাধীনতার ক্ষেত্রে শিক্ষিত অশিক্ষিত মানুষও স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার রাখে গণতান্ত্রিক দেশে। তাদেরও স্বাধীনভাবে বলার অধিকার আছে। বাক স্বাধীনতা ও মুক্ত চিন্তা ভাবনাকে বিষয়বস্তু বানিয়ে বিশ্লেষণ করলে সারমর্ম যা বেরিয়ে আসে তা হলো, জাতি স্বাধীনভাবে কোন বিষয়ের উপর তার মন্তব্য তার ইচ্ছা তার চিন্তা-ভাবনা প্রকাশ করবে স্বাধীনভাবে। এক কথায় স্বাধীন ডানা মেলে উড়ে যাওয়া পাখির মত। তারপরেও আমাদের মস্তিস্কে হিউম্যান ব্রেইন বাই ডিফল্ট এক ধরনের চলমান প্রক্রিয়া বসানো আছে,যা আমাদেরকে সব সময় সব জায়গাতেই সব কথা বলার ক্ষেত্রে বাধা প্রদান করে। সহজভাবে বলা যায়,প্রত্যেকটি মানুষের ভেতরেই বিবেক নামক একটি সত্তার উপস্হিতি রয়েছে যা মানুষের চাহিদা মোতাবেক যা খুশি তা বলার পরিস্হিতিকে বাধা প্রদান করে বা সিস্টেমকে কিছু সময়ের জন্য স্হির করে দেয়। পৃথিবীর বুকে আমরা বিচরণ করছি,বিশুদ্ব অক্সিজেন গ্রহন করছি এসবি হচ্ছে উপরওয়ালার নিয়ামত। যদি তা না থাকে তাহলে কি হতো সেটা আমরা চোখ বন্ধ করে চিন্তা ভাবনা করলেই বুঝতে পাই,দেখতে পাই। ধরে নিন আমি ব্লগে এমন কিছু লিখলাম বা বললাম যার দ্বারা আমাদের দেশের মরহুম গ্রেট লিডার শেখ মুজিবর রহমান,দেশের প্রধানমন্ত্রী বা ওনার ছেলে এসব কথা বা লিখার দ্বারা আক্রান্ত হলেন বা মনে কষ্ট পেলেন। তারা কি ভারাক্রান্ত মন ও রাগ ক্ষোভ নিয়ে বসে থাকবে?? নিশ্চই উত্তর দিবেন না,তারা আমাকে আইনের আওতায় আনবে,আমার বিরুদ্ধে চার্জ নিবে আন্তর্জাতিক আদালতে।
এখন ভাবুন দেশের সরকারের বিরুদ্ধে গিয়ে কথা বলায় যদি আপনি আইনের আওতায় আনা হয়,আপনার উপর চার্জ নেওয়া হয়,তাহলে বাংলাদেশের ৮৮% মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার মত কথা বা মন্তব্যের শাস্তি কি?
বাংলাদেশ পেনাল কোড বা ফৌজদারি দণ্ডবিধির ২৯৫ ও ২৯৮ ধারা অনুসারে ধর্মাবমাননার অপরাধ প্রমাণিত হলে অর্থদণ্ডসহ সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে ধর্মাবমাননার তীব্রতার পরিপ্রেক্ষিতে এই দুই ধারায় বর্ণিত শাস্তির পরিমাণ হলো এই।
বাক স্বাধীনতা বলতে স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার। আপনার আছে স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার। আপনি বলবেন,আপনাকে বাধা প্রদান করার মত কেউ নেই,তবে বলার বা মন্তব্য করার একটি সীমানা পরিধি থাকে। আসলে বাক স্বাধীনতা হলো সর্বস্তরের মানুষের কথা বা মত বক্তৃতা-বিবৃতি ধারণা প্রকাশের একটি মৌলিক মানবিক অধিকার। মানুষ যা চিন্তা করে তা বাধাহীনভাবে বলতে পারার নামই বাক স্বাধীনতা। বাক স্বাধীনতার ও পরিধি-সমীনা রয়েছে। আপনি কতটুকু বলবেন বা বলতে পারবেন। বাক স্বাধীনতার প্রাথমিক ধারণাটি মানবাধিকার সম্পর্কিত প্রাচীন নথিপত্রেও পাওয়া যায়। ১৯৪৮ সালে অান্তর্জাতিকভাবে এ অধিকারটি মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণার ( Universal Declaration of Human Right) আর্টিকেল-১৯ এর মাধ্যমে গৃহীত হয়,যা নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক চুক্তি (International covenant on civil and political Right ICCPR) কর্তৃক স্বীকৃত। একবার নজর করলেই বুঝা যাবে ঐ অান্তর্জাতিক ঘোষণায় বাক স্বাধীনতার পরিধি ও সীমান্তপথ কতটুকু? বলার বা মতামতের ক্ষেত্রে কতটুক আপনার বলার অধিকার আছে। প্রত্যেকেরই কোনো রকম হস্তক্ষেপ এবং বাধা ছাড়াই যে কোন মত পোষণ এবং প্রকাশের অধিকার থাকবে যে কোন ধরণের তথ্য বা ধারনা চাওয়া,এবং তাতে অংশ নেয়ার অধিকার,তা তার পছন্দের যে কোন মিডিয়ার মাধ্যমে বা পাবলিক সাইড গুলিতে হতে পারে। যেমন: মৌখিক,লিখনি,মুদ্রণ,অংকন ইত্যাদি
এ ঘোষণার ভিতরেই যে নিয়ন্ত্রণ বা নিষেধাজ্ঞার কথাও রয়েছে তা হলো (১) বিশেষ কর্তব্য ও দায়িত্ব পালন (রাষ্টীয়, আঞ্চলিক, সামাজিক নেতৃত্ব এ সীমা নির্ধারণ করবে) (২) অন্যের অধিকার, খ্যাতি ও সম্মান সুরক্ষার ক্ষেত্রে (৩) জাতীয় নিরাপত্তার বিবেচনা (৪) নাগরিক সুশৃঙ্খলা সংরক্ষণ (৫) জনস্বাস্থ্য (৬) নীতিশাস্ত্র (ধর্মীয় বিশ্বাস, সংস্কৃতি,কল্যাণকর সামাজিক রীতি-নীতি ইত্যাদি) সেখানে আরো উল্লেখ আছে যে,এই বাক স্বাধীনতার নামে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা,পর্ণগ্রাফি, অসামাজিকতা, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, ধর্ম নিয়ে এমন কথা যার ভিত্তি নেই,ইত্যাদি অবাধ প্রচারের সুযোগ থাকবেনা। কারো প্রতি বা কোনো বিষয়ে ঘূণা প্রকাশের মাত্রারও সীমা অতিক্রম করা যাবে না। তাহলে বাক স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে যারা যখন যা খুশি তাই বলা, মত প্রকাশ করা বা প্রচার করা কিংবা কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার সুযোগ কি আছে?? অবশ্যই উত্তর হবে না!
অথচ ইদানিং প্রায় লক্ষ্য করা যায় ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ব্লগে নানা রকম অশ্লীল ও আপত্তিজনক মন্তব্যও লেখা হচ্ছে মুক্ত চেতনার নামে। আসলে মুক্ত চেতনা কি কাউকে বা কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার জন্য চেতনা? বরং মুক্ত চেতনা তো হওয়া উচিত যে কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা,প্রতিবাদী হয়ে উঠা। তাহলে ধারাবাহিকভাবে ইসলাম,কোরআন,মুহাম্মদ (সাঃ) এর বিরুদ্ধে বিষোদগারের হেতু কি??
আর যারা এ জাতীয় কাজে লিপ্ত তারা বেশিরভাগই অমুসলিম কিংবা অঘোষিত বা স্বঘোষিত নাস্তিক। তাহলে প্রশ্ন রাখা যায়,একজন অমুসলিম কুরআন,হাদীস,ইসলামের রীতি-নীতি, ইসলামিক জীবন-ব্যবস্হা, শিষ্টাচার,আইন কানুন সম্পর্কে কতটুকু জ্ঞান আছে বা রাখে? যতটুকু জানে তা দিয়ে কি নানারকম বিদ্বেষপূর্ণ কথা বলতে পারে? তাহলে উপরে বলা মানবাধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক ঘোষণাটি ঠিক থাকলো? আমাদের দেশের পেনাল কোড বা ফৌজদারি দন্ডবিধির ২৯৫ ও ২৯৮ ধারা কোথায় টিকলো?
বর্তমান সময়ে মত প্রকাশ বা বাক স্বাধীনতা এমন একটি বহুল প্রচরিত টার্ম,যা মানুষকে স্বস্তিও দিতে পারে আবার বিড়ম্বনায়ও ফেলতে পারে।
তথাকথিত মুক্ত চিন্তার লেখকের নাম দিয়ে, বিজ্ঞানমনস্ক লেখার দোহাই দিয়ে, বাক স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে যারা এসব করছে এরা আমাদের আশে পাশেই আছে। আমরা তাদেরকে বলি আহাম্মক,বলি ব্যাটার হুঁশ-বুদ্বি নাই নাকি? কোথায় কি বলতে হয় তাও জানে না? এরা মনে যা আসে তাই বলে। কোনো রাখঢাক না করে বাছ-বিচার না করে বলে ফেলা মানুষদের আমরা বলি পাগল বা উন্মাদ।
কারণ বিবেক সত্তা তাদের ভিতরে নেই,এরা নিজেদেরকে সমাজের সামনে অনেক জ্ঞানী বলে উপস্হাপন করেন। একটি কথা শেষের দিকে না বললেই নয়,আপনি, আমি, আমরা সবাই বলার অধিকার রাখি সব জায়গাতেই। আপনার বলার অধিকার কেউ ছিনিয়ে নেয়নি। বলা বা মতামতের ক্ষেত্রে আমাদের ইসলাম অনেক গুরত্ব দিয়েছে আপনাকে। সন্দেহের বিষয়গুলো আলেম মাওলানা বা মুফতিদের থেকে জেনে সন্দেহ দূর করুন।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০১৯ রাত ১:০০
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×