somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি চিঠি

২৮ শে মার্চ, ২০১১ রাত ২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৫ জুলিয়াটোলা স্ট্রিট
কলিকাতা
৮/৩/২৮
সন্ধ্যা

প্রিয় মতিহার,
পরশু বিকালে এসেছি কলকাতা। উপরের ঠিকানায় আছি। ওর আগেই আসবার কথা ছিলো, অসুখ বেড়ে ওঠায় আসতে পারেনি। দু চার দিন এখানেই আছি। মনটা কেবলই পালাই পালাই করছে। কোথায় যাই ঠিক করতে পারছিনে। হঠাৎ কোনোদিন এক জায়গায় চলে যাবো। অবশ্য দু দশ দিনের জন্য। যেখানেই যাই আর কেউ না পাক তুমি খবর পাবে।

বন্ধু,
তুমি আমার চোখের জলের মতিহার, বাদল রাতের বুকের বন্ধু। যেদিন এই নিষ্ঠুর পৃথিবীর আর সবাই আমায় ভুলে যাবে সেদিন অন্তত তোমার বুক বিঁধে উঠবে। তোমার ঐ ছোট্ট ঘরটিতে শুয়ে যে ঘরে তুমি আমায় প্রিয়ার মতো জড়িয়ে শুয়েছিলে অন্তত এইটুকু শান্তনা নিয়ে যেতে পারবো। এই কি কম সৌভাগ্য আমার ! কেন এ কথা বলছি শুনবে? বন্ধু আমি পেয়েছি, যার সাক্ষাত আমি নিজেই করতে পারবো না। এরা সবাই আমার হাসির বন্ধু, গানের বন্ধু, ফুলের সওদার খরিদ্দার এরা। এরা অনেকেই আমার আত্মীয় হয়ে উঠেছে, প্রিয় হয়ে উঠেনি কেউ। আমার জীবনের সবচেয়ে করুণ পাতাটির লেখা তোমার কাছে লিখে গেলাম।

আকাশের সবচেয়ে দূরের যে তারাটির দিপ্তি চোখের জলকণার মতো ঝিলমিল করবে, মনে করো সেই তারাটি আমি। আমার নামেই তার নামকরণ করো। কেমন? মৃত্যু এতো করে মনে করছি কেন জানো? ওকে আজ আমার সবচেয়ে সুন্দর মনে হচ্ছে বলে। মনে হচ্ছে, জীবনে যে আমায় ফিরিয়ে দিলে, মরলে সে আমায় বরণ করে নেবে।

সমস্ত বুকটা ব্যথায় দিনরাত টনটন করছে। মনে হচ্ছে সমস্ত বুকটা যেন ঐখানে এসে জমাট বেঁধে যাচ্ছে। ওর যদি মুক্তি হয়, বেঁচে যাবো। কিন্তু কি হবে কে জানে? তোমার চিঠি পেয়ে অবধি কেবল ভাবছি আর ভাবছি – কতো কথা, কতো কি, তার কি কূল-কিনারা আছে? ভাবছি আমার ব্যথার রক্তকে রঙ্গীন খেলা বলে উপহাস যে করেন তিনি হয়তো দেবতা। আমার ব্যথার অশ্রুর বহু উর্ধ্বে। কিন্তু আমি মাটির নজরুল হলেও সে দেবতার কাছে অশ্রুর অঞ্জলি আর নিয়ে যাবো না। ফুল ধুলায় ঝড়ে পড়ে, পায়ে পিষ্ট হয়, তাই বলে কি ফুল এতো অনাদরের? ভুল করে সে ফুল যদি কারুর কবরীতেই খসে পড়ে এবং তিনি যদি সেটাকে উপদ্রুব বলে মনে করেন, তাহলে ফুলের পক্ষে প্রায়শ্চিত্ত হচ্ছে এক্ষুণি কারুর পায়ের তলায় পড়ে আত্মহত্যা করা।

সুন্দরের অবহেলা আমি সইতে পারি না বন্ধু, তাই এতো জ্বালা। ভিক্ষে যদি কেউ তোমার কাছে চাইতেই আসে অদৃষ্টের বিরম্বনায়, তাহলে তাকে ভিক্ষা নাই দাও, কুকুর লেলিয়ে দিও না। আঘাত করবার একটা সীমা আছে। সেটাকে অতিক্রম করলে আঘাত অসুন্দর হয়ে আসে। আর তক্ষুণি তার নাম হয় অবমাননা।

ছেলেবেলা থেকে পথে পথে মানুষ আমি। যে স্নেহে যে প্রেমে বুক ভরে ওঠে কাঁনায় কাঁনায় তা কখনো কোথাও পাই নি আমি। এবার চিঠির উত্তর দিতে বড্ড দেরী হয়ে গেলো। না জানি কতো উদ্বিগ্ব হয়েছো। কি করি বন্ধু, শরীরটা এতো বেশী বেয়াড়া আর হয়নি কখনো। অষুধ খেতে প্রবৃত্তি হয়না।

আমায় সবচেয়ে অবাক করে নিশুতি রাতের তারা। তুমি হয়তো অবাক হবে, আমি আকাশের প্রায় সব তারাগুলোকে চিনি। তাদের সত্যিকারের নাম জানিনে। কিন্তু তাদের প্রত্যেকের নামকরণ করেছি আমার ইচ্ছেমতো। সেই কতোরকম মিষ্টি মিষ্টি নাম, শুনলে তুমি হাসবে। কোন তারা কোন ঋতূতে কোন দিকে উদয় হয় সব বলে দিতে পারি। জেলের ভেতর যখন সলিটারি সেলে বন্ধ ছিলাম তখন গরমে ঘুম হতো না। সারারাত জেগে কেবল তারার উদয়াস্ত দেখতাম। তাদের গতিপথে আমার চোখের জল বুলিয়ে দিয়ে বলতাম, বন্ধু, ওগো আমার নাম না জানা বন্ধু, আমার এই চোখের জলের পিচ্ছিল পথটি ধরে তুমি চলে যাও অস্তপারের পানে। আমি শুধু চুপটি করে দেখি। হাতে থাকতো হাতকড়া। দেয়ালের সঙ্গে বাধা চোখের জলের রেখা আঁকাই থাকতো মুখে, বুকে। আচ্ছা বন্ধু, ক’ফোটা রক্ত দিয়ে এক ফোঁটা চোখের জল হয় তোমাদের বিজ্ঞানে বলতে পারে? এখন শুধু কেবলই জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছে করে, যার উত্তর নেই, মিমাংসা নেই, সেইসব জিজ্ঞাসা।

যেদিন আমি ঐ দূরের তারার দেশে চলে যাবো, সেদিন তাকে বলো, এই চিঠি দেখিয়ে, সে যেন দু’ফোটা অশ্রুর দর্পন দেয় শুধু আমার নামে। হয়তো আমি সেদিন খুশীতে উল্কা ফুল হয়ে তার নোটন খোঁপায় ঝড়ে পড়বো। তাকে বলো বন্ধু, তার কাছে আমার আর চাওয়ার কিছুই নেই। আমি পেয়েছি, তাকে পেয়েছি, আমার বুকের রক্তে, চোখের জলে। আমি তার উদ্দেশ্যে আমার শান্ত স্নিগ্ধ অন্তরের পরিপূর্ণ চিত্তের একটি সশ্রদ্ধ নমস্কার রেখে গেলাম। আমি যেন শুনতে পাই, সে আমারে সর্বান্তকরণে ক্ষমা করেছে। ফুলের কাঁটা ভুলে গিয়ে তার উর্ধ্বে ফুলের কথাই যেন সে মনে রাখে।

ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। স্বপ্ন দেখে জেগে উঠে আবার লিখছি। কিন্তু আর লিখতে পারছি না ভাই। চোখের জল, কলমের কালি, দুই-ই শুকিয়ে গেলো। তোমরা কেমন আছো, জানিও। তার কিছু খবর দাও না কেন? না কি সেটুকুও মানা করেছে? ঠিক সময়মতো সে ওষুধ খায়তো? কেবলই কীটস্‌কে স্বপ্ন দেখছি, তার পাশে দাঁড়িয়ে ফেমিব্রাউন পাথরের মতো। ভালবাসা নাও।

ইতি,
তোমার নজরুল ।
---------------------------------------------------------------------------
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০১১ বিকাল ৫:১৭
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×