somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোন একদিন আমারা দুজনে (পর্ব ১ম + ২য় + সর্বশেষ খন্ড)

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ৮:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শশীকে নিয়ে আজ ঘুড়তে বের হবো। ও আমার বাসার সামনে থেকে একটু দূরে রিক্সা নিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। কী হলো তুমি এখন কোথায় ? বাসা থেকে আসতে এতো সময় লাগে । প্লিজ রাগ করো না এই তো এসে গেছি। আর মাত্র ১ মিনিট লাগবে। আমি এখনও বাসাতেই আছি গার্ল ফ্রেন্ড নিয়ে বের হবো একটু সাজগোজ না করলে কী চলে। আমি খুব নিঁখুদ ভাবে শেভিং করছি। আবার শশীর ফোন.... এই কী হলো ? এই তো জান এসে গেছি। আর একটু wait করো। দাড়াও আজ আসো তোমার সব চুল আমি ছিড়বো। মাথায় একটা চুল রাখবো না।

বাসা থেকে বের হতেই কে জানি পিছন থেকে ডাক দিলো সামি ভাই... সামি ভাই !!! আমি পিছনে ফিরতেই দেখি আমাদের ম্যাসের ছোট ভাই নোমান । সাইকেল নিয়ে দাড়িয়ে আছে। ভাই এতো নায়ক সেজে কোথায় জান ?। আমাকে শেকঘাট পয়েন্টে নিয়ে যাও যেতে যেতে বলছি। ইতিমধ্যে শশীর ১০-১২ মিসকল এসে হাজির । আসলে মিস কল বল্লে ভুল বলা হবে কল না ধরাতেই এই অবস্থা।

শেকঘাট পয়েন্টে নোমান আমাকে নামিয়ে দিতেই আমি ওকে বললাম ঠিক আছে রাতে মেসে এসে কথা হবে। নোমান সাইকেল নিয়ে ঐ জায়গা থেকে হাওয়া হয়ে যেতেই । আমি একটু সামনে তাকালাম। একটা রিক্সা নিয়ে শশী বসে আছে। রিক্সার হুক খোলা তাই দূর থেকেই ওকে দেখতে পেলাম। মুখে বিন্দু বিন্দু ঘামের ফোটা, গালগুলো রাগে লাল লাল হয়ে আছে। তারপরও ওকে অন্যান্য দিনে চেয়ে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে। আমি বললাম কোথায় যাবে। জাহান্নামে যাবো । তোমার আমার সাথে যেতে হবে না। আমি রিক্সার ড্রাইভারের দিকে হাসি হাসি ভঙ্গিতে তাকিয়ে বললাম ভাই জাহান্নামের ভাড়া কত ? রিক্সাওয়ালা মনে হচ্ছে আমাদের কথাবার্তায় মজা পাচ্ছে। একটু মধ্যবয়সী লোক বয়স দেখে মনে হচ্ছে ৩০-৩২ হবে। আগে উডেন ভাড়া যা তাই তো চামু বেশি চামু কেন। আমার ভাবভঙ্গিতে শশী মনে হচ্ছে আরো বেশি ক্ষিপ্র হয়ে গেছে। সে রাগান্বিত কন্ঠে বলল উঠল বসো ভাড়া জিজ্ঞাস করতে হবে না। । আমি বললাম তুমি জানো না রিক্সার ড্রাইভারা ইয়াং ছেলেদের সাথে কোন ইয়াং মেয়ে দেখলে প্রেমিক প্রেমিকা মনে ভাড়া বেশি দাবি করে। প্রেমিক বেচারাকে তখন পড়তে হয় বিপদে , বেশি ভাড়া দিতে হয়। তাই আগে ভাগে জিজ্ঞাস করে নেওয়াটাই better। তুমি কী করে জানো? তুমি কী এর আগে কাউকে নিয়ে এই রকম পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছ। যাক এতো দিন পড় তোমার রহস্য বের হলো । আমার আগেও তোমার রিলেশন ছিলো তাহলে। আমি কোন কথার উত্তর না দিয়ে রিক্সায় উঠে বসলাম । ড্রাইভারকে অসহায় ভঙ্গিতে বললাম ড্রাইভার ভাই জাহান্নামের দিকে রওনা হওয়া যাক রিক্সা টানেন। আর ভাড়া নিয়েন আপনার ইচ্ছে মতো । আমি আর কিছু বলল না । রিক্সা কিছুক্ষন চলার পর জিন্দাবাজার পয়েন্টে আসা মাত্র ড্রাইভার পেছনের দিকে তাকিয়ে বলল এখন কই যামু । হমমম ... আচ্ছা নাইওরপুলের দিকে যাও দেখি । ওখানে ভালো একটা রেস্টুরেন্ট আছে .. কী বলো শশী ... শশীর দিকে তাকালাম সে কোন উত্তর দিলো না। । রিক্সা নাইওরপুলের দিকে চলছে। আমি জড়োসরো হয়ে শশীর পাসে বসে আছি। শশী খুব ক্ষিপ্র ভঙ্গিতে আমার দিকে বার বার তাকেচ্ছে। কোন কথা বলছে না, কোন কথা জিজ্ঞাস করলে উত্তরও পাওয়া যাচ্ছে না।

আমরা এখন নাউওরপুল টুনাটুনি রেস্টুরেন্ট আছি। চমৎকার পরিবেশ । প্রেম করার জন্য খুব উপযুক্ত পরিবেশ । শশীকে বললাম চলো উপরে গিয়ে বসি খুব নিড়িবিল পরিবেশ আছে। তোমার ভালো লাগবে। এই কথা বলতেই সে মনে হলো আমার উপর আরো খেপে গেছে। চেয়ারের উপর তার বেনিটি ব্যাগটা টাস করে রাখল । চেয়ারে বসেই আমার দিকে তাকিয়ে বলল তোমার সাথে তো আজ এখানে আমার ফাস্ট আসা সো তুমি কী করে জানো রেস্টুরেন্টের উপরে নিড়িবিল পরিবেশ আছে। আরে মুসকিল সেটা জানার জন্য রেস্টুরেন্ট আসতে হবে নাকি বন্ধুদের কাছ থেকে শুনেছি। শশীর মনে ইতিমধ্যে আমাকে নিয়ে সন্দেহের বীজ বপন হয়ে গেছে। তাই যাই বলছি তাতেই সে অন্য রকম রিয়েক্ট করছে। excuse me স্যার ম্যানু বলে রেস্টুরেন্টের ওয়েটার শশীর দিকে ম্যানু কার্ড এগিয়ে দিলো । শশী ম্যানু হাতে নিয়ে ওয়েটারকে জিজ্ঞাস করল আচ্ছা ওর দিকে তাকিয়ে ভালো করে দেখেন তো ও কী এর আগে আপনাদের রেস্টুরেন্টে আসছিলো কী না। ওয়টারকে আমার দিকে খুব ভালো করে নজর দিয়ে দেখতে শুরু করল । তার ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে যে তাকে বিয়ের জন্য মেয়ে পছন্দ করতে বলা হয়েছে। সে খুব পড়ক করে মেয়ের খুটিনাটি দেখছে। আর মনে মনে ভাবছে বিয়ে করা যায় কীনা। অনেকক্ষন দেখবার পর সে বলল জি ম্যাডাম আসছে। কোন মেয়েকে নিয়ে আসছে ? ম্যাডাম সেটা ইয়াদ নাই। মনে করে দেখ তো .. শশী ওয়েটারের দিকে ১০০ টাকার একটা নোট বাড়িয়ে দিয়ে বলল এবার মনে আসতাছে? ওয়েটার খুব খুশি খুশি ভঙ্গিতে বলল ম্যাডম ইয়াদ আসতাছে না ... আমি ইয়াদ করতে চেষ্টা করি আপনারা বরং কিছু ওয়াডার দেন। আমি ওয়েটারকে বললাম আপনার ইয়াদ করার দরকার নাই। আপনি অন্য কাউকে দেখছেন হয়তো । মানুষের মতো মানুষ থাকতে পারে না। তাছাড়া আপনার ভুলও তো হতে পারে তাই না। আপনি বরং যান আপনাদের এখানে কী জানি Special Thai Soup আছে সেটা নিয়ে আসেন। ওয়েটার ঠিক আছে বলে চলে গেল। আমি শশীর দিকে তাকিয়ে বললাম শোন আমি তোমার আগে এখানে আর কাউকেই নিয়ে আসি নি। সো প্লিজ জান তুমি একটু ঠান্ডা হয়ে বসো । সুপটা খাও।
আজ কী হয়েছে। বুঝতে পাছনি না । যাই বলছি। শশী তাতেই রাগ করে বড় বড় চোখ করে আমার দিতে তাকাচ্ছে। ওদের স্যুপটা ভালো এই কথা শুনে আরো ক্ষিপ্র ভঙ্গিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। হটাৎ করে সে আমার হাত থেকে মোবাইল সেট টেনে নিযে গেল। কী হলো এমন করছো কেন মোবাইল দেও। কেন তোমার মোবইল কী আমি দেখতে পানি না। হ্যা পারো আগে Soup টা ঠান্ডা হয়ে খাও মিছি মিছি আমার উপর সন্দেহ করো না। তুমি খাও খেয়ে তোমার মাথা ঠান্ডা করো আমার মাথা ঠান্ডাই আছে।

শশী টুনাটুনির স্পেশাল Soup খাচ্ছে না। স্যুপের বাটি সামেন রেখে আমার Contact List Check করছে। আর ওয়েটার বেটা বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছে আর মাথা চুলকানো ভঙ্গিতে মনে হচ্ছে কী জানি ইয়াদ করাবার চেষ্টা করছে। মনে মনে ভাবছি। আজ আমার খবর আছে।


----------------------------------------------------------------------------------
প্রথম অংশের পর -----------------------------------------------------------------------------------------------------------

রেস্টুরেন্টে মৃদু মৃদু Sound এ একটা অদ্ভুত গান বাজতেছে গানের কথা কিছুটা এই রকম Lin Feng Ting Mu Chan-pipa,erhu,dizi গানের কথা বুঝবার সাধ্যি আমার নাই। তবে মনে হচ্ছে ইহা Japanish or chine ভাষার গান হবে হয়তো। তবে Music টা দারুন। বাঙলি রেস্টুরেন্টে এই গান কেন বাজতেছে তা বুঝা যাচ্ছে না। না পারছি গানের কথা বুঝতে ঐ দিকে না পারছি শশীর মনের অবস্থা কেমন তা বুঝতে। এক পর্যায়ে শশীর আমার দিকে তাকানোর ভঙ্গিতে একটু পরিবর্তন দেখতে পেলাম । সে মনে হচ্ছে এখন আরো বেশি রাগান্বিত হয়ে উঠেছে এবং আমাকে কষে একটা থাপ্পরও দিয়ে বসতে পারে বলে আমার ধারনা। সে আমার মোবাইল সেটটা আমার চোখের সামেনে ধরে একটা মেয়ের ছবি দেখিয়ে প্রশ্ন করে বলল এই মেয়ে কে? তার ছবি তোমার মোবাইল এ কেন? ছি! ছি !! মেয়েরদের ছবি নিয়ে ঘুরে বেড়ানো হচ্ছে। তুমি কোন কথা বলছ না কেন । আসলে তুমি বলবেই কী তোমার তো বলার কোন ভাষা নাই। শশী শোন তুমি যা ভাবছ ব্যাপারটা আসলে তা না। তাহলে বলল এই মেয়ে কে ? সে আমার বন্ধুর গার্ল ফ্রেন্ড । তোমার বন্ধুর গার্ল ফ্রেন্ডের ছবি তোমার মোবাইলে কেন থাকবে?। আমার সাথে মিথ্যে কথা বলা হচ্ছে। মিথ্যা না এটাই সত্যা আমি ব্যাখ্যা করছি, আমার বন্ধুর মোবাইলের Skin এ প্রবলেম হয়েছে। কোন কিছু দেখা যায় না। Skin পুরো কালো হয়ে আছে। এই দিকে তার আবার রাতে নাকি টুম্পা মানে তার গার্ল ফেন্ডের ছবি না দেখালে রাতে ঘুম হয় না। সে তাই খুব কায়দা করে না দেখে দেখে কী করে যেন bluetooth এর মাধ্যমে ছবিটা আমার মোবইলে সেন্ড করছে। সাইদুর আমার সাথে ম্যাসে এক রুমেই থাকে। এখন সে রাতে আমার মোবাইল থেকে টুম্পার ছবি দেখে। তুমি যদি বিশ্বাস না করে থাকো তাহলে আমার বন্ধু সাইদুরকে ফোন দিয়ে ওর সাথে কথা বলতে পারো । ওকে এখানে আসতে বলল । যা খুশি কর । শশী এই কথা বলে ওয়াস রুমের দিকে চলে গেল। আমি মনে মনে ভাবছি। ও ফিরে আসতে আসতে একটা কিছু করতে হবে। সাইদুরকে ফোন দিয়ে ব্যাপারটা সেট করতে হবে। ওয়েটার বেটার ব্যাপারটা পরে দেখা যাবে। আমি সাইদুর কে ফোনকরে এখানে আসতে বললাম । আমাদের কথা বার্তার এক পর্যায়ে শশী ফিরে এলো । সে টিস্যু পেপার দিয়ে ভিজে মুখ মুছতে মুছতে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমি ফোন রাখলাম। শশীর চেহারা দেখে মনে হচ্ছে সে একটু আগে কেধেছে । তার এই কান্নাই প্রমান করে দিচ্ছে আমার প্রতি তার ভালাবাসার গভীরতা। শশী শোন তোমার সাথে আমার রিলেশন কত দিন যাবৎ। মিনিমাম ৮-৯ মাস তো হবেই । তুমি আমাকে চিনো না আমি কী রকম। শশী আমার কোন কথার উত্তর দিলো না। সে অন্য দিকে মুখ করে স্থির হয়ে তাকিয়ে আছে। আসলে আমিও শশীকে অনেক বেশি ভালবাসি । তাকে কষ্ট দেওয়ার কোন ইচ্ছেই আমার নেই। তবে আজ যা হচ্ছে তাতে যে আমার কোন দোষ নেই সেই কথাও আমি বলল না। আমার দোষ আছে। তবে তা করারও আমার একটা বিশেষ উদ্দেশ্য ছিলো । ঐ কাজ না করলে হয়তো শশী আমার উপর আজ এতো রাগ করতো না, আবার এমন হতে পারতো যে শশীর সাথে আমার রিলেশনও কোন দিন সম্ভব ছিলো না।

আমি এখন নিড়ব ভঙ্গিতে শশীর দিকে তাকিয়ে আছি। আর মনে মনে ভাবছি আমি তোমাকে পৃথিবীর সবকিছুর বিনিময়ে হলেও হারাতে চাই না। তুমি জানো না আসলেই আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। শশীর সাথে আমার রিলেশণটাও খুব পবিত্র বলে আমার ধারনা । পবিত্র কথাটা এই অর্থে বললাম কারন এখনকার অনেক ছেলে মেয়েরাই রিলেশনে আসলে তারা কী না করে গার্ল ফ্রেন্ডেকে নিয়ে পার্কে বসে গার্লফ্রেন্ডের কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকে আর গার্লফেন্ড বাদার ছুলে মুখে তুলে খাওয়ায়, হাত ধরে বসে থাকে, আরো অনের কিছুই করে ....(লিখতে ইচ্ছে করছে না )শশীর সাথে এই ৯ মাস রিলেশনে আমি এমন কোন কিছুই করি নাই । সর্বোচ্চ আমি তার হাত একদিন ধরেছিলাম।

রেস্টুরেন্টের দরজায় হটাৎ করে সাইদুরকে ঢুকতে দেখলাম। ....


----------------------------------------------------------------------------------
দ্বিতীয় অংশের পর -----------------------------------------------------------------------------------------------------------

সাইদুর রেস্টুরেন্টে ডুকেই আমার মোবাইলে একটা কল দিলো। ডোস্ত কই তোরা ? এই তো আছি। আমি তোরে দেখতে পাচ্ছি তুই সোজা বামদিকে ৫ নং টেবিলের দিকে তাকা। দেখসত ? হুম । বলে সাইদুর কল কেটে দিলো। সাইদুরকে খুব হাসিহাসি মুখে আমাদের টেবিলের দিকে এগিয়ে আসেতে দেখছি। সে এমন একটা ভাব নিয়ে এসেছে, যে আজ সে এখানে একটা বড় ধরনের Magic দেখাবে। Magic দেখে শশী আমার প্রতি আবারও স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কে জানে ও কী করে। কোন ভেজাল করলে তো পুরা ধরা।
ডোস্ত স্যারী আসতে একটু দেরী হয়ে গেল। তা তোরা এখানে কেন বসে আছত । উপরে গিয়ে বসতে পারতি । কত সুন্দর নিড়িবিল পারিবেশ আছে। নিড়িবিল কথাটা বলার সাথে সাথে সাইদুর শশীর দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে বড় করে একটা সালাম দিলো আসসালামু আলাইকুম .. ভালো আছেন? হুম ভালো, আপনি ভালো আছেন? আমি সব সময়ই ভালো থাকি। খারাপ থাকতে পারি না। আমার কাছে মাঝে মাধ্যে মনে হয় খারাপ থাকাই খুব কঠিন। সাইদুর অনড়গল ফাউল বিষয় নিয়ে শশীর সাথে বকবক করেই চলছে। শশীর হটাৎ করে সাইদুর কে বলল ভাইয়া দেখেন তো এই মেযেকে আপনি চিনেন কী না ? হ্যা চিনবো না কেন । ও কী আপনার গালফ্রেন্ড হয় ? হ্যাঁ । আপনি এর জন্য সামীর উপর ক্ষেপে আছেন? হ্যা ক্ষেপবো না বলেন আপনার গার্লফ্রেন্ডের ছবি ওর মোবাইলে দেখেই তো খুব কষ্ট পেয়েছি। তা অবশ্য ঠিক কষ্ট পাওয়াটাই স্বাভাবিক। এখন কষ্ট কমছে। শশী কোন রকম কথা বলল না। সাইদুর এর কথায় মনে হয় শশীর অবিশ্বাস করাটা এখনো কাটেনি । না কটাটাই স্বাভাবিক । শশী হয়তো মনে মনে ভাবছে আমি সাইদুরকে সব কিছু শিখিয়ে পড়িয়ে এখানে আসতে বলেছি। আমি সাইদুরের দিকে চোখ টিপ দিয়ে শশীকে আবারও সান্তনা দেওয়ার জন্য ইঙ্গিত করলাম। সাইদুর বলল আপনি মনে হচ্ছে আমার কথা এক বিন্দুও বিশ্বাস করলেন না। ঠিক আছে এখনি প্রমান হয়ে যাবে বলেই সাইদুর কাকে যেন কল করছে। হ্যালো তুমি নাইওরপুল টুনাটুনিতে একটু চোলো আসো । আসার পর তোমাকে সব বুজিয়ে বলছি।এই কথা বলে কল কেটে দিলো । শশী বলল কাকে এখানে আবার আসতে বলেছেণ। টুম্পাকে। ও আসুক আসলেই সব পানির মতো সহজ হয়ে যাবে। Anyway তা আপনার পড়াশোন কেমন চলচে ? হুম ভালো । আপনি জানি কোথায় আছেন? অনার্স First Year MC college আপনি তো আসলেই খুব সুন্দরী সামী যা বলছে তার চেয়েও বেশি। দোস্ত টুম্পাকে আসতে বলছি ভালো করছি না? ও আসলেই তো সব ঠিক কী বলস ??? আমি কিছু বললাম না। মনে মনে ভাবছি। টুম্পাকে কী সাইদুর আগে ফোন করে কিছু বলে দিয়েছে। তা যদি করেও থাকে টুম্পা কী এসে শশীকে বলবে যে সে সাইদুরেরর গার্ল ফেন্ড। এক সময় তো টুম্পার সাথে আমারই রিলেশন ছিলো এই কথা সাইদুরও ভালো করে জানে। আমার মনে হয় ও কিছু একটা বলে ম্যানেজ করেছে। না হলে ও টুম্পাকে এখানে আসতে বলত না । যদি তাই হয় তাহলে তো খুব ভালো। আমি এই কথা চিন্তা করে একটু স্বস্তি বোধ করছি।

৩০-৪৫ মিনিট পর টুম্পা এসে হাজির । টুম্পা শশীকে সব কিছু বুঝিয়ে বলল। যে সে আমার না সে সাইদরেরই গার্লফ্রেন্ড ।


শশী এখন স্বাভবিক । আমার প্রতি তার রাগ যে কিছুটা কমেছে তা বুঝতে পারিছি তার মাখে হাসি দেখে। শশীর হাসি খুব সুন্দর ও যখন হাসে তখন তর গালে খুব সুন্দর একটা টোল পড়ে। ওর বা গালের একটা ছোট্ট তিল আছে। হাসেলে ওই তিলটার কারেনে শশীকে আরো অপূর্ব লাগে। স্যারী আমি তোমাক মিসি মিসি সন্দেহ করেছি। প্লিজ আমাকে মাফ করে দেও। আমি বললাম তুমি সন্দেহ করাটাই স্বাভাবিক ছিলো। তা ছাড়া তুমি সন্দ্যেহ করার মতোই তো অবস্থা তৈরী হয়েছে। বরং আমি তোমার কাছে। স্যারী ।


সাইদুরঃ আরো রাখ তো কেই কারো কাছে স্যারী হতে হবে না। কিছু ওর্ঢার দে ডোস্ত । কতো কষ্ট করে আসলোম ভালো কছু খাওয়া। ওয়েট খাওয়ার আগে শশীকে একটা গান শুনাইয়ে নেই, এই বলেই সাইদুর গান শরু করল।
"কালায় প্রানটি নিলো বাঁশিটি বাজাইয়া
ও কালায় প্রানটি নিলো বাঁশিটি বাজাইয়া
আমারে যে কইরা গেল উদাসী বানাইয়া

কালায় প্রানটি নিলো বাঁশিটি বাজাইয়া
ও কালায় প্রানটি নিলো বাঁশিটি বাজাইয়া
আমারে যে কইরা গেল উদাসী বানাইয়া "

সাইদুরে এই রকম অদ্ভুদ সুরের গান শুনে শশীকে মুচকী হাসতে দেখছি। ও টেবিলে হাত দিয়ে ডোলের মতো করে বাজাচ্ছে আর গানটা গাচ্ছে।

ঠিক এমন সময় রেস্টুরেন্টের ঐ ওয়েটার চলে আসল। স্যার প্লিজ শব্দ করবেন না। বাকীদের সমস্যা হচ্ছে। এই কথা বলেই সে সাইদুরের দিকে তাকিয়ে অবাক ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে যে সে পৃথীবর সপ্তম আচআর্য় Grand Canyon দেখে ফেলেছে। সে শশীর দিকে তাকিয়ে বলল ম্যাডাম এখন আমার সব মনে পড়েছে। এই লোকও ওনার সাথে রেস্টুরেন্টে আসছিলো । আমার এখন সব পরিষ্কার মনে পড়ছে। এবং তাদের ২ জনের সাথে ২ টা মেয়েও ছিলো । এই কথা বলে সে টুম্পার দিয়ে তাকিয়ে বলল এই তো এই সে মেয়ে । তবে আরেক ১ জনও ছিলো ম্যাডাম। স্যার আপনাদের আর কিছু লাগবে। সাইদুর আর আমি দুজনেই এক সাথে বলে উঠলাম ১ গ্লাস পানি দেন।


"কালায় প্রানটি নিলো বাঁশিটি বাজাইয়া
ও কালায় প্রানটি নিলো বাঁশিটি বাজাইয়া
আমারে যে কইরা গেল উদাসী বানাইয়া

কালায় প্রানটি নিলো বাঁশিটি বাজাইয়া
ও কালায় প্রানটি নিলো বাঁশিটি বাজাইয়া
আমারে যে কইরা গেল উদাসী বানাইয়া "

শশীর চোখে একবিন্দু অশ্রু টলমল করছে। সে আমাদের কারো সাথে আর কোন কথা না বলে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে চলে যাচ্ছে। আমি তাকে আটকানোর চেষ্টা করি কিন্তু সে আমার দিকে আর দ্বিতীবারের মতো ফিরেও তাকালো না।


ঐদিনের রেস্টুরেন্টের ঐ ঘটনার পর শশী তার সাথে যোগাযোগের সব পথ বন্ধ করে দেয়। তার সাথে আমার টানা তিনমাস কোন দেখা হয়নি ।



আমি অত্যন্ত বোকা টাইপের একটা ছেলে এটা মানছি। তা না হলে বন্ধুর বুদ্ধিতে এমন একটা কাজ করতে পারতাম না। নিজের বিচার বুদ্ধি দিয়ে আগে ব্যাপারটা বিশ্লেষন কররার চেষ্টা আমার মধ্যে থাকতো । একদিন পয়েলা বৈশাখের একটা মেলাতে আমি প্রথম শশীকে দেখি। কিন্তু কোন মেয়ের সাথে কথা বলার মতো সাহস তখন আমার ছিলো না। মেয়েদেরে সামেন গিয়ে কথা বলা তো দূরের কথা তাদের সামনে দাড়ালে আমার হাটু কাঁপতো। তাই প্রথম দেখাতে যাকে এই মন প্রান দিয়ে বসছি নিজের জীবনের চেয়েও যাকে ভালবাসতে শুরু করছি। তাকে কিছু বলতে পারলাম না। যে আমি তোমাকে ভালবাসি। পরে একদিন জানতে পারলাম সে এম সি কলেজের স্টুডেন্ট।

সাইদুর আমাকে তার সাথে পরিচিত হয়ার অনেক বুদ্ধি দিয়েছিলো। সব বুদ্ধি যখন বিফলে গেল তখন সে আমাকে অন্য মেয়েদের সাথে ফোনে কথা বলে নিজেকে প্রস্তুত করে নিতে বলল। টুম্পার Mobile No তার কাছ থেকেই আমার পাওয়া । সাইদুরের বুদ্ধির আসলেই তারিফ করতে হচ্ছে। আমি শশীকে নিজের করার মতো শক্তি ঠিকিই আমার মধ্যে চলে আসলো। কিন্তু আজ বুঝতে পারছে যে তার সাথে ঐভাবে রিলেশন করা ছিলো আমার জীবনের সবচেয়ে বড় বোকামী । যে শক্তি দিয়ে আমি শশীকে ক্ষনিকের জন্য নিজের করতে পেরেছিলাম আজ সেই শক্তির কারনেই আজ সে আমার থেকে অনেক দূরে । নষ্ট সুখের ভেলা আজ আমার ডুবে গেসে গহীন জলে। মাঝে মাঝে মনে মনে চিন্তা করি
এখন তুমি নেই
এখন আমি আছি
এখন তোমার স্পন্দন পাই
আমার কাছাকাছি


দীর্ঘ ৫ মাস পর একদিন Blue Water Shopping Mall এর সামনে সন্ধ্যার দিকে শশীর সাথে আমার আবার দেখা হলো।
দুজনে আবারও মুখোমুখি

দুজনে মুখোমুখি
গভীর দুখে দুখি
আধারে ডাকিয়া গিয়াছে আর সব ।

শশী আগের চেয়ে একটু শুকিয়ে গেছে , গায়ের রং আগের চেয়ে একটু ময়লা হয়ে গেছে। তার সাথে একটা মেয়েকে দেখতে পেলাম। শশী আমাকে দেখে কোন কিছু বলল না। কিছুক্ষন আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিলো। আমি ঐ দিন হয়তো বললতে পারতাম যে শশী তোমাকে আমি আসলেই অনেক ভালবাসি। আর যা করেছি শুধু তোমাকে পাওয়ার জন্যই । কিন্তু সেই সাহস কিংবা শক্তি দুটোর কোনটাই আর আমার মধ্যে ছিলো না। আমি চাইনা কেউ আমার কারনে আর কষ্ট পাক। কবি কাজী নজরুলের মতো আমারও মাঝে মাঝে বলতে ইচ্ছে করে যে আমি পেয়েছি তাকে পেয়েছি আমার বুকের রক্তে আর চোখের জলে।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজামী, মুজাহিদ, বেগম জিয়াও বিজয় দিবস পালন করেছিলো!!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০



মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম জিয়ার মুরগী মগজে এই যুদ্ধ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না; বেগম জিয়া বিশ্বাস করতো না যে, বাংগালীরা পাকীদের মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার থেকে

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×