somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিপন্ন মানবিকতা : গাজাবাসী অসহায় মানুষেরা যাবে কোথায়?

১৭ ই জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
মসজিদ, হাসপাতালেও নির্বিচারে ইসরায়েলি বোমা, ৯ দিনে নিহত ২২০



গাজা ভূখণ্ডের উত্তর-পূর্ব এলাকাগুলোর আকাশ থেকে গতকাল বুধবার বৃষ্টির মতো লিফলেট ঝরিয়েছে ইসরায়েলি বিমান। তাতে লেখা, ‘বাঁচতে চাইলে এলাকা ছাড়ো’। এক লাখ গাজাবাসীর কাছে ফোন করে এবং খুদে বার্তা দিয়েও পৌঁছানো হয়েছে এলাকা ছাড়ার এই পরোয়ানা।

উত্তর গাজার জয়তুন এলাকায় বসবাসকারী ফয়সাল হাসানের লিফলেট হাতে প্রশ্ন, ‘ওরা (ইসরায়েল) বিমান থেকে কাগজ ছুড়ে লোকজনকে পালাতে বলছে। কোথায় যাব আমরা? বাড়ি ছেড়ে আমি কোথাও যাব না, যা-ই ঘটুক না কেন। আমার পাঁচ সন্তান। বাড়িতে খাবার নেই। বেতন পাই না। খোদার দয়ায় টিকে আছি।’

সূত্র : বিবিসি, এএফপি, দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস, দ্য টেলিগ্রাফ, রয়টার্স।
অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলের অপারেশন প্রটেক্টিভ এজের ৯ দিন পার হয়েছে। এর মধ্যে হাসপাতাল, মসজিদ থেকে শুরু করে জাতিসংঘের স্থাপনা- কোনো কিছুই ইসরায়েলি বিমান হামলা থেকে রক্ষা পায়নি। গত মঙ্গলবার রাতেও তারা একটি হাসপাতালে হামলা চালায়। এখন গাজায় নিরাপদ এলাকা বলতে কিছু নেই। গতকাল সন্ধ্যায় তিন দফা বিমান হামলা চালানো হয়েছে। ফলে গাজাবাসী নিজ বাড়িঘর ছেড়ে যেখানেই আশ্রয় নিক না কেন, কোলে তুলে নিতে হবে প্রাণহীন শিশুর দেহ অথবা কাঁধে উঠবে কিশোর ছেলের লাশ।
এরই মধ্যে ইসরায়েলের এই অভিযানে নিহতের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর হিসাব মতে, এর ৮০ শতাংশই বেসামরিক সাধারণ মানুষ, যার একটা বড় অংশই নারী ও শিশু। মূলত গাজা নিয়ন্ত্রণকারী ইসলামপন্থী সংগঠন হামাসের ইসরায়েলি ভূখণ্ডে রকেট ছোড়ার অভিযোগে এই অভিযান শুরু করে ইহুদি রাষ্ট্রটি। হামাসের রকেট হামলায় এখন পর্যন্ত এক ইসরায়েলি নিহত হয়েছে। অন্যদিকে গাজায় নিহতের সংখ্যা ২২০, আহত এক হাজার ৫৫০ ছাড়িয়েছে।
পূর্ব গাজার জয়তুন ও শেজাইয়ায় গতকাল লিফলেট ছড়িয়ে ফিলিস্তিনিদের এলাকা ছেড়ে পালাতে বলা হয়। পালানোর জন্য স্থানীয় সময় সকাল ৮টা পর্যন্ত বেঁধে দেয় ইসরায়েলি বাহিনী।

লিফলেটে বলা হয়, ‘যারা এই নির্দেশনা অগ্রাহ্য করে এলাকা ছেড়ে যাবে না তারা তাদের এবং তাদের পরিবারের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে।’ ইসরায়েলের সীমান্ত লাগোয়া এলাকা এগুলো। উত্তর গাজার বেইত লাহিয়ায় এর আগেও এমন লিফলেট ফেলে ইসরায়েল। সে দফায় আতঙ্কে ১৭ হাজার গাজাবাসী জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলগুলোতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। তবে এবার আর তেমন তৎপরতা গাজাবাসীর মধ্যে নেই। কারণ গাজার কোনো এলাকাই নিরাপদ নয়। জাতিসংঘ স্থাপনাগুলোতেও বোমা পড়ছে। ইতিমধ্যে জাতিসংঘ এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এ ছাড়া অভিযানের শুরু থেকেই ইসরায়েল মসজিদ বা হাসপাতালগুলোকেও রেহাই দেয়নি। মঙ্গলবার রাতে গাজার ৪০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায় ইসরায়েলি বিমান। এর মধ্যে একটি হাসপাতালও রয়েছে।

বোমা ফেলার পরপরই সেটি খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে হাসপাতালে অবস্থানকারী সব রোগী হয় কোমায় অথবা নড়াচড়ায় অক্ষম। চিকিৎসকরা হাসপাতাল খালি করার পথ না পেয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে ধরনা দিচ্ছেন ইসরায়েলি হামলা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। আল-ওয়াফা নামের ওই হাসপাতালের পরিচালক বাসমান আলাসি বলেন, ‘আমরা রোগীদের ফেলে যাব না। ওরা অক্ষম। এ ছাড়া গাজার কোথাও নিরাপত্তা নেই। হাসপাতালই যেখানে নিরাপদ নয়, সেখানে আর কোথায় নিরাপত্তা পাওয়া যাবে?’
ইসরায়েলি হামলায় গাজার পানি-বিদ্যুৎ ও পয়োনিষ্কাশন-ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে আগেই। জাতিসংঘের মতে, বাড়িঘর, স্থাপনা ধ্বংস করে এরই মধ্যে গাজার ‘অপরিমেয়’ ক্ষতিসাধন করেছে ইসরায়েল। গতকাল সকাল থেকে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয় ১১ জন। এর মধ্যে পাঁচ মাসের একটি শিশুও রয়েছে। সন্ধ্যায় তিন দফা বিমান হামলায় নিহত হয়েছে সাতজন।
এমন পরিস্থিতির মধ্যেই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হুমকি দিয়েছেন, সেনাবাহিনী গাজায় হামলার ‘আওতা ও তীব্রতা’ বাড়াবে।

এর আগে মিসর প্রস্তাবিত একটি অস্ত্রবিরতি প্রত্যাখ্যান করে হামাস। তাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই মিসর এ উদ্যোগ নিয়েছে এবং অস্ত্রবিরতি তাদের জন্য ‘আত্মহননের শামিল’ উল্লেখ করে রকেট হামলা অব্যাহত রাখে তারা। ফলে ছয় ঘণ্টা বিরতি দিয়ে আবারও বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। যেকোনো সময় শুরু হতে পারে স্থল অভিযান। মঙ্গলবার রাতে নিরাপত্তা-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। গাজা সীমান্তে সেনা ও ট্যাংকবহর সমবেত করে ইতিমধ্যে প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছে তারা।
এরই মধ্যে চলছে অস্ত্রবিরতির প্রচেষ্টা। এবারের উদ্যোগটিও মিসরের।

দেশটির প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি বিষয়টি নিয়ে নেতানিয়াহুর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। এই মধ্যস্থতায় জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত টনি ব্লেয়ারও ভূমিকা রাখছেন। এদিকে হামাসের এক কর্মকর্তা অস্ত্রবিরতির আলোচনায় যোগ দিতে কায়রোতে অবস্থান করছেন। মিসরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি। ফিলিস্তিনের ফাতাহ সংগঠনের জ্যেষ্ঠ নেতা আজম আল-আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসও অস্ত্রবিরতি-সংক্রান্ত আলোচনার প্রক্রিয়াকে জোরদার করতে মিসর ও তুরস্ক সফরে বের হয়েছেন।
হামাস-ইসরায়েলের এবারের সংকটের সূত্রপাত মাসখানেক আগে। ১২ জুন ইসরায়েলের তিন কিশোরকে অপহরণ করা হয়। পরে তাদের লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনার জন্য হামাসকে দায়ী করে ইসরায়েল। তবে হামাস গোড়া থেকেই এই অপহরণের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে। এর প্রতিশোধ নিতে ফিলিস্তিনের এক কিশোরকে পুড়িয়ে হত্যা করে কিছু কট্টরপন্থী ইহুদি। এই নৃশংস ঘটনার প্রতিবাদে ইসরায়েলে রকেট হামলা বাড়িয়ে দেয় হামাস। সর্বশেষ গত ৮ জুলাই এই রকেট হামলার অজুহাতেই গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নেতানিয়াহুও গনহত্যার দায়ে ঘৃণিত নায়ক হিসাবেই ইতিহাসে স্থান করে নিবে

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৩৮

গত উইকেন্ডে খোদ ইজরাইলে হাজার হাজার ইজরাইলি জনতা নেতানিয়াহুর সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।
দেখুন, https://www.youtube.com/shorts/HlFc6IxFeRA
ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে নেতানিয়াহুর এই হত্যাযজ্ঞ ইজরায়েলকে কতটা নিরাপদ করবে জনসাধারণ আজ সন্দিহান। বরং এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×