somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অ-তে অহিংসক অঙ্গুলিমাল ও অজগর নয়, অং সান সু চি আসছে তেড়ে

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বুদ্ধের সমকালীন কোশল জনপদের রাজধানী শ্রাবস্তীর রাজা ছিলেন প্রসেনজিৎ। তার রাজপুরোহিতের নাম ছিল ব্রাহ্মণ ভার্গব। চৌর-নক্ষত্রে ভার্গবের সন্তানের জন্ম হয়। ভার্গব গণনা করে জানতে পারলেন তার সন্তান বড় হলে মানুষ হত্যা করবে। তাই সন্তানকে হত্যা করতে চাইলেন। কিন্তু কোশলরাজ প্রসেনজিৎ নবজাতক শিশুর জীবন রক্ষা করেন।

কোশলরাজ ভার্গবকে বলেন, যখন বিপদ আসবে তখন দেখা যাবে। তার পূর্বে ছেলেকে বিদ্যা শিক্ষা দিয়ে বড় করা হোক। সম্ভাব্য দোষমুক্তি কামনা করে তখন নবজাতকের নাম রাখা হল অহিংসক। আশাকরা হয়, এই নামের গুণে সন্তান কারও প্রতি হিংসা করবে না ও মানুষ হত্যা থেকে কোশল জনপদবাসী রক্ষা পাবে।

পড়াশোনায় মেধাবী অহিংসকের স্বাভাবিক আচার-আচরণে গণকদের ভবিষ্যতবাণী সবাই ভুলে যেতে থাকে। শাস্ত্রবিদ্যায় পারদর্শী করতে তাকে তক্ষশীলায় পাঠানো হয়। সেখানে মেধাবী অহিংসক, বন্ধুদের হিংসার জ্বালে পড়েন। তার বিরুদ্ধে গুরুমাতার সাথে অনৈতিক সম্পর্কের কুৎসা রটনা শুরু করে। ঘটনাক্রমে আচার্য গুরু অহিংসককে আশ্রম থেকে বের করে দেন। অহিংসক গুরুর কাছে অনেক আকুতির করেন আশ্রমে থাকার। তখন গুরু একটি শর্ত দেন। শর্তটা হচ্ছে- এক হাজার মানুষের ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে গুরুদক্ষিণা দিতে হবে! অহিংসক বলে উঠলেন- গুরুদেব মানুষ হত্যা, এ তো মহা পাপ। আপনি আর অন্য যে কোন দক্ষিণার কথা বলুন! মনুষ্য হত্যা আমার দ্বারা সম্ভব নয়। আমাকে ক্ষমা করুন।

অহিংসকের এমন কথা শুনে আচার্য বললেন- হ্যাঁ, এটা যে পাপ তা আমি মানি, কিন্তু গুরুর আদেশ অমান্য করা এটা কি পাপ নয়? যদি আমাকে সত্যিকারের গুরু দক্ষিণা দিতে চাও, তাহলে ঐ এক হাজার বৃদ্ধাঙ্গুলি আমাকে উপহার দাও। যদি আমাকে ঐ এক হাজার আঙ্গুলি এনে দাও তাহলে বিদ্যা-শিক্ষার বাকিটুকু শিক্ষাদান করবো। যাও এ মূহুর্তে এখান হতে বের হয়ে আমাকে গুরুদক্ষিণা দাও।

আশ্রম থেকে বেরিয়ে পড়েন অহিংসক। কষ্ট ও অপমানের আগুনে পুড়ে পুড়ে গুরুদক্ষিণা দেয়ার জন্য মানুষ হত্যা শুরু করেন। আঙ্গুল কেটে মালা তৈরি করতে থাকেন। আর অহিংসক থেকে হয়ে যান অঙ্গুলিমাল (আঙ্গুল কাটার জন্য নাম হয় অঙ্গুলিমাল)।

রাজা প্রসেনজিৎ অঙ্গুলিমালকে ধরার জন্য বাহিনী প্রস্তুত করেন। জীবিত অথবা মৃত যে অবস্থাতেই হোক অঙ্গুলিমালকে আনার জন্য বলেন। কিন্তু অঙ্গুলিমালের কাজের মাত্রা কমে না। এভাবে যখন ৯৯৯ টি আঙ্গুল সংগ্রহ করেন। ঘটনাক্রমে অঙ্গুলিমাল তার মায়ের আঙ্গুল কেটে ১০০০ টি পুরো করার জন্য প্রস্তুত হন। সেই সময় সেথায় ঋদ্ধি শক্তি প্রয়োগ করে ভগবান বুদ্ধ উপস্থিত হন। তখন মাকে ছেড়ে বুদ্ধকে হত্যার উদ্দেশ্যে তেড়ে যান।

অঙ্গুলিমালকে আসতে দেখে ভগবান বুদ্ধ তাঁর এমন ঋদ্ধি প্রয়োগ করলেন যাতে করে, অঙ্গুলিমাল দৌড়ালেও ভগবান বুদ্ধকে ধরতে না পারে। অঙ্গুলিমাল তার সমস্ত বল প্রয়োগ করেও বুদ্ধের কাছে পৌঁছাতে পারছিল না। শেষে ক্লান্ত হয়ে নুইয়ে পড়ে এবং ভাবতে থাকে-এ কেমন মানুষ, কে এই শ্রমণ, আমি ধাবমান হরিণকে তৎক্ষনাৎ ধরতে পারি, অথচ এই শ্রমণকে কেন ধরতে পারছি না!

প্রাণী হত্যার কারণ সম্পর্কে অবগত হয়ে উৎসুক হয়ে বলে উঠে-হে শ্রমণ, আপনি কে?

বুদ্ধ-আমি তথাগত গৌতম বুদ্ধ।

বুদ্ধের মুখে বুদ্ধ শব্দ উচ্চারিত হতেই খড়গ ফেলে দিয়ে বুদ্ধের পায়ে লুটিয়ে পড়ে মাথা নত করে আর্তনাদ করতে থাকেন এবং বলতে থাকেন-ভগবান আমাকে রক্ষা করতে আপনার এখানে আগমন। আমাকে রক্ষা করুন। তখন বুদ্ধ এস ভিক্ষু বলতেই পূর্বজন্মের কর্মের প্রভাবে ঋদ্ধিবলে পাত্র-চীবর দিয়ে অঙ্গুলিমালের উপসম্পদা সম্পন্ন হয়। এরপর অঙ্গুলিমাল চীবর ধারন করে বুদ্ধের অনুগামী হন। উভয়ে শ্রাবস্তী ফিরে আসেন। ভগবান বুদ্ধ একে একে সব বিনয় কর্ম অঙ্গুলিমালকে অবহিত করেন। বুদ্ধের নির্দেশে ধ্যান-সমাধি ও বিনয় ধর্মে ব্রত হয়ে খুব অল্পদিনের মধ্যে অরহত্ব-ফল লাভ করেন।

অহিংসক থেকে অঙ্গুলিমাল, বুদ্ধের শিক্ষায় আবার অহিংসক হলেন। আজকের অং সান সু চি কে কি কেউ বুদ্ধের শিক্ষা মনে করিয়ে দিবে না? অন্যথায়, বাচ্চারাও হয়তো বলবে অ-তে অজগর নয় অং সান সু চি আসছে তেড়ে। অ-তে অং সান সু চি’র মাথায় সু-চিন্তার উদয় হোক। জগতে সকল প্রাণির মঙ্গল হোক।

সূত্রঃ জয়মঙ্গল অষ্টগাথা (অঙ্গুলিমাল দমন কাহিনী অবলম্বনে)।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪১
৬টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×